এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদারের পাঁচটি প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয় বলে অভিমত আরেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের। ওইসব প্রস্তাবের দুটি আবার সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও। তবে একজন নির্বাচন কমিশনার সভা বর্জন করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিলেও কমিশনারদের মধ্যে অনৈক্য নেই বলেও দাবি তার। বুধবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করছিলেন কবিতা খানম।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন কিভাবে হবে তা নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপট এখনও তৈরি হয়নি। কথা বলেন নির্বাচনী আচরণবিধি নিয়েও।
তিনি বলেন, বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। এতে জীবন্ত প্রাণী নিয়ে প্রচারে অংশ না নেয়া, ডিজিটাল ডিসপ্লে ব্যবহার না করাসহ ছোটখাটো সংশোধনীর প্রস্তাব করেছে ইসির আইন সংস্কার কমিটি। প্রসঙ্গত আইন সংস্কার কমিটির সভাপতি কবিতা খানম নিজেই।
সোমবার নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ৫ দফা নিয়ে আলোচনা করতে না পারার প্রতিবাদে কমিশন সভা বর্জন করেন।
ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম বলেন, আমি পাঁচটি প্রস্তাবই দেখেছি। প্রথমটি হল নির্বাচনে সেনা বাহিনীকে কীভাবে রাখব। এটি নিয়ে আলোচনার সময় এখন নয়। আলোচনা করার মতো প্রেক্ষাপটও তৈরি হয়নি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের আওতায় আনার যে বিষয়টি তিনি উল্লেখ করেছেন সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সাংবিধানিকভাবেই এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ন্যস্ত। সংবিধানের ৫৫(২) ধারায় তা-ই বলা আছে। সুতরাং এটা নির্বাচন কমিশনের অধীনে আনা নিয়ে যদি আলোচনা করি সেটি হবে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর কী বিষয় নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপ করব? সরকারের সঙ্গে আলাপের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ইতিমধ্যে সংলাপ করেছি। তফসিল ঘোষণার আগে যতটুকু সময় আমাদের হাতে আছে এ সময়ের মধ্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা সম্ভব নয়।
একজন নির্বাচন কমিশনারের সভা বর্জন এবং ব্রিফিং নিয়ে কমিশন বিব্রত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে কবিতা খানম বলেন, যেহেতু তিনি কমিশন সভা বর্জন করে প্রেস ব্রিফিংয়ে আসতেছেন, এ রকম একটা মেসেজতো আমরা পাচ্ছি যে বিব্রতকর অবস্থা তৈরি হয়েছে, বিভক্তি আছে। কিন্তু আমরা কমিশন সেটা ফিল করছি না। মঙ্গলবার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠকে তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন।
নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমি মনে করি না যে এর মাধ্যমে কোনো অনৈক্য তৈরি হয়েছে। নোট অব ডিসেন্ট যে কোনো কমিশনার যে কোনো সময় দিতে পারেন। এটা (ইসি) সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং এখানে ৫ জন নির্বাচন কমিশনার মিলেই একটা বডি। মনে করি না যে, মতবিরোধের কারণে কমিশনে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। কমিশনের ঐক্য নষ্ট হয়েছে। যে কোনো একটা বিষয়ে মতবিরোধ বা নোট অব ডিসেন্ট আমিও দিতে পারি। অনেক সময় বিভিন্ন ফাইলে নোট অব ডিসেন্ট দিচ্ছিও। সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত হয়।
আচরণবিধি সংশোধন প্রসঙ্গে কবিতা খানম বলেন, সোস্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের মতো কিছু নেই। তিনি বলেন, আচরণ বিধিমালা করা হয়েছে মানার জন্যই। কেউ ব্যতয় ঘটালে তার ব্যবস্থাও আইনে আছে। এমপিদের পদে রেখে লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি সম্ভব কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আইন সবার জন্য সমান। আইন মানতে হবে। আইন যেহেতু সবার জন্য সমান আমরা সেভাবে প্রয়োগ করেত চাই। আচরণ বিধিমালায় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সংজ্ঞায় প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, মন্ত্রী, এমপি সবাই আছেন। তারা সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচন প্রচারে যেতে পারবেন না।
সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেন, সংবিধানকে সামনে রেখে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখানে সংসদ বহাল থাকবে কি থাকবে না এটা নির্বাচন কমিশনের এখতিয়ার নয়। নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
তিনি জানান, নির্বাচনে ইসির কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা করার বিষয়ে ইসিতে সক্রিয় কোনো আলোচনা হয়নি। কমিশন যদি মনে করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।