এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বাংলাদেশে ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে রয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই অল্প বয়সী এবং প্রায় ৮৯ শতাংশ নারী। দেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন আত্মহত্যা করে। বেশিরভাগের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অধিকাংশ আত্মহত্যার শিকার নারীরা। দেশে ২০১৩ সালে শুধু বিষপানে আর ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে ১০ হাজার ১২৯টি। গতকাল জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিক এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এই তথ্য জানিয়েছেন। ‘আত্মহত্যা নিয়ে প্রতিবেদন তৈরিতে গণমাধ্যম কর্মীদের ভূূমিকা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চাইল্ড এডোলসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ তার লিখিত প্রবন্ধে বলেন, বিশ্বে প্রতিদিন ৬০ হাজার লোক আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। প্রতিদিন আত্মহত্যা করেন ৩ হাজার আর প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন।
বছরে আত্মহত্যা করেন ৮ লাখ মানুষ। বিশ্বে আত্মহত্যার শীর্ষে গায়ানা। প্রতি লাখে ৪৪ জন। দ্বিতীয় উত্তর কোরিয়া প্রতি লাখে ৩৮ এবং তৃতীয় দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রতি লাখে ২৯ জন আত্মহত্যা করেন। বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ২৮ জন আত্মহত্যা করেন। বেশিরভাগের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। অধিকাংশ আত্মহত্যার শিকার নারীরা। ২০১৩ সালে শুধু বিষপানে আর ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যার ঘটনা ১০ হাজার ১২৯টি। বাংলাদেশে প্রতি লাখে আত্মহত্যা ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ২০১২ সালের এক গবেষণার পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, এই সালে ১০ হাজার ১৬৭ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ৪ হাজার ৩৯৪ জন পুরুষ এবং ৫ হাজার ৭৭৩ জন নারী। ডা. আহমেদ বিভিন্ন গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে মোট আত্মহত্যার মধ্যে ৫৮ থেকে ৭৩ শতাংশ হচ্ছে নারী। বাংলাদেশে ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যার ঝুঁকিতে আছে। যাদের বেশির ভাগই অল্প বয়সী এবং প্রায় ৮৯ শতাংশ নারী। বাংলাদেশে আত্মহত্যার কারণ ও ঝুঁকি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যৌতুক ও পরিবারিক নির্যাতন, দাম্পত্য কলহ, সম্পর্কের জটিলতা (পারিবারিক অথবা প্রেম অথবা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক), উত্ত্যক্তকরণ ও প্ররোচিত আত্মহত্যার, অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, লোকলজ্জার ভয়, প্রেম ও পরীক্ষায় ব্যর্থতা, অর্থনৈতিক সংকট (দারিদ্র্য, বেকারত্ব), আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্যতা, মানসিক অসুস্থতা: বিষণ্নতা, মাদকনির্ভরতা, ব্যক্তিত্বের বিকার, সিজোফ্রেনিয়া (১৬ দশমিক ১ শতাংশ পরিণত বয়সের নারী-পুুরুষ আর ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ শিশুরা মানসিক রোগে ভুগছে), জটিল শারীরিক রোগ যন্ত্রণা থেকে মুক্তি, দ্রুত নগরায়ন ও পরিবারতন্ত্রের বিলুপ্তি (স্বাতন্ত্র্যবাদ বনাম আত্মকেন্দ্রিকতা), নৈতিক অবক্ষয় ও সামাজিক বিচ্যুতি, অপরাধ পরবর্তী আত্মহত্যা, অপরকে অনুকরণ করে আত্মহত্যা (তারকার অনুকরণ) অথবা পরিবারের আত্মহত্যার উদাহরণ। প্রতিরোধের বিষয়ে ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ প্রবন্ধে বলেন, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, আত্মহত্যার উপকরণের সহজপ্রাপ্তি হ্রাস, ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর প্রতি বিশেষ সহায়তা (মাদকাসক্ত/এইচআইভি/ নির্যাতনের শিকার/কারাবন্দি) , সামাজিক বন্ধন দৃঢ়করণ, নৈতিক শিক্ষা ও ধর্মীয় অনুশাসন, মানসিক রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা: কুসংস্কার দূর, নারীর ক্ষমতায়ন, বিশেষ পরামর্শসেবা: প্রতিষ্ঠানভিত্তিক এবং সার্বক্ষণিক টেলিফোন সহায়তা: হটলাইন/ হেল্পলাইন। মিডিয়ার ভূমিকা বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইন্টারন্যাশনাল এসোসিয়েশন ফর সুইসাইড প্রিভেনশন যৌথভাবে আত্মহত্যার সংবাদ পরিবেশন বিষয়ে সংবাদকর্মীদের জন্য একটি গাইড লাইন প্রণয়ন করেছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল আত্মহত্যার ঝুঁকি ও প্রতিরোধ বিষয়ে বলেন, যারা ইভটিজিংয়ের শিকার হয়েছে তাদের পাশে আগে দাঁড়াতে হবে। যাতে আত্মহত্যা না করতে পারে। কেউ পরিবার বা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগে তার বা তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। সমস্যাকে চিহ্নিত করতে হবে আগে। সমাধান খুঁজতে হবে। তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতা কমে আসবে। অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি হাসিনা মোমতাজ ২০১২ সালের গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, এই সালে দশ হাজার ১৬৭ জন লোক আত্মহত্যায় মারা গেছে। বাংলাদেশে ২০২০ সালের মধ্যে ১০ শতাংশ আত্মহত্যা এবং ২০৩০ সালের এক-তৃতীয়াংশ কমানোর টার্গেট রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় দশ হাজার লোক আত্মহত্যায় মৃত্যুবরণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ঝুনু শামসুন নাহার বলেন, গ্রামে আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটছে। আর আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি নারীদের মধ্যে।