এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিন স্তরের কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিচ্ছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) এ সংক্রান্ত কমিটি। আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, উপ-সচিব ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৭৫ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। ইসি’র ‘নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার, পুনর্বিন্যাস ও দক্ষতা উন্নয়ন কমিটি’ এ সুপারিশ করেছে। এ ছাড়া ৫১৭টি নবসৃষ্ট পদে লোকবল নিয়োগের পরিকল্পনাও করছে কমিশন। তাদের উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তার দায়িত্ব দেয়া হবে। এর আগে ২০০৫ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলে ৩২৩ কর্মকর্তার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন ইসি ওই নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগকৃতদের পরীক্ষা নেয়। এতে অনেকেই বাদ পড়ে।
জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার ঠিক এক মাস আগে এমন নিয়োগ নতুনভাবে বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এমন ঘটনা অস্বাভাবিক। এই নিয়োগে হয় টাকার খেলা, এই নিয়োগে হয় দলীয়করণ। এখন যে পরিস্থিতি এত লোক যদি দলীয় লোক নিয়োগ দেয়া হয় তবে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আশা তো আরো সুদূরপরাহত হয়ে যাবে। এসব কোনোভাবেই কাম্য নয়। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার গতকাল নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন সবারই পদোন্নতি হচ্ছে। আমি দেখতে পাই পত্রিকায়, জনপ্রশাসনে পদোন্নতি হচ্ছে, পুলিশে পদোন্নতি হচ্ছে, কিংবা তারা পদোন্নতি চাচ্ছেন। তো নির্বাচন কমিশনেও পদোন্নতির একটা ঢেউ লেগেছে। মাহবুব তালুকদার জানান, কমিশনে বেশকিছু নতুন পদ সৃষ্টি হতে যাচ্ছে। জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রায় ২ হাজার জনবল বেড়ে যাচ্ছে। কমিশনের বর্তমান জনবল ৩ হাজার। তবে তারা সবাই অফিসার না। এর মধ্যে উপজেলা সহকারী নির্বাচন কর্মকর্তা পদে ৫১৭ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে।
এই কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হলে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা আরো বেড়ে যাবে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেন, ৭৫ জন কর্মকর্তার পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। এই তালিকা কমিশনে যাবে। কমিশন সভা অনুমোদন দিলে তারা পদোন্নতি পাবে। পদোন্নতির তালিকায় থাকা দশজন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার মধ্যে নয়জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে। তারা সবাই ৪র্থ গ্রেড অনুসারে বেতন-ভাতা ও সুবিধা পাবেন। উপসচিব পদে ৫ম গ্রেডে ২৯ জন এবং সিনিয়র সহকারী সচিব পদে ৬ষ্ঠ গ্রেডে ৩৭ জনকে পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
এই নির্বাচন কমিশনার আরো জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই তাদের পাওয়া যাবে। এরা একটা শক্তিশালী জনবল হিসেবে ভূমিকা পালন করবে বলে আমি আশা করি। তাদের পিএসসি’র মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হবে কিনা তা ঠিক জানি না। সেটা সময় আসলে দেখা যাবে কতটুকু কি করা যায়। তাদের পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিতে হবে, তাদের কার্যপরিধি কি হবে? আগামী নির্বাচনে ইসি’র নিজস্ব কর্মকর্তাদের মধ্যে কতজন বা কী সংখ্যক রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হবে সে বিষয়ে কমিশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানান তিনি। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিতর্কিত নিয়োগ পাওয়া অনেক কর্মকর্তাকে পরবর্তীতে বাদ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের আগে এমন নিয়োগ বিতর্ক সৃষ্টি করবে কিনা- জানতে চাইলে মাহবুব তালুকদার বলেন, যাদের পরীক্ষা নিয়ে বাদ দেয়া হয়েছে তাদের বাদ দেয়া হয়েছে। এইটা অনেক আগের ব্যাপার। পুরনো ইতিহাসের কথা বলতে পারবো না। আমরা আপাতত পদোন্নতি দিচ্ছি।
নিয়োগের ব্যাপারটা পরে আসবে। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের সভাপতিত্বে গত বুধবার ‘নিয়োগ, পদোন্নতি, প্রশাসনিক সংস্কার ও পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা উন্নয়ন কমিটি’ এর সভা হয়। বৃহস্পতিবার সভার সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে সাংবাদিকদের জানান মাহবুব তালুকদার। উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৫ সালে চারদলীয় জোট সরকারের আমলে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে ৩২৭ জন থানা/উপজেলা নির্বাচন অফিসার নিয়োগ দেয়া হয়।
বিতর্কিত ওই নিয়োগের পর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ৩০৩ জন কর্মকর্তার পরীক্ষা গ্রহণ করে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন। ওই পরীক্ষায় ৮৫ জন কর্মকর্তা অকৃতকার্য হওয়ায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে ২০০৯ সালে প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে তারা চাকরি ফিরে পায়। ২০১০ সালে পুনরায় চাকরিতে যোগদান করে ওই কর্মকর্তারা।