এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়কে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ফরমায়েশি রায়’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। দলের নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ রায় প্রত্যাখ্যান করেন। পরে রায়ের প্রতিবাদে সারা দেশে ৭ দিনের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। এদিকে রায় ঘোষণার পর সারা দেশে বিভিন্ন জেলায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। রায়ের অনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়ায় মির্জা আলমগীর বলেছেন, এ রায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নগ্ন বহিঃপ্রকাশ। এটি ফমায়েশি রায়, আমরা প্রত্যাখ্যান করছি। আমরা দেশবাসীকে সরকারের এহেন প্রতিহিংসামূলক আচরণ এবং আদালতের মাধ্যমে তা কার্যকর করার নোংরা কৌশল সম্পর্কে সজাগ হয়ে অনির্বাচিত এই সরকারকে হটিয়ে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। রায়ের ব্যাপারে বিএনপির আইনগত ও রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে।
মির্জা আলমগীর বলেন, বহুল আলোচিত ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
রায়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশে চিকিৎসাধীন তারেক রহমানসহ ১৭ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। বিএনপি মনে করে এই রায় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ক্ষমতাসীন সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার নগ্ন প্রকাশ। আমরা এই ফরমায়েশি রায় প্রত্যাখ্যান করছি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, জাতির দুর্ভাগ্য এই যে, সরকার তার এই প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য আদালতকে ব্যবহার করে আরেকটি মন্দ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো। যেমনটি করেছে মিথ্যা মামলায় দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ড দিয়ে। তিনি বলেন, দেশবাসী জানে, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার নৃশংস ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তৎকালীন বিএনপি সরকারই সেসময় প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দেয়ার জন্য মামলা দায়ের করেছে। স্থানীয় তদন্ত সংস্থাগুলোর পাশাপাশি এফবিআই এবং ইন্টারপোলকে তদন্তে সম্পৃক্ত করেছে। বিএনপি সরকারই এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্তের ব্যবস্থা করেছে।
এসব তদন্ত এবং আওয়ামী লীগের আন্দোলনের ফসল ওয়ান ইলেভেনের সরকারের আমলের তদন্ত প্রতিবেদনে কোথাও তারেক রহমান কিংবা বিএনপি নেতাদের সম্পৃক্ত করা হয়নি। এমনকি ওই সময় ১৬১ ধারা অনুযায়ী তদন্তকারী কর্মকর্তাদের কাছে দেয়া জবানবন্দিতে শেখ হাসিনাও তারেক রহমান কিংবা বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি। ৬২ জন সাক্ষীর কেউই তারেক রহমান কিংবা বিএনপির নামও উচ্চারণ করেননি। ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে হেয়, ক্ষতিগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত করার লক্ষ্যে অবসরপ্রাপ্ত ও বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দকে চাকরিতে পুনরায় নিয়োগ দিয়ে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিযুক্ত করার মাধ্যমে এটিকে একটি রাজনৈতিক মামলায় রূপান্তরিত করে। মির্জা আলমগীর বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে অবসরে পাঠানো পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল কাহার আকন্দ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়ে প্রকাশ্যে সভা, সমাবেশ, মিছিল করেছেন।
পোস্টার ও লিফলেট বিতরণ করেছেন। এসবই তৎকালীন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। অর্থাৎ আওয়ামী লীগের একজন নেতা জেনেই ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকার তাকে এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছিল। আর এই নতুন তদন্ত কর্মকর্তাই মামলার অন্যতম আসামি মুফতি হান্নানকে দীর্ঘদিন রিমান্ডে নিয়ে, সীমাহীন ও অকথ্য অত্যাচার করে তারেক রহমানকে জড়িয়ে বানানো জবানবন্দি নেন। সেখানে মুফতি হান্নানের স্বাক্ষর নিয়ে তারেক রহমানকে আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে। পরবর্তী পর্যায়ে মুফতি হান্নান আদালতে লিখিতভাবে তার সেই কথিত জবানবন্দি এই মর্মে প্রত্যাহার করেন। তিনি তারেক রহমানকে চেনেন না, তার সঙ্গে কোনো কথা হয়নি এবং অত্যাচার করে তাকে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করেছে বলে জানিয়েছিলেন। এই মামলায় অন্য কোনো সাক্ষী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কিছু না বলায় এবং মুফতি হান্নান তার জবানবন্দি প্রত্যাহার করায় গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানের আর কোনো সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয়নি। তার পরও তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ার মাধ্যমে পুনরায় প্রমাণিত হলো, এদেশে কোনো নাগরিকেরই আর সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারের বিরুদ্ধে রায় দেয়ায় পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ কুমার সিনহা’র কথাই সঠিক প্রমাণিত হলো যে, যে দেশে প্রধান বিচারপতি সুবিচার পায় না সে দেশে কোনো নাগরিকেরই সুবিচার পাওয়ার সুযোগ নেই।
সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা: বিএনপি মহাসচিব দলের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে রায় প্রত্যাখ্যানের পর সাত দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। কর্মসূচিগুলো হচ্ছে- ১১ই অক্টোবর ঢাকাসহ সারা দেশ মহানগর, জেলা ও থানা শাখায় বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ ও ১৬ই অক্টোবর ঢাকাসহ সারা দেশে কালো পতাকা মিছিল করবে বিএনপি। ১৩ই অক্টোবর ছাত্রদল, ১৪ই অক্টোবর যুবদল, ১৫ই অক্টোবর স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকাসহ সারা দেশে বিক্ষোভ করবে। এছাড়া, ১৭ই অক্টোবর মহিলা দল ও ১৮ই অক্টোবর ঢাকাসহ সারা দেশে মানববন্ধন করবে শ্রমিক দল। এ সময় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, সুলতানা আহমেদ ও ফরিদা ইয়াসমিন উপস্থিত ছিলেন।