এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আবারো টানাপড়েন শুরু হয়েছে কওমি মাদরাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামে। সংগঠনটির আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর সাম্প্রতিক একটি বক্তব্যকে ঘিরে এ টানাপড়েন সামনে এলেও রাজনৈতিক মেরূকরণ নিয়ে সংগঠনটিতে অস্থিরতা চলছে বেশ কিছু দিন ধরে। হেফাজত সংশ্লিষ্টরা বলছেন কওমি মাদরাসাভিত্তিক দল ও সংগঠনের অনেকে হেফাজতের সঙ্গে আছেন। তাদের কেউ কেউ রাজনৈতিক দল থেকে সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছেন। নেতাদের কেউ কেউ আগামী নির্বাচনে দল জোটের হয়ে প্রার্থী হওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও আলোচনা আছে। এ অবস্থায় অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে হেফাজতের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সংগঠনের ভেতরেই।
হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ইসলামী ঐক্যজোট থেকে পদত্যাগের পর নতুন করে আলোচনায় এসেছে কওমিভিত্তিক আলেমদের মেরুকরণের বিষয়টি। বুধবার রাতে তার পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছে তার পরিবার।
গতকাল পদত্যাগের একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেখানে তিনি ইসলামী ঐক্যজোট থেকে পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, তিনি শুধু ইসলামী ঐক্যজোট নয়, হেফাজতের সিনিয়র নায়েবে আমিরের পদ থেকেও পদত্যাগ করছেন। যদিও হেফাজত থেকে পদত্যাগের ব্যাপারে পরিবার ও সংগঠনের কেউ আনুষ্ঠানিকভাবে মন্তব্য করতে রাজি হননি।
সম্প্রতি দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সংবর্ধনা এবং ‘আওয়ামী লীগ হয়ে গেলেও আমার কোনো আপত্তি নেই’ হেফাজতের আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মন্তব্যে এবং হেফাজতের শফীর পরিবারের একচেটিয়া দাপটের কারণে এ টানাপড়েন শুরু হয়েছে। আহমেদ শফীর সাম্প্রতিক বক্তব্যের পর হেফাজতে মধ্যে থাকা বিভিন্ন ইসলামী দলগুলোর নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে অনেকেই এ ব্যাপারে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে রাজি না হলেও তারা জানান, হেফাজত ১৩ দফা দাবি আদায়ে সম্পন্ন অরাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। এখন অনেকেই রাজনৈতিক দলের তোষামোদি শুরু করেছে। কেউ কেউ হেফাজতের নাম বিক্রি করে এমপি হওয়ার খায়েশ প্রকাশ করেছেন। কেউ নির্বাচন করার জন্য মাঠে নেমেছেন। অনেকেই গোপনে আওয়ামী লীগের সমর্থন নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
হেফাজত সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছেন ইসলামী ঐক্যজোট। এ দলের ভাইস চেয়ারম্যান ও মুফতি আমিনীর ছেলে আবুল হাসনাত আমিনী ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরে জনসংযোগ করে নির্বাচন করার ব্যাপারে ইচ্ছে পোষণ করেছেন। এটি জানার পর গত বুধবার রাতে ইসলামী ঐক্যজোটের বৈঠকে এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী। ইসলামী ঐক্যজোটের কয়েকজন নেতা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগে যোগদানের যে গুঞ্জন চলছে তারও ব্যাখ্যা চান তিনি। একপর্যায়ে বৈঠকে বাকবিতাণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন নেতারা। সেখানে থেকে বের হয়ে আসেন বাবুনগরী। মুফতি মাহমুদ হাসান, মুফতি মীর হুসাইনসহ কয়েকজন আলেমের পরামর্শক্রমে তিনি পদত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন বাবুনগরী। এ প্রেক্ষিতে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করতে চাইলেও পরে নায়েবে মুহতামিম ও শিক্ষাপরিচালকের পরামর্শক্রমে সংবাদ সম্মেলন থেকে বিরত রাখা হয়। পরিবারের অনুরোধে সংবাদ মাধ্যমে বিবৃতি পাঠানোর ব্যাপারে সম্মত হন তিনি।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে বুধবারের বৈঠক থেকে বের হয়ে তিনি বলেন, মুফতি আমিনী ধর্মনিরপেক্ষবাদ বিরোধী, তার নীতি আর্দশকে ভালোবেসে আমি মুফতি আমিনীর জোটে যোগ দিয়েছিলাম। আমি শেষ বয়সে মোটা অঙ্কের লোভে ঐতিহাসিক আদর্শ বিনষ্ট করে দিতে পারবো না। এ বিষয়গুলো তিনি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানাতে চাইলেও পরে দলের নায়েবে মুহতামিম ও শিক্ষা পরিচালকের পরামর্শক্রমে সংবাদ সম্মেলন থেকে বিরত থাকেন। এ ব্যাপারে মুহ্বিুল্লাহ বাবুনগরীর মেয়ের জামাই ও হেফাজত ইসলামীর চট্টগ্রম উত্তর জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মীর মো. ইদ্রিস মানবজমিনকে বলেন, তিনি ইসলামী ঐক্যজোটে আর নেই এটা জানানোর দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে হেফাজত যদি ইসলামী ঐক্যজোটের মতো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখে তবে সেখান থেকেও তিনি পদত্যাগ করবেন বলে জানিয়েছেন। এর বেশি আমি কিছু জানি না।
পদত্যাগের ব্যাপারে ইসলামী ঐক্যাজোট কিছুই জানেন না বলে জানান ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মুফতি ফয়জুল্লাহ। তিনি বলেন, ওনার পদত্যাগের ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভার দৌলতপুরে অবস্থিত বিখ্যাত দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া আজিজুল উলুম বাবুনগর মাদরাসার মুহতামিম মুহ্বিুল্লাহ বাবুনগরী দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী ঐক্যজোটের সিনিয়র নায়েবে আমীরের পদে ছিলেন। পদত্যাগপত্রে তিনি বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগের এজেন্টদের সঙ্গে নেই।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, আর্থিক কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় হেফাজতের আমীর আহমেদ শফীর ছেলে আনাসের সঙ্গে মতবিরোধ চলছিল মহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর। হেফাজতে আনাসের একচেটিয়া প্রভাব নিয়ে একাধিবার প্রতিবাদ করেছেন তিনি।