এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত নতুন মানব উন্নয়ন সূচকে ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ মানবসম্পদ উন্নয়নে দেশ দুটোর থেকে বাংলাদেশ অধিক সফলতা অর্জন করেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এ সূচকে শীর্ষে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। মানব সম্পদ উন্নয়নে পৃথিবীর দেশগুলোর সফলতার সম্ভাবনার ভিত্তিতে এ সূচক তৈরি করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, রাষ্ট্রগুলোকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করাই এ সূচকের লক্ষ্য।
এ সূচক অনুযায়ী, আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলো মানব উন্নয়নে সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে। সূচকে সবার থেকে পেছনে রয়েছে আফ্রিকার দেশ চাদ ও দক্ষিণ সুদান। অপর দিকে সূচকের প্রথম দিকে রয়েছে এশিয়ার দেশগুলো। বিশ্বের ১৫৭টি দেশের মধ্যে মানব উন্নয়নে সব থেকে সফল রাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়া।
এরপরেই রয়েছে জাপান ও হংকং। এ সূচক দিয়ে বিশ্বব্যাংক বোঝাতে চেয়েছে, কোনো দেশের শিশুদের শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্য সেবার ভিত্তিতে তার উৎপাদনশীলতা ও আয়ের সম্ভাবনা কতখানি। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা যাচাই করা যাবে।
সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশে জন্মানো একটি শিশুর ভবিষ্যৎ উৎপাদনশীলতা হবে তার ৪৮ শতাংশ। এক্ষেত্রে ভারতে জন্মানো একটি শিশুর উৎপাদনশীলতার সম্ভাবনা ৪৪ শতাংশ ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এ হার ৩৯ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ায় সব থেকে এগিয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার উৎপাদনশীলতা ৫৮ শতাংশ। বাংলাদেশের আরেক প্রতিবেশী রাষ্ট্র নেপালের সম্ভাবনা ৪৯ শতাংশ। একইসঙ্গে বাংলাদেশে ৫ বছরের বেশি বয়স পর্যন্ত বেঁচে থাকা শিশুর হার ৯৭ শতাংশ। ভারতে এ হার ৯৬ শতাংশ, পাকিস্তানে ৯৩ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৯৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশের একটি চার বছরের শিশু স্কুলে যাওয়া শুরু করলে গড়ে সে প্রায় ১১ বছর পড়াশোনা করে।
এক্ষেত্রেও ভারত ও পাকিস্তান পিছিয়ে রয়েছে। ভারতের ক্ষেত্রে এ সময় গড়ে ১০.২ বছর ও পাকিস্তানের ক্ষেত্রে এ সময় মাত্র ৮.৮ বছর। দেশগুলোর শিক্ষার মান নির্ণয়ে হারমোনাইজড টেস্ট স্কোর পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এতে, বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের স্কোর হচ্ছে ৩৬৮। অপরদিকে ভারত ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীদের এ স্কোর যথাক্রমে ৩৫৫ ও ৩৩৯। বিশ্বব্যাংক দাবি করছে, বাংলাদেশে বর্তমানে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে শতকরা ৮৭ ভাগ ৬০ বছরের বেশি বাঁচবে। এ ক্ষেত্রে ভারতের হার শতকরা ৮৩ শতাংশ ও পাকিস্তানে এ হার ৮৪ শতাংশ। এছাড়া বাংলাদেশে প্রতি ১০০ জনের ৬৪ জনই শারীরিক ও মানসিক সমস্যা ছাড়াই বড় হয়। এক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। ভারতের ৬২ শতাংশ শিশু ও পাকিস্তানের ৫৫ শতাংশ শিশু কোনো শারীরিক ও মানসিক সমস্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠে।
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক সম্মেলন চলাকালে এ সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেন, নতুন এ সূচক পৃথিবীর সব রাষ্ট্রের সরকারকে এসব ক্ষেত্রে উন্নয়নসাধনে নতুন পদক্ষেপ নিতে সাহায্য করবে। তিনি দাবি করেন, এ সূচক বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে সে বিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন। তবে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে রাষ্ট্রগুলোকে মনোযোগী করতে তারা লজ্জা পান না বলেও জানান তিনি। কিম বলেন, রাষ্ট্রগুলোকে এই সংকট সম্পর্কে সাবধান করে দিতেই এই সূচক তৈরি করা হয়েছে। কারণ, এটি উৎপাদনশীলতা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত।