এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : সরকারি বেতন স্কেলের নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) পদে নিয়োগে সব ধরনের কোটা তুলে দেয়ার প্রস্তাব উঠছে মন্ত্রিসভায়। আজ (বুধবার) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে অনুষ্ঠেয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে ‘কাস্টমস আইন, স্বর্ণ নীতিমালা এবং জাতীয় পরিবেশ নীতি-২০১৮ এর খসড়া অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
কোটা পর্যালোচনা কমিটি সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ‘কোটা সংস্কার সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি শুধু মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এখন মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। সুপারিশের ওপর মন্ত্রিসভার সদস্যরা আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।’
পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘প্রজাতন্ত্রের চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম গ্রেডের (প্রথম শ্রেণী) ও ১০ম-১৩তম গ্রেড (দ্বিতীয় শ্রেণী) পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে।
এসব গ্রেডে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা যেতে পারে। কোটা বাতিলের ফলে বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থায় সুবিধাভোগী জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে প্রতিফলিতব্য প্রভাব নির্দিষ্ট সময় অন্তর পর্যালোচনা করে প্রাপ্ত পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে।’
কোটা পর্যালোচনা কমিটি সূত্র জানায়, তারা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ভুটানের সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংগ্রহ ও পর্যালোচনা করে দেখেছেন। তবে ভারত, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি মিলছে না।
কারণ ওই দেশ দুটিতে বিভিন্ন প্রদেশ রয়েছে। একেক প্রদেশে একেক ধরনের পদ্ধতি বিদ্যমান। তাদেরও কিছু কোটা আছে সংখ্যালঘু শ্রেণীর জন্য তবে তা খুবই নগণ্য। বাংলাদেশে ওই ধরনের কোনো মাইনরিটি শ্রেণী বা প্রদেশ নেই। দেশে ক্ষুদ্র কিছু নৃগোষ্ঠী থাকলেও তা ওইসব দেশের মতো নয়।
এছাড়া শ্রীলংকা ও ভারতের তামিলনাডু রাজ্যসহ বেশ কিছু প্রদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৪০ বছর। এসব তথ্য-উপাত্তের পাশাপাশি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এযাবৎ প্রশাসন সংস্কারে যেসব কমিশন ও কমিটি গঠন করা হয়েছিল তা সব প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছে সচিব কমিটি।
প্রতিটি কমিশন ও কমিটিই কোটা থেকে সরে এসে পর্যায়ক্রমে মেধাকে প্রাধান্য দিয়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছিল।
সূত্র আরও জানায়, সচিব কমিটির সিদ্ধান্ত অনুসারে প্রশাসন সংস্কারে মোজাফফর আহমদ চৌধুরী কমিশন, ১৯৭৭ সালে সাবেক সচিব আবদুর রশিদের নেতৃত্বে গঠিত কমিশন, ১৯৯৪ সালে চারজন সচিবের নেতৃত্বে গঠিত প্রশাসন পর্যালোচনা কমিটির রিপোর্ট, ১৯৯৬ সালে জনপ্রশাসন সংস্কারে গঠিত কমিশনের রিপোর্ট এবং সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. আকবর আলি খানের নেতৃত্বাধীন কমিশনের রিপোর্টের সুপারিশ আমলে নেয়া হয়েছে।
এছাড়া সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময় নিয়োগে কিভাবে কোটা সংরক্ষণ করেছে, তাও বিবেচনা করেছে সংস্কার কমিটি। এছাড়া দেশে বিভিন্ন সময় কোটা নিয়ে প্রকাশিত সংবাদপত্রের কপিও সংগ্রহ করা হয়েছে।
এছাড়া রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামতও নেয়া হয়েছে। এসব বিষয় বিশ্লেষণ করে কোটা তুলে দেয়ার সুপারিশ করেছে পর্যালোচনা কমিটি।
বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে।
এই ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধীদের নিয়োগের বিধান রয়েছে।
কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ ও গ্রেফতারদের মুক্তি দাবি : কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন প্রকাশ, আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত গ্রেফতার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মুক্তি এবং তাদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এতে সংহতি প্রকাশ করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল শিক্ষকরা।
মানববন্ধনে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী শিক্ষক অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী শিক্ষক সামিনা লুৎফা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক নাসির উদ্দিন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেন, নুরুল হক নূর, মশিউর রহমান প্রমুখ।
অধ্যাপক রুশাদ ফরিদী বলেন, কোটা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেনি। তারা কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করেছে। কিন্তু এখন কোটা বাতিল করে শিক্ষার্থীদের ওপর দায় চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এটা গণমাধ্যমেও স্পষ্ট হওয়া দরকার।
এদিকে যেসব শিক্ষক নিপীড়িত শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের দৃশ্য আমরা স্বৈরাচারী সরকারের আমলেও দেখিনি। কিন্তু যে সরকার মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, সে সরকারের আমলে তা আমরা দেখতে পাচ্ছি।
আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, ছাত্রসমাজের পাঁচ দফা দাবির আলোকে দ্রুত প্রজ্ঞাপন চাই। যারা আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের বিচার চাই।
ফারুক হোসেন বলেন, আন্দোলনের কারণে গ্রেফতার শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের মুক্তি দিতে হবে। পাঁচ দফা দাবির আলোকে কোটা সংস্কার করতে হবে। আমরা শুধু প্রথম শ্রেণী এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর জন্য আন্দোলন করিনি। আমরা সব বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি।
মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের স্মারকলিপি : এদিকে ৩০ ভাগ কোটা বহাল রাখাসহ ৬ দফা দাবিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড। মঙ্গলবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে এক সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন তারা।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবু জাফর মো. সালেহ, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ক ম জামাল উদ্দিন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন।
দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তিকারীদের বিচার, কোটা সংস্কার কমিটির সুপারিশ বাতিল, বিসিএসসহ সব চাকরির পরীক্ষায় প্রিলিমিনারি থেকে ৩০ শতাংশ কোটা বাস্তবায়ন, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সুরক্ষা আইন ও তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, স্বাধীনতাবিরোধীদের নাগরিকত্ব বাতিল, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত এবং সব সরকারি চাকরি থেকে বহিষ্কার।