এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : মধ্য অক্টোবরে গঠিত হতে পারে নির্বাচনকালীন সরকার। ১৭ বা ১৮ই অক্টোবর সম্ভাব্য তারিখ ধরে প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বঙ্গভবনে। বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, সহসাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাতের পরই নির্বাচনকালীন সরকারের শপথের সিডিউল চূড়ান্ত করা হবে। সূত্র : মানবজমিন।
প্রেসিডেন্টের দৈনন্দিন কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৮, ৯ ও ১০ই অক্টোবর প্রেসিডেন্ট সরকারি সফরে কিশোরগঞ্জ যাচ্ছেন। এরপর ১৪ই ও ১৫ই অক্টোবর নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত প্রেসিডেন্টের কাছে পরিচয়পত্র পেশ করবেন। দেশের এসব কর্মব্যস্ততা ছাড়াও ওয়ার্ল্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরামের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ২২শে অক্টোবর সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে যাবেন প্রেসিডেন্ট। ফেরার কথা রয়েছে ২৬শে অক্টোবর। অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা গত মাসে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। এই সরকারে বাইরের কেউ আসবে না। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছি, টেকনোক্রেট কেউ আসবে না, আকারটা ছোট হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রাথমিক পরিকল্পনা তৈরি করেছে সরকারের নীতি নির্ধারকরা। এবার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই মন্ত্রিসভার সদস্য ২৫-এ রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। ২০১৩ সালের ২১শে নভেম্বর যে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা হয়েছিল, তাতে মন্ত্রিসভার সদস্যসংখ্যা ছিল ২৯ সদস্যের। এর বাইরে ছিলেন ১০ জন উপদেষ্টা। সব মিলিয়ে সরকারে ছিলেন ৩৯ জন। ৩৯ সদস্যের সেই সরকারে আওয়ামী লীগের দুই সিনিয়র নেতা আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে অন্তর্ভুক্ত করে চমক দেখানো হয়েছিল। একই সঙ্গে বাদ পড়েছিলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু ও খাদ্যমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকসহ ৩০ জন। ওই সময় মন্ত্রিসভার সব সদস্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। পুরনো কয়েকজনকে রেখে এবং নতুন যোগ করে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়। এবারও একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হতে পারে। এদিকে নিজেদের নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় থাকা না থাকার হিসাব মেলাতে খোঁজখবর রাখছেন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা। অনেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী শেষ সময়ে এসে গুছিয়ে নেয়ার কাজও শুরু করেছেন।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ছাড়া অন্য কোনো মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী সরকারে থাকা নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করতে পারেননি। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি আছি মনে হয় ইন্টেরিম সরকার পর্যন্ত। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, নির্বাচনকালীন সরকার পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় থাকতে পারেন এমন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর তালিকায় রয়েছেন- অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের একাংশের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টি (জেপি) প্রেসিডেন্ট ও পানি সম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন, শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক, বিমানমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেক, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং কারিগরী ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের প্রতিমন্ত্রী কাজী কেরামত আলী। এছাড়া তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিকেও মন্ত্রিসভায় নতুন মুখ হিসেবে দেখা যেতে পারে। জাতীয় পার্টি (এরশাদ)-এর চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় তার দলের নতুন তিন মুখকে দেখতে চান। এজন্য গত ৯ই সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিরোধী দল জাপার চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে অনির্ধারিত বৈঠক করেন।
জাপা সূত্রে জানা গেছে, ওই বৈঠকে এরশাদ নতুন করে তার দলের তিনজনকে নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভায় রাখার অনুরোধ করেন। তবে প্রধানমন্ত্রী এরশাদকে জানিয়ে দেন যে সংসদে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ। তার সঙ্গে আলোচনার পরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রওশন এরশাদ নিজেও নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রী হিসেবে থাকতে চান। গত শনিবার (নিউ ইয়র্ক সময় শুক্রবার) এক সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিরোধীদলীয় নেত্রীর (রওশন এরশাদ) সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছি। তারা যদি চান, আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।
তিনি বলেন, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব রাজনৈতিক দল যদি চায়, তাহলে আমরা তাদের প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠন করতে পারি। তারা ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল কি না, সেটা কোনো বিষয় না। তবে নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে এখানে কোনো সংজ্ঞা নেই।