এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : এবার বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেয়ার অভিযোগ তুলে ইসির ৩৬তম সভা বর্জন করলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সোমবার ইসি সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় পাঁচ দফা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে না দেয়ায় তিনি ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়ে বেরিয়ে যান। সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে এক কমিশনারের অনুপস্থিতিতেও দিনভর ওই সভা চলে। এতে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর আগে ইভিএমের বিরোধিতা করে ৩০ আগস্টের সভাও বর্জন করেছিলেন মাহবুব তালুকদার।
এছাড়া বেশ কিছু ঘটনায় কমিশনারদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে অন্যদের দূরত্বের বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে সমন্বয় সংকট আরও তীব্র হয়েছে বলে মনে করছেন ইসি সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কমিশনারদের এমন মতবিরোধে ইসির স্বাভাবিক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনের ওপর সাধারণ মানুষসহ রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থার সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে, যা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন। এদিন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতিসহ পাঁচ দফা এজেন্ডা নিয়ে এ বৈঠক হয়। সভা শেষে কমিশন সচিব জানান, ৩০ অক্টোবরের পর যে কোনোদিন সংসদ নির্বাচনের তফসিল হতে পারে। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর সেনা মোতায়েন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আরপিও সংশোধন হলে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের প্রস্তুতি নেয়ার কথা জানান তিনি।
সোমবার অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় মাহবুব তালুকদার পাঁচ দফা প্রস্তাব দেন। এগুলো হচ্ছে- জাতীয় নির্বাচনে কিভাবে সেনা মোতায়েন হবে তা নির্ধারণ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করা। বাকি তিনটি হচ্ছে- নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি, ইসির সক্ষমতা বাড়ানো এবং সরকারের সঙ্গে সংলাপ করা। জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে এ প্রস্তাবনা উপস্থাপনের জন্য সিইসি কমিশনার মাহবুব তালুকদারকে চিঠি দেন। এরপর প্রস্তাবগুলো কমিশনের সভায় উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু তিন নির্বাচন কমিশনার এসব বিষয়ে আলোচনা না করার জন্য অভিন্ন ভাষায় ইউও নোট দিয়ে আপত্তি জানান।
সিইসি তিন কমিশনারের সঙ্গে একমত হওয়ায় বিষয়গুলো সভায় আলোচনা হয়নি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নোট অব ডিসেন্টে মাহবুব তালুকদার সভা থেকে বেরিয়ে যান। নোট অব ডিসেন্টে তিনি উল্লেখ করেন, নির্বাচন কমিশন সভায় আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতে না দেয়া হয় সেজন্য তিনজন নির্বাচন কমিশন এক ও অভিন্ন চিঠি লিখে পৃথক ইউও নোটের মাধ্যমে সিইসিকে অনুরোধ জানান। তাদের অভিন্ন অবস্থান আমাকে বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে।
বাকপ্রকাশের স্বাধীনতা সংবিধান প্রদত্ত আমার মৌলিক অধিকার। নির্বাচন কমিশন কোনোভাবেই আমার এই অধিকার খর্ব করতে পারে ন। এমতাবস্থায় অনন্যোপায় হয়ে আমি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে নোট অব ডিসেন্ট দিচ্ছি এবং এর প্রতিবাদে নির্বাচন কমিশন সভা বর্জন করছি।
একজন কমিশনার বর্জন করলেও তাতে সভা বিঘ্নিত হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, দিনব্যাপী সভা চলেছে। যেসব বিষয় আলোচনা হয়েছে তা চার ভাগ করে চারজন কমিশনারকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা চাইব আগামীতে সব কমিশনার সভায় উপস্থিত থাকবেন এবং তারা মতামত দেবেন।
বৈঠকের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রত্যেকটি শাখা তাদের বিষয়গুলো তুলে ধরার পর তা চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমরা কী পদক্ষেপ নিয়েছি, সামনে কী পদক্ষেপ নেব সে বিষয়ে কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছে। তিনি জানান, বৈঠকে নির্বাচনের ৭০০ কোটি টাকার বাজেট, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল, নয়টি অঞ্চলে ইভিএম মেলা, ১০ শতাংশ বেশি ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা রেখে প্যানেল তৈরি, ৫ শতাংশ অতিরিক্ত ভোট কেন্দ্র নির্ধারণ এবং নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, দেড় মাস পর সোমবার অনুষ্ঠিত হয় কমিশনের ৩৬তম সভা। বেলা ১১টার পরপরই শুরু হওয়া এ সভায় সিইসি তার বক্তব্যে মাহবুব তালুকদারের উত্থাপন করা প্রস্তাবনা এবং এ বিষয়ে আলোচনায় তিন কমিশনারের আপত্তি জানিয়ে ইউও নোট দেয়ার কথা জানান। তিন কমিশনারের ইউও নোটের সঙ্গে নিজের সমর্থন থাকার বিষয়টি জানিয়ে সিইসি সভায় বলেন, কমিশন সভায় ব্যক্তিগত প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার সুযোগ নেই।
এরপরই কমিশনের অনুমতি নিয়ে নোট অব ডিসেন্ট পড়ে শুনিয়ে সভা ত্যাগ করেন মাহবুব তালুকদার। বেলা দেড়টা পর্যন্ত সভা চলার পর নামাজ এবং দুপুরের খাবারের জন্য সভা মুলতবি করা হয়। বেলা ৩টায় সভার কার্যক্রম ফের শুরু হয়। প্রায় ৫টার দিকে এ সভা শেষ হয়। পরে সিইসি ও অন্য তিন কমিশনার নিজ অফিসে চলে যান। সভার সিদ্ধান্ত সাংবাদিকদের জানান ইসি সচিব। বিকাল ৫টার পর সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন মাহবুব তালুকদার। তিনি সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্ন নেননি। বিকাল ৫টার পর সিইসিসহ অন্য কমিশনাররা পৃথকভাবে ইসি সচিবালয় ত্যাগ করেন।
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই ইসির কাজে সমন্বয়হীতা দেখা দেয়। কখনও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করছেন এক বা একাধিক কমিশনার। আবার কখনও কমিশনারের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্ন মত পোষণ করছেন সিইসি। নির্বাচন কমিশনের ৩৩ জন কর্মকর্তাকে একযোগে বদলি করা নিয়ে প্রথম নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার।
ওই ঘটনায় প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব তালুকদারকে লক্ষ্য করে সিইসি বলেছিলেন, এটা তালুকদার সাহেবের প্রোডাক্ট। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে মাহবুব তালুকদারের একটি বক্তব্যে ভিন্ন মত প্রকাশ করে সিইসি বলেছিলেন, এটা মাহবুব তালুকদারের ব্যক্তিগত মতামত, নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য নয়। নির্বাচনে অনিয়ম হবে না এমন গ্যারান্টি দিতে পারব না- সিইসির এমন বক্তব্যের বিরুদ্ধেও একাট্টা হয়েছিলেন অন্য কমিশনাররা।
এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এমপিদের প্রচারের সুযোগ দিয়ে আচরণবিধি সংশোধন নিয়েও কমিশনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ওই বিষয়টিও প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন সিইসি। এ ছাড়া অনিয়মের অভিযোগে বরিশাল সিটি নির্বাচন পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া এবং জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের বিধান রেখে আরপিও সংশোধন নিয়েও কমিশনারদের মধ্যে মতপার্থক্যের বিষয়গুলো প্রকাশ্যে চলে আসে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান এ প্রসঙ্গে বলেন, গত কয়েকটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়ম বন্ধে ব্যর্থতায় ইসির ওপর এমনিতেই জনগণের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। তাদের যে ক্ষমতা ও দায়িত্ব আছে তা তারা যথাযথভাবে পালন করতে পারেননি। এরপরও যদি কমিশনে এমন দ্বন্দ্ব চলতে থাকে তবে আগামী সংসদ নির্বাচন তারা সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, মাহবুব তালুকদার যে ৫ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন, তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
মাহবুব তালুকদারের পাঁচ প্রস্তাব ও নোট অব ডিসেন্ট : জানা গেছে, গত ১৮ সেপ্টেম্বর সিইসিকে তিন পৃষ্ঠার এ ইউও নোট দেন মাহবুব তালুকদার। এরপর গত ৮ অক্টোবর সিইসি ডিও লেটার দিয়ে তা কমিশন সভায় উপস্থাপনের অনুরোধ জানান। ওইদিনই ইসির সংস্থাপন শাখা ওই নোট সিইসি ও অন্য কমিশনারদের কাছে পৌঁছে দেয়।
সূত্র জানায়, মাহবুব তালুকদার নিজের দেয়া নোট অব ডিসেন্ট কমিশনের বৈঠকে পড়ে শোনান। তাতে তিনি বলেন, গত বছরের ৩১ জুলাই থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত ইসি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপ করেছিল। সবার সুপারিশ একত্রিত করে একটি বই প্রকাশ করে ইসি।
কিন্তু এসব নিয়ে আজ পর্যন্ত কমিশনের সভায় কোনো আলোচনা হয়নি। সংলাপের কার্যকারিতা না দেখে তিনি ব্যক্তিগতভাবে একটি পর্যালোচনা করেন এবং সংলাপের সুপারিশের আলোকে প্রস্তাবগুলো লিখে কমিশন সভায় পেশ করার জন্য কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। কিন্তু তার প্রস্তাব আলোচনা না করায় তিনি বিস্মিত ও মর্মাহত। এ ঘটনা সংবিধানের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে মাহবুব তালুকদার তার পাঁচ দফা প্রস্তাবের পক্ষে কিছু যুক্তি তুলে ধরেন। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন প্রসঙ্গে তিনি প্রস্তাবে উল্লেখ করেন, সংলাপে ২৬টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে। ৩টি রাজনৈতিক দল সরাসরি সেনা মোতায়েনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এতে তিনি বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞা থেকে সেনাবাহিনীকে বাদ দেয়ায় ভিন্ন প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনী কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, তাদের কার্যপরিধি আগেই নির্ধারিত হওয়া আবশ্যক।
দ্বিতীয় প্রস্তাবে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রসঙ্গে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদাহরণ টেনে তিনি উল্লেখ করেন, প্রয়োজনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে নির্বাচন কমিশন সরাসরি আলোচনায় বসতে পারে। তৃতীয় প্রস্তাবে নির্বাচনে নিরপেক্ষতা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, যদি সংসদ বহাল থাকে, সংসদ সদস্যদের নিষ্ক্রিয় রাখার ঘোষণা দিলেই কি লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি সম্ভব? আইন অনুসরণ করে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তা কতখানি অর্জন করা সম্ভব হবে?
অতীতে নির্বাচনগুলোতে নিরপেক্ষতা ভঙ্গের কারণে ইসি পুলিশ ও প্রশাসনের কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পেরেছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। নির্বাচনে নিরপেক্ষতা অর্জন শুধু ইসির বিষয় নয়। এটি সরকারের ভূমিকার ওপরও নির্ভর করে। সরকার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে বদ্ধ পরিকর হলেই কেবল ইসি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল যে সুবিধা ভোগ করছে বিরোধী দল সংবিধানে দেয়া অধিকার তুলনামূলকভাবে তেমন ভোগ করতে পারছে না। শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে। বিরোধী দলের কমিটি ধরে ধরে মামলা দায়ের বা গায়েবি মামলা দায়ের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের ধারণা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তফসিল ঘোষণার আগে ইসির কার্যকরভাবে কিছু করার সুযোগ না থাকলেও সব পক্ষের প্রতি সম আচরণের স্বার্থে ইসি বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি সরকারের দৃষ্টিগোচর করতে পারে।
চতুর্থ প্রস্তাবে ইসির সক্ষমতা বাড়ানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সংলাপে অনেকগুলো দল ইসির সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছিল। আইনগতভাবে ইসির ক্ষমতা যথেষ্ট। কিন্তু ক্ষমতা থাকা আর ক্ষমতার প্রয়োগের সক্ষমতা থাকা ভিন্ন কথা। বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় ইসি অনেক ক্ষেত্রে ইচ্ছানুযায়ী ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে না। এর প্রধান কারণ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কাগজপত্রে ইসির অধীনে ন্যস্ত হলেও বাস্তবে কমিশন তাদের ওপর খুব একটা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না।
বিগত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিষয়টি খুবই স্পষ্ট হয়েছে। রাজনৈতিক বাস্তবতায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্যান্য ব্যক্তিও ইসির দায়িত্ব পালনে অনীহা দেখিয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন, সংলাপের সুপারিশে অংশীজনদের অনেকে নির্বাচনকালে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সরাসরি ইসির অধীনে ন্যস্ত করার কথা বলেছেন। বিষয়টি বিতর্কমূলক। তবে বিষয়টি বিবেচনাযোগ্য। ইসির কাছে জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকলে জাতীয় নির্বাচনে জনগণের আস্থা বাড়বে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে তা সহায়ক হবে।
পঞ্চম প্রস্তাবে সরকারের সঙ্গে সংলাপ করার কথা বলেছেন মাহবুব তালুকদার। তিনি বলেছেন, সংলাপে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব ও সুপারিশ রয়েছে যা সরকারি সিদ্ধান্ত ও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য মনে হলে তফসিল ঘোষণার আগেই ইসির উচিত সরকারের সঙ্গে সংলাপ করা। জনমনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের আস্থা তৈরি করতে সরকার ও ইসির একসঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন।
তিনি উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনের বিষয়ে কমিশনকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে। প্রত্যেক ভোটার যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী ভোট দিয়ে নিরাপদে বাসায় ফিরতে পারেন এই নিশ্চয়তা দেয়ার মাধ্যমে ইসির আস্থা অর্জন সম্ভব।
সচিবের ব্রিফিং : কমিশন সচিব বলেন, নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং (ইভিএম) মেশিন ব্যবহারের প্রস্ততিও থাকবে। এক্ষেত্রে সরকারের কাছে আইন সংশোধনের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। ইভিএমকে জনপ্রিয় করার জন্য আগামী ২৭ অক্টোবর দেশের নয়টি স্থানে এবং নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ঢাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে দুই দিনব্যাপী ইভিএম মেলার আয়োজন করা হবে বলেও জানান তিনি। হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের আমন্ত্রণ জানানো হবে। বিশেষ করে ফেমবোসা অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর কর্মকর্তাদের আমরা বিশেষ আমন্ত্রণ জানাব।
সচিব বলেন, নির্বাচনে ফলাফল প্রকাশে প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে অনলাইন এবং নিজস্ব সিস্টেমের মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনে আমাদের প্রচুর লোকবলের প্রয়োজন হয়। এজন্য বিভিন্ন সংস্থা থেকে লোকবল সংগ্রহ করা হবে। ইতিমধ্যে সরকারের কাছে মাঠ পর্যায়ে পদ ফাঁকা না রাখতে ইসির নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংলাপের উঠে আসা বিষয়গুলোর মধ্যে সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ যেসব বিষয় আমাদের এখতিয়ারভুক্ত সেসব বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করেছি।