এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ঘরে-বাইরে-মাঠে-ময়দানে আলোচনার পর এবার জোটবদ্ধ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে সরকারবিরোধী কয়েকটি রাজনৈতিক দল। একাদশ নির্বাচন সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার দাবিতে আগামী সপ্তাহে এক টেবিলে বসছেন যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়া ও বিএনপির নেতারা। ওই বৈঠক থেকে দাবি আদায়ে যৌথ কর্মসূচি নির্ধারণ করার ব্যাপারে জোর আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতারা। তারা জানিয়েছেন, কর্মসূচি জোটবদ্ধ হবে নাকি যুগপৎ সে বিষয়েও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হবে ওই বৈঠকে।
ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যে এখন পর্যন্ত দুটি সমস্যা আছে। এসব সমস্যা আলোচনার মধ্য দিয়ে দূর করা সম্ভব বলে মনে করেন নেতারা। তারা জানান, যুক্তফ্রন্ট চায় বিএনপির সঙ্গে ঐক্য বাস্তবায়ন করার আগে আগামী নির্বাচনে প্রার্থিতা, সরকার গঠন নিয়ে উপযুক্ত ভারসাম্য সৃষ্টির লক্ষ্যে লিখিত ঐকমত্য। এই ভারসাম্যের বিষয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর সমাবেশে বিএনপি তাদের অবস্থান প্রকাশ করলেও বিষয়টিকে আরও গুরুত্ব দিতে চায় যুক্তফ্রন্ট।
যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সূত্রগুলো বলছে, ড. কামাল হোসেন বিদেশে থাকায় আলোচনা শুরু হতে সময় লাগছে। তিনি আগামী শনি বা রবিবার দেশে ফিরতে পারেন। তিনি দেশে ফেরার পর যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বৈঠক করে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার রূপরেখা চূড়ান্ত করবে।
যুক্তফ্রন্টের একজন অন্যতম নেতা জানান, ‘বিএনপির কাছ থেকে বোঝার দরকার আছে তারা ভারসাম্য বলতে কী বোঝাতে চায়। তারা কী বলতে চায়, সেটা আমরা নিরূপণ করতে চাই। এটা পরিষ্কার হয়ে গেলেই ঐক্য কার্যকর হবে।’
এ যুক্তফ্রন্টের অন্যতম নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘আমরা ক্ষমতার ভারসাম্য চাই। আগামী দিনে বাংলাদেশের ক্ষমতায় এক স্বৈরাচার গিয়ে আরেক স্বৈরাচার যেন না আসে, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ যেন নির্মাণ করতে পারি, এই লক্ষ্যে পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়ার আলোচনা শুরু করেছি।’ গত ২ অক্টোবর যুক্তফ্রন্টের পক্ষে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য দায়িত্ব পেয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপি সমাবেশ থেকে দলটির দাবি ও লক্ষ্য ঘোষণা করেছে। প্রায় প্রত্যেকটি দাবি ও লক্ষ্যের সঙ্গে যুক্তফ্রন্টের দাবি ও লক্ষ্যের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে মিল রয়েছে। ৩ নম্বর লক্ষ্যে বিএনপির বক্তব্য, ‘রাষ্ট্র ক্ষমতায় গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা।’ এ বিষয়টি আরও বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার লক্ষ্যে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশে স্বেচ্ছাচারী শাসন ব্যবস্থা থেকে পরিত্রাণ এবং একব্যক্তিকেন্দ্রিক নির্বাহী ক্ষমতা অবসানের লক্ষ্যে সংসদে, সরকারে, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নসহ প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ।’
ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত দায়িত্বশীল নেতারা জানান, ইতোমধ্যে বিএনপির ৭ দফা ও যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার ৫ দফা প্রায় এক। এক্ষেত্রে আগামীতে নির্বাচনে বিজয়ী হতে নিজেদের লক্ষ্যগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরার চিন্তা করা হচ্ছে। এজন্য প্রথম দিকে সারাদেশে সমাবেশের মাধ্যমে মানুষের সামনে নিজেদের দাবি-দাওয়া ও প্রতিশ্রুতির পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে সারোদেশে ‘গায়েবি’ মামলা দায়ের হচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন সূত্রে যুক্তফ্রন্টের নেতাদের কাছেও খবর আছে, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত নেতাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। প্রথম সারির কয়েকজন নেতা বাদে বাকি নেতাদের অতীতের কার্যক্রম, মামলা আছে কী না, রাজনৈতিক সূত্র ইত্যাদি খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। নেতারা জানান, জোটবদ্ধভাবে প্রথমদিকে ‘গায়েবি’ মামলা প্রত্যাহারের দাবি ও রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে সরকারের উদ্দেশে বার্তা দিতে সমাবেশ করার চিন্তা-ভাবনা আছে তাদের।
বিএনপি ও যুক্তফ্রন্ট সূত্রের ভাষ্য, কর্মসূচির ধরণ নির্ধারণ নিয়ে দুটি চিন্তা এখন ঘুরপাক খাচ্ছে ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত নেতাদের আলোচনায়। বিএনপির মধ্যে একটি অংশ যুগপৎ কর্মসূচি চাইলেও বড় অংশটি চায় যৌথ কর্মসূচি প্রণয়নের। যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারাও চাইছেন যৌথ কর্মসূচি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কোনও-কোনও প্রভাবশালী শরিক দলের প্রত্যাশা, বিএনপি জোটকে নিয়ে যুগপৎভাবে এগিয়ে যাক। এক্ষেত্রে এসব শরিক দল আলাদা আইডেন্টিটি সৃষ্টি করতে পারবে রাজনীতিতে।
ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা জানান, দাবি ও লক্ষ্যে প্রায় মিল থাকলেও ৩০ সেপ্টেম্বরের সমাবেশে বিএনপির ৩ নেতার বক্তব্যে ঐক্যে আগ্রহী দলগুলো রুষ্ট হয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বক্তব্যে ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত দলগুলো আশাহত হয়। অবশ্য দলীয় নেতাকর্মীদের মানসিকভাবে চাঙ্গা করতে বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার দলগুলোকে ‘খাটো’ করায় এই তিননেতার ওপর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ নীতিনির্ধারকরা অসন্তুষ্ট হয়েছেন বলেও জানিয়েছে দলটির একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র।
বিএনপির কূটনৈতিক উইংয়ে কাজ করেন এমন একজন সিনিয়র নেতা জানান, ৩০ সেপ্টেম্বর বিএনপির সমাবেশে দেশের মানুষের পাশাপাশি বিদেশি বন্ধুরাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোরও নজর ছিল। তাদের পর্যবেক্ষণেও তিনজন নেতার বক্তব্য উঠে আসে। যদিও বিএনপির তরফে বলা হয়েছে, তাদের তিনজনের বক্তব্য নিছক ভক্ত-সমর্থকদের চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যেই দেওয়া হয়েছে। বিএনপির হাইকমান্ড বৃহত্তর ঐক্যে বিশ্বাসী এবং এই প্রক্রিয়াকে একটি কার্যকর জায়গায় নিয়ে যেতে তাদের সদিচ্ছার ও চেষ্টার কোনও ত্রুটি নেই।
জাতীয়তাবাদী ঘরানার বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দুই তিনজন নেতার তাল গাছ-আম গাছ বক্তব্যে কিছু আসে যায় না। বিএনপির সবচেয়ে বড় ইতিবাচক দিক হচ্ছে, তারা এখন আলোচনা করতে চায়। তারা আলোচনা করে কাজ করছে। আগে দলটি এমন ছিল না। এটাই তাদের সবচেয়ে বড় সাফল্যের দিক। তারা ঐক্য এগিয়ে নিতে, কার্যকর করতে অনেক ইতিবাচক।’
ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা জানান, বিএনপির ৩ (বুধবার) ও ৪ অক্টোবর (বৃহস্পতিবার) কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়টিও প্রশ্ন তৈরি করেছে। ইতোমধ্যে কর্মসূচির ক্ষেত্রে যৌথভাবে ঘোষণা দেওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি এককভাবেই ঘোষণা দিয়েছে। ‘বিষয়টি এমনই ছিল’ জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘আমাদের কথা এমনই ছিল। কিন্তু যেহেতু সমাবেশ থেকে নতুন কিছু ঘোষণা করার একটা রাজনৈতিক কৌশল থাকে, সে কারণেই আমরা দুটি প্রাথমিক কর্মসূচি দিয়েছি। পরবর্তী কর্মসূচি আলোচনার মাধ্যমে নির্ধারণ হবে।’
স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বৃহস্পতিবার রাতে জানান, ‘বিএনপি জাতীয় ঐক্যের কার্যকরিতা তৈরি করতে পুরোপুরি প্রস্তুত। ঐক্য প্রক্রিয়া কিভাবে পরিচালিত হবে, কোনও কাঠামো থাকবে কী না, কর্মসূচি যুগপৎ নাকি যৌথভাবে সম্পন্ন হবে-এসব বিষয়ে আলোচনা হবে যুক্তফ্রন্ট-জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে। নাকি একমঞ্চের ঐক্যে না গিয়ে সবাই শুধু সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলবে আর ভেতরে-ভেতরে নির্বাচনি ঐক্য হবে-এটাও ঠিক হবে। বৃহস্পতিবার রাতে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা এসব বিষয়ে টুকটাক আলোচনা করেছেন। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।’
Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
Trending
- রফিকুল টাওয়ার হ্যামলেটসের পাবলিক গভর্নর হিসেবে পুনঃনির্বাচিত
- দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টার প্রতিবাদে লন্ডনে ইআরআইয়ের মানববন্ধন
- আইসিটি মন্ত্রণালয়ের বিসিসি এবং এটুআইসহ দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রকাশ করে পদত্যাগের আল্টিমেটাম দিল শিক্ষার্থীরা
- করিডোর চুক্তি বাতিলের দাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ইআরআইয়ের বিক্ষোভ সমাবেশ
- ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করতে প্রয়োজন দেশপ্রেমিকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই : ফাইট ফর রাইট ইন্টারন্যাশনাল
- লন্ডনে রাইটস অফ দ্যা পিপলস এর ভারতীয় হাইকিমশন ঘেরাও কর্মসূচি
- লণ্ডনে জিবিএএইচআর এর ইন্ডিয়ান হাইকমিশন ঘেরাও ও বিক্ষোভ সমাবেশ
- বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গণমানুষকে সোচ্চার হতে হবে