এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সম্পদশালীদের কাছে কর ফাঁকি দিয়ে গোপনে অর্থ রাখার জন্য সুইস ব্যাংক অত্যন্ত জনপ্রিয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ফুরিয়ে এসেছে এ ব্যাংকে সম্পদ রেখে তথ্য গোপনের দিন। সুইজারল্যান্ডে অবসান হল ব্যাংক হিসাবধারীদের তথ্য গোপন রাখার সুযোগ।
বিশ্বের অফশোর ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে বড় কেন্দ্র সুইস ব্যাংকে অর্থ জমা রাখলে এখন থেকে সে তথ্যের গোপনীয়তার নিশ্চয়তা থাকছে না। সুইজারল্যান্ড সেপ্টেম্বর মাস থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও এর বাইরের কয়েকটি দেশকে হিসাবধারীর তথ্য জানানো শুরু করেছে।
এসব তথ্যের মধ্যে নাম-পরিচয়-ঠিকানা তো রয়েছেই, সেই সঙ্গে রয়েছে জমা থাকা অর্থের পরিমাণও। তবে তথ্যের গোপনীয়তা ও ডাটা সিকিউরিটি নিশ্চিতের শর্ত পূরণ করতে না পারলে সংশ্লিষ্ট দেশের তথ্য চেয়ে করা আবেদনে সাড়া দিচ্ছে না সুইজারল্যান্ড।
সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল ট্যাক্স অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফটিএ) শুক্রবার জানায়, কর ফাঁকি রোধে আন্তর্জাতিকভাবে নেয়া উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকতে প্রথমবারের মতো তারা হিসাবধারীদের তথ্য চেয়ে করা আবেদনে সাড়া দিয়েছে। উচ্চ আয়ের যেসব ইউরোপীয় নাগরিক কর ফাঁকি দেয়ার জন্য অফশোর ব্যাংকিংয়ের সহায়তা নিত, তাদের তথ্য আর সে দেশের সরকারের কাছে গোপন রাখছে না সুইজারল্যান্ড।
প্রাথমিকভাবে যে দেশগুলোর নাগরিকদের তথ্য সুইজারল্যান্ড শেয়ার করেছে সেগুলোর মধ্যে ইইউভুক্ত দেশ ছাড়াও রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, আইসল্যান্ড, ইজেল অব ম্যান, জাপান, নরওয়ে ও দক্ষিণ কোরিয়া। সামনের বছরে বিশ্বের ৮০টি দেশ এই তালিকায় যুক্ত হবে।
এফটিএ বলছে, ‘সাইপ্রাস ও রোমানিয়াকে এখন পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা হয়েছে। কারণ তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা ও ডাটা সিকিউরিটি নিশ্চিতের শর্ত তারা পূরণ করতে পারেনি।’ প্রায় সাত হাজার ব্যাংক, ট্রাস্ট, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সুইস ব্যাংকের হিসাবধারীদের তথ্য পেতে রেজিস্ট্রেশন করেছে।
তাদের চাওয়া তথ্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২০ লাখ হিসাবধারীর তথ্য সরবরাহ করেছে সুইজারল্যান্ড। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছে হিসাবধারীর নাম, ঠিকানা, দেশ, করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর, হিসাবে থাকা অর্থের পরিমাণ ইত্যাদি, যা থেকে দেশগুলোর কর বিভাগ পরীক্ষা করে দেখতে পারবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সুইস ব্যাংকে অর্থ রেখে কর ফাঁকি দিচ্ছেন কিনা।
যেসব দেশ এ প্রক্রিয়ায় যুক্ত হতে চায় তাদের তথ্যের গোপনীয়তা ও ডাটা সিকিউরিটি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে হবে। দেশগুলো এসব শর্ত পূরণ করতে পারছে কিনা তা তদারকি করবে ‘অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের’ (ওইসিডি) ‘ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অব ইনফরমেশন ফর ট্যাক্স পারপাসেস’ ফোরাম।
তবে সুইস নাগরিকদের ক্ষেত্রে এখনও সুইস ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গোপনীয়তার সুবিধা রয়েছে। সুইজারল্যান্ড কর্তৃপক্ষ তাদের নাগরিকদের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চাইলেই দেখতে পারেন না।
আন্তর্জাতিক নানামুখী চাপের মুখে কয়েক বছর ধরে সুইস ব্যাংকে গোপনে অর্থ রাখার ব্যবস্থা দুর্বল হচ্ছে। সারা বিশ্বের ধনীদের জন্য সম্পদ লুকানোর ক্ষেত্রে সহজে এ ব্যাংক ব্যবহারের সুযোগ কমে আসছে। হংকং ও সিঙ্গাপুরের মতো দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে অর্থ গোপনের সুযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় সুইস ব্যাংকের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে।