এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : আমাদের চারপাশের নানা হট্টগোলের মাঝে নিজেকে শান্ত, স্থির রাখা কঠিন ব্যাপার। দীর্ঘ কর্মঘন্টা, মিটিংয়ের সময়সূচি, গালগপ্পো-আড্ডা, পরিবারের যত্ন-আত্তির মাঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে নানা ঝঞ্ঝাটের মধ্যে পড়ে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারানো অসম্ভব নয়। সেই কারণের শান্ত থাকা এবং নিজেকে স্থির রাখার গুরুত্ব অপরিসীম।
কিছু অভ্যাস গড়ে তুললে সংকটকালীন মুহুর্তগুলোতে শান্ত থাকতে, স্ট্রেস কমাতে সহায়তা করবে…
১। নামাজ পড়ুন : প্রতিদিন পাঁচবার মহান দরবারের হাজিরা দেয়ার নাম নামাজ। যারা প্রতিদিন এই ইবাদাতটি করে তারা মানসিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী থাকেন। এজন্য চাপ কমাতে নামাজ পড়তে হবে।
২। পেশী শিথিল করুন – শরীরের সেই অংশগুলোকে চিহ্নিত করুন যেখানে পেশী শক্ত হয়ে আছে, যেমন দৃঢ় চোয়াল, শক্ত কাঁধ, জমে ওঠা পেশি। এবার আলতো ভাবে মালিশ করে শিথিল করে দিন।
৩। অতি বিশ্লেষণ বন্ধ করুন – আপনি যখন কোন কিছু নিয়ে অযথাই দুশ্চিন্তা করেন তখন তা অনাকাঙ্খিতভাবে আপনার মনের মধ্যে চাপের সৃষ্টি করে। আপনার নিয়ন্ত্রনাধীন নয় এমন বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া বন্ধ করুন। যদি নিজেকে কোন কিছু নিয়ে অতি বিশ্লেষণ করতে দেখেন – আশেপাশ থেকে হেটে আসুন, পছন্দের গান শুনুন কিংবা এমন কিছু পড়ুন যা আপনার মনযোগকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করবে। আপনার ভালো লাগে এমন বিষয়ে দৃষ্টিপাত করুন।
৪। শান্তিপুর্ণ বিষয় বা স্থান কল্পনা করুন – সমুদ্র সৈকত কিংবা কোন প্রাকৃতিক পরিবেশের মতো শান্তিময় কোন স্থানে নিজেকে কল্পনা করুন। এমন কারও সঙ্গ কল্পনা করুন যার উপস্থিতি আপনাকে নিমিষেই শান্ত করে কিংবা এমন কোন পরিস্থিতি যা আপনাকে অতীতে শান্ত রেখেছিল।
৫। কর্মসুচি ঠিক করুন – প্রতিদিন কিছু আগেই ঘুম থেকে উঠে ঐ দিনের করণীয়গুলোর একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা করে নিন। একটা একটা করে দিনের কাজ শেষ করুন। এভাবে অপ্রয়োজনীয় কাজ এবং চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন, জরুরি এবং গুরুত্বপুর্ণ কাজগুলোকে যথাযথভাবে শেষ করুন। এক একটি কাজের সমাপ্তি আপনার মনে একটা অর্জনের অনুভুতি এনে দিবে যা হবে আপনার জন্যে অনুপ্রেরণাদায়ক।
৬। গুছিয়ে কাজ করুন – আপনার আশেপাশে ঘরে কিংবা কর্মস্থলে সব কিছু গুছিয়ে রাখুন। অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলুন। অগোছালো কিংবা এলোমেলো পারিপার্শ্বিকতাও আমাদের মনের মধ্যে এক ধরণের চাপ সৃষ্টি করে
৭। আত্মকেন্দ্রিক আচরণ পরিহার করুন – অনেক সময় আমরা নিজেকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করি। এ সময় সাধারণত আমরা আমাদের অপূর্ণ চাওয়া কিংবা সমস্যাগুলো নিয়েই ভাবি। এমন আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাভাবনা আমাদের মধ্যে হতাশা ও মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। তাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত না থেকে অন্যদের মঙ্গলের কথা ভাবুন। অন্যের জন্যে কিছু করার চেষ্টা করুন, এতে আপনার মন এক অপার্থিব আনন্দে ভরে উঠবে।
৮। সামাজিক হোন – যখন আপনার মধ্যে অস্থিরতা কাজ করে আপনি তখন অন্যের সঙ্গে সময় কাটানোয় মনযোগী হোন। এমন কারো সাথে সময় কাটান যার সাথে সময় কাটাতে আপনার ভালো লাগে কিংবা যার সাথে সময় কাটালে নিজেকে উজ্জিবিত, প্রাণবন্ত, উৎফুল্ল মনে হয়। বন্ধু-বান্ধব, পরিচিত পরিজনের মাঝে সময় কাটালে তা আমাদের শান্ত হতে বা চাপ কমাতে সাহায্য করে।
৯। পর্যাপ্ত ঘুম বা বিশ্রাম নিন – প্রাণবন্ত থাকার জন্যে আমাদের পর্যাপ্ত বিশ্রাম কিংবা ঘুমের প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম কিংবা বিশ্রামের অভাবও অনেক সময় আমাদের মধ্যে অস্থিরতা কিংবা মানসিক চাপের সৃষ্টি করে। দুপুরে ১৫ মিনিটের ভাত ঘুম আমাদের শরীর মনকে দ্রুত চাঙ্গা করে তুলে।
১০। ধ্যান করুন –আমাদের মনকে সুস্থ সবল চাঙ্গা করতে বিশ্বব্যাপি মেডিটেশন বা ধ্যানের সাহায্য নেওয়া সর্বজন স্বীকৃত। একটা নির্জন কোন খুজে নিয়ে বসে পড়ে নিজের শ্বাস-প্রশ্বাস কিংবা কোন প্রার্থনায় মন নিবেশ করুন। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে ধ্যান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন। এটা আপনার মনযোগকে একাগ্র করার পাশাপাশি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় অনেক বেশি সহায়তা করবে।