এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আগামী ৩০শে অক্টোবর থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন গণনা শুরু হচ্ছে। নির্বাচনের ৮০ ভাগেরও বেশি প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু ইসি এখন পর্যন্ত জানে না নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকার থাকবে নাকি বতর্মান ক্ষমতাসীনদের অধীনেই নির্বাচন হবে। কীভাবে গঠন হচ্ছে নির্বাচনকালীন সরকার এই বিষয়েও পুরোপুরি অন্ধকারে কমিশন। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সব দল নির্বাচনে নাও আসতে পারে। ফলে অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচন আয়োজন কঠিন হবে ইসি’র জন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সংসদ বহাল থাকা না থাকার বিতর্ক।
সংসদ বহাল থাকলে বর্তমান এমপি’রা কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবে সে বিষয়ে কোথাও উল্লেখ নেই। তাই তফসিলের পর এমপিদের ক্ষমতা খর্ব না করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত হবে না এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
এজন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালা সংশোধন করতে হবে ইসিকে। তফসিল ঘোষণার এক মাসেরও কম সময় বাকি থাকায় সেই সংশোধনীও সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, এমপি’রা এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং তারা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রটোকল পেয়ে থাকেন। এমপি পদে থেকে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারা যদি নির্বাচন করেন তবে ভোটের মাঠে সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি হবে না।
এক্ষেত্রে যারা এমপি নন তারা অসুবিধায় পড়বেন। নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন সম্ভব নয় তবে তারা সরকারের কাছে সংসদ ভেঙে দেয়ার সুপারিশ করতে পারে। আর তারা যদি মনে করে সম্ভব তবে তাদের আচরণবিধি সংশোধন করা প্রয়োজন। অতীতের অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন, অতীতে দেখা গেছে আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য নামমাত্র জরিমানা করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কখনও কারও প্রার্থিতা বাতিল করেনি। প্রার্থিতা বাতিল করে যদি নির্বাচন কমিশন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতো তবে আচরণবিধি মানতে প্রার্থীরা তৎপর থাকতো।
বিএনপি, যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়াসহ সরকারবিরোধী জোটগুলোর পক্ষ থেকে নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেয়ার দাবি উঠেছে। ক্ষমতাসীন দল সে দাবি মানতে নারাজ। তারা সংবিধান অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করার পক্ষে। আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে তফসিল এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ভোটগ্রহণের কথা। এ অবস্থায় নির্বাচন কমিশনের একাংশ তফসিল ঘোষণার পর এমপিদের ক্ষমতা খর্বের প্রস্তাব দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধিমালা অনুসারে, ‘নির্বাচনের ‘তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী এলাকায়, সংশ্লিষ্ট জেলায় বা অন্য কোথাও কোনো নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল কিংবা উহার মনোনীত প্রার্থী বা স্বতন্ত্র প্রার্থী কিংবা তাহাদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচার যন্ত্রের ব্যবহার, সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণকে ব্যবহার বা সরকারি যানবাহন ব্যবহার করিতে পারিবেন না এবং রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ভোগ বা ব্যবহার করিতে পারিবেন না।’ সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করলে এই সরকারি সুবিধাভোগীরা কেমন সুবিধা পাবেন সে বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্টরা। গত এপ্রিলে সাংবাদিকদের এক প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কেএম নূরুল হুদা বলেছিলেন, সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে ভোটে দাঁড়ানো এমপিদের ক্ষমতা খর্ব করা প্রয়োজন।
এজন্য ইসি আচরণবিধি সংশোধনের কথা ভাববে বলে জানান তিনি। ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সংসদ বহাল রেখেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওইসময় বিএনপিসহ বেশকিছু রাজনৈতিক দল নির্বাচন করে। ফলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য ইসিকে বেগ পেতে হয়নি। কিন্তু এবার যদি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হয় তাহলে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক তৈরি হবে। অতীতে স্থানীয় নির্বাচনগুলোতে আইন থাকার পরও এমপিদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। এমপিরা এমনিতেই স্থানীয়ভাবে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ভোগ করে। সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন হলে এমপিরা প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বলে আশংকা তৈরি হয়েছে।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, আগামী ১৫ই অক্টোবর ৩৬তম কমিশন সভা আহ্বান করা হয়েছে। সভায় জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণবিধিমালা সংশোধনের বিষয়ে আলোচনা করার জন্য কমিশনের একটি অংশ সিইসিকে চিঠি দিয়েছে। তবে আচরণবিধি সংশোধনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে অপর অংশ বলেছে, এটি সাংবিধানিক বিষয়। নির্বাচন কমিশনের এতে হস্তক্ষেপ করা উচিত হবে না।