পবিত্র সরকার : আগামী বছর ভারতে লোকসভা বা সংসদ নির্বাচনে কী ঘটতে চলেছে সে সম্বন্ধে জল্পনা-কল্পনা বেশ কিছুদিন আগে থেকেই শুরু হয়েছে।
এ জল্পনা-কল্পনার মূলে আছে কিছু ঘটনা; কিন্তু তার পটভূমিকায় আছে এই তথ্য যে, শ্রী নরেন্দ্র মোদির সরকার ২০১৪তে নির্বাচনে পড়া মোট ভোটের মাত্র ৩১ শতাংশ পেয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় গদি দখল করেছিল।
এ সংখ্যাধিক্য কোনো সরকারকেই স্বস্তিতে রাখে না, মোদিজির সরকারকেও রাখেনি; যদিও মোদি নিজে এবং তার দলের মানুষেরা নানারকম অতিনাটকীয় কথাবার্তায় (ইংরেজিতে যাকে ‘রেটরিক’ বলে) ও কাজে নানা প্রকল্প ঘোষণা করে এই অস্বস্তি আড়াল করার প্রাণপণ চেষ্টাতে কখনও ক্ষান্তি দেননি।
তবে তাতে যে খুব একটা কাজ হয়নি তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। কাজ না হওয়ার প্রধান লক্ষণ হল এর মধ্যে ঘটে যাওয়া উপনির্বাচনের ফলাফল।
গত ১২ অক্টোবর কলকাতার একটি বামপন্থী দৈনিকপত্রে ‘সাইক্লোনের ভয় পাচ্ছে বিজেপি’ বলে একটি প্রবন্ধ বেরিয়েছে।
তাতে লেখক নরেন্দ্র মোদির প্রধানমন্ত্রী থাকার আমলে একাধিক উপনির্বাচনের উল্লেখ করেছেন, যাতে শাসক দল বিজেপি বা ভাজপা (ভারতীয় জনতা পার্টি) যে ফল করেছে, তা সবদিক থেকেই দলের পক্ষে বেশ হতাশাজনক।
গত চার বছরে দেশের সংসদের ২৭টি আসনে (মোট ৫৪৩টির মধ্যে) উপনির্বাচন করতে হয়েছে। তাতে বিজেপি জিতেছে ৫টিতে, হেরেছে ২২টিতে।
অবশ্যই বিজেপি একাধিক রাজ্যে দলীয় প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছে। গোয়া, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, ঝাড়খন্ড, হরিয়ানা ইত্যাদি উত্তর ভারতের রাজ্যগুলোতে শাসনক্ষমতা দখল করেছে।
এমনকি উত্তরপুবে আসাম ও মণিপুর তার দখলে এসেছে। আর ত্রিপুরাতে দীর্ঘদিনের বামপন্থী শাসনকে প্রায় চূর্ণ করে অপ্রতিহত অধিকার পেয়েছে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশের ক্ষমতা দখল ছিল এক চমকপ্রদ সাফল্য; তার লোকসভারও ৮০টি আসনের ৭১টিই দখল করেছিল বিজেপি।
কিন্তু সেখানে কী আশ্চর্য ঘটনা ঘটে দেখুন। লোকসভার যে গোরক্ষপুর আর ফুলপুর এ দুই কেন্দ্র থেকে পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আর উপ-মুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ আর্য জয়ী হয়েছিলেন এবং রাজ্যের রাজনীতিতে থেকে যাওয়ার জন্য তাদের ইস্তফার ফলে যে দুটি খালি হয়েছিল, সে দুটির পরের উপনির্বাচনে কী হল? ২০১৭-র মার্চে ওই দুটি শূন্য আসনে বিজেপি পরাজিত হল।
গোরক্ষপুরের লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে ছিল ১০টি বিধানসভা কেন্দ্র, যার নয়টিই ছিল বিজেপির দখলে। সেখানে ওই লোকসভা কেন্দ্রটি হারানো দুশ্চিন্তার কারণ তো হবেই।
উত্তরপ্রদেশের আরেকটি লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সেখানেও বিজেপির মুখ পুড়েছে বলা যায়। সেটি কৈরানা। সেখানে শুধু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং অন্য মন্ত্রীরা যে থানা গেড়ে হামলে পড়েছিলেন তাই নয়, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও এসে জমকালো মিছিল
করেছিলেন। বিজেপির যে মূল অস্ত্র- সাম্প্রদায়িকতা- তার প্রচারে ও ব্যবহারে দলের কোনো ক্লান্তি ছিল না। আর তথাকথিত বাস্তব ও কাল্পনিক উন্নয়নের প্রচার তো ছিলই। কিন্তু তাতে ভবী ভোলেনি।
রাষ্ট্রীয় লোক দলের তবসুম হাসান ৫৫ হাজার ভোটে বিজেপিকে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন। পূর্বোক্ত প্রবন্ধটির লেখক এও লক্ষ করেছেন যে, গত ৬ বছরে যেখানে উত্তরপ্রদেশ থেকে একজনও মুসলমান এমপি জয়ী হতে পারেননি, কৈরানাতে তবসুমের জয় সেই বিশাল পরিবর্তনটিও ঘটিয়েছে।
এ বছরেই বিজেপি ১০টির মধ্যে ৮টি সংসদের আসন হারিয়ে সংসদে খুব একটা স্বস্তিতে নেই। ওই ৫৪৩টি আসনে দলের এখন আসন ২৭২টি মাত্র, শিবসেনা ধরনের সঙ্গীদের ওপরও খুব একটা ভরসা করা যাচ্ছে না।
তারা প্রায়ই প্রধানমন্ত্রীর নানা কাজের সমালোচনা করছে। আর এর মধ্যেই ধেয়ে আসছে ৫টি রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচন- রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা আর মিজোরাম।
বিজেপির বিপুল অর্থশক্তির কথা সবাই জানে, নির্বাচনে জেতার জন্য যে তারা দক্ষিণপন্থী সব শাসক দলের মতোই গায়ের জোর আর প্রতিনিধি কেনাবেচার সাহায্য নেয়, তাতে এখন আর লুকোছাপা নেই।
এই সেদিন কর্ণাটকে এমএলএ কেনাবেচার ‘হর্স ট্রেডিং’-এর উদ্যোগ কারা নিয়েছিল তা আর কারও অজানা নেই। ত্রিপুরাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীপ্রার্থীর বিরলতার পেছনে দুয়েরই ভূমিকা ছিল।
তা সত্ত্বেও মনে হচ্ছে, রাজস্থানে বিজেপি পরাজিত হতে যাচ্ছে, মধ্যপ্রদেশ আর ছত্তিসগড়ে তার অবস্থা খুব একটা সুনিশ্চিত নয়। উত্তরপুবে মিজোরাম কংগ্রেসের শাসনে আছে, তাকে বিজেপি উৎখাত করবে এমন সম্ভাবনা কমছে।
যদিও মণিপুরে ওই ঘোড়া কেনাবেচাতে বিজেপি মোটামুটি সাফল্য পেয়েছে; কিন্তু এই বিধানসভার ভোটগুলো মোটামুটি বুঝিয়ে দেবে ২০১৯-এর নির্বাচনে বিজেপি ক্ষমতায় আসবে কিনা।
বেশিরভাগ মানুষ মনে করছেন, বেশ ভালো করেই বুঝিয়ে দেবে। দেশের যে অঞ্চলটাকে ‘গো-বলয়’ বলা হয়, সেখানে যখন বিজেপির তরী টলমল করছে, অন্যত্র তার অবস্থা খুব একটা সুবিধার হবে বলে মনে হয় না।
আর দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলোতে বিজেপি কোনোদিন এগোতে পারবে বলে মনে হয় না। কেরলে বিজেপি নানা প্ররোচনা ছড়াচ্ছে; কিন্তু সেখানেও সিপিআই (এম) সরকারকে বিপদে ফেলার চেষ্টা খুব একটা সফল হবে বলে মনে হয় না। দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যে স্থানীয় দলের আসনই এখনও বেশ শক্তপোক্ত।
২.
কী কী কারণে বিজেপি ও শ্রী মোদির প্রতি এক বৃহৎ ভারতীয় জনগোষ্ঠীর এই ‘মোহভঙ্গ’ ঘটছে? এর একাধিক কারণ আছে। প্রথমত, তার আমলে তার আড়ম্বরপূর্ণ প্রতিশ্রুতির কিছুই প্রায় পালিত হয়নি, সবই যেন উপহাসের লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘অচ্ছে দিন’ কথাটা নিয়ে প্রচুর ঢাকঢোল পেটানো চলেছে; কিন্তু চাষের জন্য ব্যাংক ও ব্যক্তিগত ঋণ শোধ করতে না পেরে হাজার হাজার কৃষকের আত্মহত্যা শুধু নয়, চাষীদের ঋণ মওকুফ করার চেয়ে কর্পোরেট ঋণ মওকুফ করাতে সরকারের বেশি উৎসাহ চাষীদের তার প্রতি বিমুখ করে তুলেছে তাতে সন্দেহ নেই।
সম্প্রতি একাধিক প্রতিবাদী কৃষক সমাবেশের বিরুদ্ধে সরকারি পুলিশি ব্যবস্থা এই বিমুখতা আরও বাড়িয়েছে। বেকার সমস্যার সমাধান এখনও দূরস্থ। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যর্থতা হল ‘নোটবন্দি’র, যেখানে ২০১৭-র ৮ নভেম্বর পুরনো ১০০০ আর ৫০০ টাকা নোট বাতিল করা হল।
এতে সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় কষ্ট তো হলই- ব্যাংকের লাইনে নোট বদলের জন্য দাঁড়িয়ে ১০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যুই হয়েছে, সেই সঙ্গে মধ্য ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ব্যবসা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিশ্রুত কালো টাকা উদ্ধারের এবং প্রত্যেক ভারতীয়ের মাথাপিছু সেই টাকার পনেরো লাখ টাকা ব্যাংকে জমা পড়ার কিছুই ঘটেনি। বরং তারই আমলে ব্যাংকের জালিয়াতি অসম্ভব বেড়ে গেছে, গুজরাটের এবং সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ নিয়ে ফেরত দেয়নি, বিদেশে উধাও হয়েছে।
একটা বিশাল বড় আকারের দুর্নীতিও প্রকট হয়েছে, ফ্রান্স থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার ক্ষেত্রে মোদিজির বন্ধুস্থানীয় অনিল অম্বানিদের প্রতিষ্ঠানকে এই চুক্তির মধ্যে আনা হয়েছে, সরকারি প্রতিষ্ঠান হাল বা হিন্দুস্থান এরোনটিক্স লিমিটেডকে অযোগ্য বলে বাতিল করে।
ফলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী মোদিজির আগেকার নানা নাটকীয় উচ্চারণ নিয়ে অব্যাবহতভাবে ব্যঙ্গ করে চলেছেন। ‘হম্ খুদ না কুছ খায়েঙ্গে, না কিসিকো খানে দেঙ্গে’, ‘ময়য় চোর নহি, এক চৌকিদার হুঁ’- ইত্যাদি কথা এখন তার দিকে বুমেরাং হয়ে ফিরে আসছে; বলা হচ্ছে, তিনি চোরদের চৌকিদার।
তার আমলে ধর্ষণের নানা বীভৎস ঘটনা, বিশেষত কাশ্মীরের একটি মন্দিরে শিশুকন্যার ধর্ষণ- মানুষের নিরাপত্তার বোধ টলিয়ে দিয়েছে। এদিকে তার মন্ত্রিসভার কোনো কোনো মন্ত্রীর (এম জে আকবর) নামে নারী নির্যাতনের অভিযোগে এখন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম পরিব্যাপ্ত, মোদিজি যদিও এ বিষয়ে এখনও মুখ খোলেননি।
ভারতের সাম্প্রদায়িক মোজাইকে তার আমলে ফাটল ধরেছে বললে মিথ্যা ভাষণ হয় না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মুসলমান ছাত্র অদৃশ্য হয়ে যায়, রেফ্রিজারেটরে গোমাংস রাখা আছে, বা ট্রেনে যাত্রী গোমাংস নিয়ে যাচ্ছে এই সন্দেহে মানুষ খুন হয়, রাজস্থানে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমান শ্রমিককে মেরে ফেলা হয় এবং হত্যাকারী বীরের সম্মান পায়।
একের পর এক যুক্তিবাদী মানুষকে- পানসারে, কালবুর্গি, গৌরী লঙ্কেশকে হিন্দুত্ববাদীরা খুন করে। এই রাজত্বে প্রাদেশিকতাও তীব্র হয়েছে। গুজরাট থেকে হিন্দিভাষী শ্রমিকদের তাড়ানো হচ্ছে, আর আসামে এনআরসি’র (ন্যাশনাল রেজিস্ট্রেশন অফ সিটিজেন্স) নাম করে বাঙালি ও বাংলাভাষী মুসলমান বিতারণের এক আয়োজন চলছে। মোদিজি এসব ব্যাপারে গভীর মৌন অবলম্বন করে থাকছেন।
রাজনৈতিক ব্যর্থতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক ব্যর্থতা সাধারণ মানুষকে আরও বেশি করে আঘাত করছে। টাকার দাম ক্রমশ ভয়াবহ গতিতে নিচে নামছে; আর বাড়ছে, একই সূত্রে জ্বালানির দাম।
জ্বালানির দাম বাড়লে জিনিসপত্রের দামও চড়তে থাকবে, এতে ব্যতিক্রম নেই। গৃহস্থ রান্নার গ্যাসে সেটি হাড়ে হাড়ে বুঝছেন। তিন বছর আগে যে গ্যাসের দাম ছিল ৬২৫ টাকার মতো, এখন তার দাম ৯০৮ টাকা। সাধারণ মানুষও ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছেন।
নির্বাচন অনেকটা ক্রিকেটের মতোই, তাতে অবিশ্বাস্য ঘটনাও ঘটে যায়; কিন্তু আগামী নির্বাচনে বিজেপির দুশ্চিন্তার যথেষ্ট কারণ আছে বলেই মনে হয়।
পবিত্র সরকার : সাবেক উপাচার্য, রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতাগ ইউনিটে ফেল ঘ ইউনিটে প্রথম!
এশিয়ান বাংলাঢাকা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগের পর এবার অস্বাভাবিক ফলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ইউনিটটির ভর্তি পরীক্ষায় রেকর্ড সংখ্যক নম্বর পেয়ে সম্মিলিতভাবে প্রথম হওয়া জাহিদ হাসান আকাশ ফেল করেছেন নিজ ব্যবসায় শাখার ‘গ’ ইউনিটে। এছাড়াও বিজ্ঞান শাখা থেকে প্রথম হওয়া মো. তাসনিম ফেল করেছেন নিজের বিজ্ঞান শাখার ‘ক’ ইউনিটে। আবার পাসকৃতদের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জনই স্ব স্ব শাখার ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিসের এক অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তীব্র সমালোচনা করছেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও ভর্তিচ্ছুরা। ফলাফল বাতিল করে পুনরায় ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার দাবি করেছেন অনেকে। গত মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে এখনো টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে আমরণ অনশন করছেন আইন বিভাগের এক শিক্ষার্থী। কিন্তু প্রশাসন এখনো পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে অনড়।
বুধবারসকালে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, আমরা কাউকে এখনো ভর্তি করিনি। তারা আসলে তাদের বিষয়ে তদন্ত ও যাচাই-বাছাই হবে। এরপর যদি কেউ প্রমাণিত হয় যে অসদুপায় অবলম্বন করে ভর্তি পরীক্ষায় পাস করেছে তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। অন্যদিকে ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ (কবি সামাদ)’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা অবহিত আছি।
বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় আসা তথ্যের সঙ্গে আমরা এগুলো মেলাবো। এরপর আমরা বিষয়টি নিয়ে বসবো। সেখানেই ঠিক করবো কী করা যায়। বিষয়টি নিয়ে আমরাও ভাবছি। একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ভর্তি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ‘ঘ’ ইউনিটে রেকর্ড ১১৪ দশমিক ৪০ নম্বর পেয়ে সম্মিলিতভাবে প্রথম হওয়া জাহিদ হাসান আকাশ ৩৪ দশমিক ৩২ নম্বর পেয়ে ফেল করেছেন নিজ ব্যবসায় শাখার ‘গ’ ইউনিটে। যেখানে পাস করতে লাগে ৪৮ নম্বর। তার দুই ইউনিটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে- তিনি ‘গ’ ইউনিটে বাংলায় পেয়েছিলেন ১০ দশমিক ৮, ইংরেজিতে পেয়েছিলেন মাত্র ২ দশমিক ৪০, হিসাব বিজ্ঞানে ৫ দশমিক ২৮, ব্যবসায় নীতিতে ৬ দশমিক ৭২ এবং ফিন্যান্সে ৯ দশমিক ৮৪ পেয়ে ফেল করেছেন। অথচ তিনিই এক মাসের ব্যবধানে সম্মিলিত ‘ঘ’ ইউনিটে পেয়েছেন ১১৪ দশমিক ৩০ নম্বর। যেখানে বাংলায় পেয়েছেন অবিশ্বাস্য ৩০ এর মধ্যে ৩০, ইংরেজিতে ৩০ এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৩০, সাধারণ জ্ঞান বাংলাদেশ বিষয়বলিতে ২৮ দশমিক ৩০ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলিতে ২৫ দশমিক ৫০ নম্বর। অন্যদিকে ১০৯ দশমিক ৫০ নম্বর পেয়ে ‘ঘ’ ইউনিটে বিজ্ঞান শাখা থেকে প্রথম হওয়া তাসনীম বিন আলম ফেল করেছিলেন নিজ বিজ্ঞান শাখার ‘ক’ ইউনিটে। সেখানে তিনি পেয়েছিলেন মাত্র ৪৩ দশমিক ৭৫ নম্বর।
এছাড়াও ‘ঘ’ ইউনিটের ফলাফলে প্রথম সারির ১০০ জনের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ জনই নিজ নিজ শাখার ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করেছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি অফিসের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। এদিকে বিতর্কিত ফলাফল বাতিলসহ চার দফা দাবিতে গত মঙ্গলবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে অবস্থিত সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে আমরণ অনশন করছেন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেন। গতকাল বিকালে তিনি মানবজমিনকে বলেন, যতক্ষণ আমার দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাস না দিবে প্রশাসন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আমার অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবো। সকালে তার সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেছে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের প্ল্যাটফরম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এ সময় সংগঠনটির নেতারা ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল বাতিল করার দাবি করে নতুনভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মেধাবীদের সুযোগ দিতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।