এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রয়েছেন ১৭ দিন হলো। কেবিন ব্লকের ৬১২ নম্বর কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পাঁচ সদস্যের বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের অধীনে তার চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালে কেমন আছেন তিনি। তার চিকিৎসায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও হাসপাতাল সূত্রের তথ্য অনুযায়ী চিকিৎসায় সামান্য অগ্রগতি হলেও খালেদা জিয়াকে দীর্ঘ মেয়াদে চিকিৎসা নিতে হবে।
এ জন্য পর্যায়ক্রমে তার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। যেসব পরীক্ষা বিএসএমএমইউতে হয় না তা বাইরে করা হচ্ছে। খালেদা জিয়ার সার্বিক চিকিৎসার বিষয়ে বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল-হারুন বলেন, উনার (খালেদা জিয়ার) চিকিৎসা চলছে।
উনার যে রোগ সেটা দুই-চার দিনে সেরে যাওয়ার মতো নয়। তার চিকিৎসা শুরু হয়ে গেছে। ফিজিওথেরাপি নিচ্ছেন। এতে ব্যথা আগের চেয়ে একটু কমেছে।
তিনি নিয়মিত ওষুধ খাচ্ছেন। মেডিক্যাল বোর্ড তাকে যেভাবে ওষুধের ডোজ কম বেশি দিচ্ছেন সেভাবে তিনি খাচ্ছেন বলে পরিচালক উল্লেখ করেন। হাসপাতাল থেকে খালেদা জিয়াকে কি কি খাবার দেয়া হয় জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, জেল কোড অনুসারে এবং ডায়েটে যেভাবে প্রেসক্রিপশ করা হয়, সেভাবেই তাকে খাবার দেয়া হয়। খালেদা জিয়া কোনো পত্রিকা পড়েন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যখন যাই তখন তো দেখি না। মেডিকেল বোর্ডের একাধিক সদস্য জানান, সাদামাটাভাবে বললে কারাবন্দি পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়া মানসিকভাবে তুলনামূলক ভালো আছেন।
কিন্তু শারীরিকভাবে তিনি সুস্থ নেই আর্থাইটিসের সমস্যা তাকে ভোগাচ্ছে। তবে প্রতিদিন নিয়ম করে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহণ করায় ব্যথা আগের চেয়ে একটু কম। সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়ার মূল চিকিৎসা এখনো শুরু হয়নি। সঠিকভাবে রোগের কারণ চিহ্নিত করতে বিএসএমএমইউয়ের পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানেও নমুনা পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। জানা গেছে, বিশেষ একটি রোগ নির্ণয়ের জন্য চারদিন আগে মহাখালী আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর,বি) নমুনা পাঠানো হয়েছে। এ পরীক্ষার ফল হাতে পেতে এক সপ্তাহ সময় লাগে।
বিএসএমএমইউ’র রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগ সূত্র জানায়, এই বিভাগে এখন পর্যন্ত খালেদা জিয়া হাসপাতালে ভর্তির পর কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়নি। বর্তমানে মেডিক্যাল বোর্ডের সদস্যরা বেগম খালেদা জিয়ার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছেন। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া কেবিন ব্লকে চিকিৎসাধীন থাকায় কেবিন ব্লকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার রয়েছে। বিশেষ করে ছয়তলার কেবিনে যে রোগীরা ভর্তি আছেন তাদের অ্যাটেনডেন্টদের আসা-যাওয়ার সময় পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার পরই ওই ব্লকে যেতে দেয়া হচ্ছে।
বেগম খালেদা জিয়ার সার্বিক চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে চাইলে মেডিকেল বোর্ড প্রধান বিএসএমএমইউ’র ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল জলিল চৌধুরী বলেন, আস্তে আস্তে ইমপ্রোভ (উন্নত) হচ্ছে। নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দেয়ার পর একটু ব্যথা কমেছে। রক্তের অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেয়া হয়েছে। কিছু রিপোর্ট পেয়েছি, কিছু বাকি আছে। বোর্ডের পরামর্শে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছে। আইসিডিডিআর,বি-তে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হ্যা পাঠানো হয়েছে। তবে রিপোর্ট আসতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। সবগুলো রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর মূল সমস্যা চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা শুরু হবে। গত ৬ই অক্টোবর খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বিএসএমএমইউতে আনা হয়।