এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত রাজপথে কাউকে ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ। যেকোনো ইস্যুতে যেকোনো দল বা সংগঠন আন্দোলনে নামলে রাজপথেই তাদের মোকাবিলা করবে তারা। এজন্য দুই কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রথমত মাঠ দখল ও দ্বিতীয়ত টানা কর্মসূচি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলীয় জোটও থাকবে একই কৌশলে। কর্মসূচির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতে টানা কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। বিশেষ করে তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত মাঠ দখলে রাখার প্রত্যয় তাদের। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বিএনপি’র নেতৃত্বে পরিচালিত জোটে রয়েছে জামায়াত।
তারা সুযোগ পেলে দেশে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করবে। পাশাপাশি বিএনপিকে ঘিরে যে ঐক্যজোট তৈরি হয়েছে তাতে রয়েছে ষড়যন্ত্র। আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, নির্বাচন নিয়ে তারা যে ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন তা সবারই জানা।
নির্বাচন বানচাল হলে লাভবান হবেন তারাই। তাই সতর্ক থেকে রাজনীতির মাঠ দখল ছাড়া আওয়ামী লীগের সামনে আর কোনো রাস্তা খোলা নেই। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা দুই ধরনের ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা করছি। প্রথমত নির্বাচন ভণ্ডুল করা, দ্বিতীয়ত অশুভ কোনো শক্তিকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করা। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপিসহ তাদের মিত্র দলগুলোর বক্তব্য থেকে আমরা এ ধারণা পোষণ করছি। এজন্য দলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করা হয়েছে। মূল কথা নির্বাচন বানচালের জন্য যে শক্তি চক্রান্ত বা ষড়যন্ত্র করছে সেই শক্তির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকা। পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন জনগণের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এজন্য গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের নীতি-নির্ধারকরা অনানুষ্ঠানিকভাবে জোটের কার্যক্রম ও কর্মসূচি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জোটের নেতারা জানান, ঐক্যফ্রন্টকে খুব একটা গুরুত্ব না দিলেও এই জোট যাতে জনগণকে বিভ্রান্ত না করতে পারে সেজন্য আন্তঃবৈঠক বাড়ানোর পাশাপাশি রাজপথেও নিয়মিত কর্মসূচি দেয়া হবে। গত কয়েক দিনে চার বার বৈঠক করা হয়েছে। এমনটাই চলবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত। ১৪ দলকে মাঠে রাখার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কয়েকটি গণসমাবেশের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে আগামী ২৯শে অক্টোবর রাজধানীতে গণসমাবেশ করার কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২৫শে অক্টোবর যশোরে সমাবেশ এবং ২৬শে অক্টোবর চুয়াডাঙ্গায় সমাবেশ করারও সিদ্ধান্ত হয়।
তবে যশোরের সমাবেশ পিছিয়ে যেতে পারে বলে ১৪ দল সূত্র জানায়। অবশ্য পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি করে ঢাকায় একটি বড় ধরনের জনসভা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোটটি। এ বিষয়ে ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বলেন, জোটের কলেবর বাড়বে না, কিন্তু কার্যক্রম বাড়বে। কোনও অপশক্তির কু-মতলব এ দেশে বাস্তবায়ন হতে দেবে না ১৪ দল। তাদের ষড়যন্ত্র বাংলার জনগণকে সঙ্গে নিয়ে রুখে দেয়া হবে। আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু বিএনপি প্রস্তুতি নিচ্ছে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নির্বাচন বানচালের। দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতা জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রস্তুতিমূলক যাবতীয় কাজ প্রায় শেষের পথে।
এর মধ্যে রয়েছে-ইশতেহার তৈরি, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা, পোলিং এজেন্ট প্রশিক্ষণ ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রচারণা। দলের শীর্ষ নেতারা জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই এসব প্রস্তুতি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে। এ হিসেবে দলটির সামনে সময় রয়েছে মাত্র কয়েক দিন। কারণ বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, সরকারের ১০ বছরের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সংবলিত ৩০ লাখ রঙিন পোস্টার খুব শিগগির পাঠানো হচ্ছে তৃণমূলে। এসব পোস্টার ছাপানোর কাজ শেষের দিকে। তফসিল ঘোষণার আগেই এগুলো প্রতিটি নির্বাচনী আসনে দৃশ্যমান হবে। প্রতি নির্বাচনী আসনে ১০ হাজার করে পোস্টার সরবরাহ করা হবে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ছবি যুক্ত এসব পোস্টারে এ সরকারের আমলে বাস্তবায়নাধীন বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের স্থির চিত্রও স্থান পাবে।