এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনকালীন সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের উদ্দেশে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, সংবিধান অনুসারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ থাকবে।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ‘ইইউ-বাংলাদেশ ফোর্থ বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ’ শেষে ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য দেন সংলাপে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্বদানকারী বাণিজ্যমন্ত্রী। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি তিরিংকের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ম্যারি অ্যান্নিক বার্দিন, জার্মানির ডেপুটি হেড অব ডব্লিউজিকেভি মাইকেল, নেদারল্যান্ডসের অ্যাম্বাসেডর ডেজিগনেট হ্যারি ভারউইজড, স্পেনের রাষ্ট্রদূত অ্যালভারো ডি সালাস গ্লেমেঞ্জ ডি এজক্যারেট, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উইনি অ্যাস্ট্রাপ পেটারসেন, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত কারলট্টা স্ক্যালিটার এবং ব্রিটিশ ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার খানবার হোসেইন বর। এছাড়া ইইউভুক্ত দেশগুলোর বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন মিশনের বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আর বাংলাদেশ পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব শুভাশীষ বসু, এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী আমিনুল হকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা। সংলাপ শেষে ব্রিফিংয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংলাপে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আলোচনার বাইরে বাংলাদেশে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টিও প্রসঙ্গক্রমে উঠে আসে। এ সময় কোন প্রক্রিয়ায় আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে তা আমরা প্রতিনিধি দলকে জানিয়েছি। পাশাপাশি আমি আমার বক্তব্যে বাংলাদেশের পুরো অর্থনীতিকে তুলে ধরেছি। বলেছি, বাংলাদেশ ২০২৪ সালে এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হবে এবং ২০২৭ সাল পর্যন্ত এলডিসির বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত থাকবে। এরপর বাংলাদেশকে জিএসপি প্লাস নামে বাণিজ্য সুবিধা প্রদানের জন্য অনুরোধ করেছি। তাদের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের স্পেশাল ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগ করারও আহ্বান জানিয়েছি। তারা এ দেশে বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বিনিয়োগে আগ্রহের কথা আমাদের বলেছেন। তবে বাণিজ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিদ্যমান কিছু প্রতিবন্ধকতার কথা তারা তুলে ধরেছেন। আমরা তা সমাধানে আশ্বস্ত করেছি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে জানিয়েছি, এটা নির্বাচনের বছর। নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। এই নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সরকার পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। এই সরকারের আকার বড় নাকি ছোট হবে তা প্রধানমন্ত্রী ঠিক করবেন। তবে নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই মেসেজটি আমরা ইইউকে দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আরও বলেছি, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। কারণ আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রীও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলেছেন। তাই সব দলের অংশগ্রহণেই একাদশ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে এভ্রিথিংস বাট আর্মসের আওতায় জিএসপি সুবিধা দিচ্ছে। বাংলাদেশ এ জন্য ইউরোপিয়ন ইউনিয়নের কাছে কৃতজ্ঞ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার। মোট রফতানির প্রায় ৫২ শতাংশ ইউরোপীয় ইউনিয়নে হয়ে থাকে। বর্তমানে সেখানে মোট রফতানি হচ্ছে ২১.৩৩ বিলিয়ন ডলার এবং বাংলাদেশ আমদানি করছে ৩.৫ বিলিয়ন ডলার। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত স্থান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ১০০টি স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। বেশকিছু জোনের উন্নয়ন কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশে বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের বিষয়ে আগ্রহী। এ সম্পর্ক উন্নয়নে আমরাও প্রতি ৬ মাস অন্তর তাদের সঙ্গে সংলাপে বসতে আগ্রহ দেখিয়েছি।
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য সুবিধা বৃদ্ধি এবং সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধোনের জন্য কাস্টমস, ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্যাক্স, ফাইন্যান্সিয়াল ফ্লোস এবং বিনিয়োগ বিষয়ক ৫টি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেড অব ডেলিগেশন এবং ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি তিরিংকে সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বাড়বে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘এভ্রিথিংস বাট আর্মস’-এর আওতায় বাংলাদেশকে বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে। এটা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বাংলাদেশে পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূর করা দরকার। আশা করি, পরবর্তী বিজনেস ক্লাইমেট ডায়ালগ আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হবে।