এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে আগামীকাল সংলাপে বসছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আলোচনায় অংশ নিতে ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পাওয়ার পর বিকালে প্রতিনিধি দল চূড়ান্ত করা ও সংলাপের আলোচ্য বিষয় ঠিক করতে বৈঠক করেন ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। বৈঠক শেষে জানানো হয়, ড. কামাল হোসেনসহ ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল সংলাপে অংশ নিতে গণভবনে যাবেন।
ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের হয়ে বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন, গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এসএম আকরাম, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ডাকসু’র সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদ ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আ ব ম মোস্তফা আমিন গণভবনে যাচ্ছেন। ঐক্যফ্রন্টের বৈঠক শেষে নামের তালিকা নিয়ে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয়ে যান।
এদিকে গতকাল বৈঠক শেষে ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব সাংবাদিকদের বলেন, আমি আশা করি সংলাপের মাধ্যমে আগামী দিনে একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে। কোনো সংলাপ ব্যর্থ হয় না। তিনি বলেন, আমরা চিঠি দিয়েছিলাম ৭ দফা দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করবো। তিনি আলোচনার জন্য রাজি হয়েছেন।
সময় দিয়েছেন। আগামীকাল সন্ধ্যা ৭ টায় ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্ব ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ১৬ জন যাব গণভবনে। সেখানে আলোচনা হবে। এর পরবর্তীতে ঢাকা, রাজশাহী, বরিশালসহ আমাদের আরো অনেকগুলো প্রোগ্রাম আছে। সুশীল সমাজের সঙ্গে, সম্পাদকদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক আছে। ওলামা মাশায়েখদের সঙ্গে, পেশাজীবীদের সঙ্গে, শ্রমজীবীদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক আছে।
রব বলেন, আমার মনে হয় এই মুহূর্তে পুরো জাতি তাকিয়ে আছে দেশের আজ যে ক্রান্তিলগ্ন সৃষ্টি হয়েছে সেদিকে। এই বিষয়ে আমরা কথা বলব কি বলব না সেটার দিকে। আজকে প্রধানমন্ত্রীর এই সংলাপের আমন্ত্রণের মধ্য দিয়ে একটি দরজা খোলা হলো। আলোচনা হচ্ছে, হবে এবং চলবে। তিনি বলেন, জাতীয় সমস্যার জন্য মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ জীবন দিয়েছে। তাদের যে আকাঙ্ক্ষা, চেতনা এবং তাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে কাজ করছে ঐক্যফ্রন্ট। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন যেন হতে পারে, সবাই যাতে ভোট দিতে পারে, এগুলো নিয়ে ৭ দফার আলোকে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপ হবে।
সংবিধান সম্মত আলোচনার প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে রব বলেন, দেশ সংবিধানের জন্য নাকি দেশের জন্য সংবিধান। দেশের জন্য, মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য, সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। সব সমস্যার জন্য আলোচনা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা সোমবার বলেছি খালেদা জিয়ার মামলাটা পেন্ডিংয়ে আছে। আপিল হয়েছে। আমরা মনে করি এই মামলাটা রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক। তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ২/৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে পারে- এটা মানুষ বিশ্বাস করে না। আমরা কিভাবে বিশ্বাস করব। আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতির নিন্দা জানাই।
ড. কামালের বাসায় সংলাপের চিঠি: জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আলোচনায় অংশ নিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর অফিসিয়াল প্যাডে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনকে লেখা চিঠিতে তিনি এ আমন্ত্রণ জানান। সকালেই ড. কামাল হোসেনের বেইলী রোডের বাসায় চিঠি পৌঁছে দেন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ। চিঠি হস্তান্তরের পর গোলাপ সাংবাদিকদের বলেন, আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র ড. কামাল হোসেনের কাছে দিয়েছি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা উনাদেরকে আমন্ত্রণ করেছেন।
চিঠিতে কামাল হোসেনকে উদ্দেশ করে লেখা হয়েছে, “সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনার ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পত্রের জন্য ধন্যবাদ। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত।
“তাই আলোচনার জন্য আপনি যে সময় চেয়েছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ০১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যা ৭টায় আপনাদের আমি গণভবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আমন্ত্রণ পাওয়ার পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুধু ৭ দফা নয়, অন্যান্য বিষয় ও বর্তমান যে বিষয়গুলো আছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে দেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাব। এর জন্য উনি যদি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা আমাদের কাছে চান, অবশ্যই ড. কামাল হোসেন সাহেব বিস্তারিত কথা বলতে পারবেন। যেহেতু উনি সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম, উনি এ ব্যাপারে ব্যাখ্যাটা দিতে পারবেন। এ বিষয়টি আমরা উনার উপরে ছেড়ে দিচ্ছি, উনি সংলাপের নেতৃত্ব দেবেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে চিঠি দেন ড. কামাল হোসেন ও গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। পরের দিন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সংলাপে বসার সিদ্ধান্তের কথা জানান। বিকালে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের পর রাতে টেলিফোনে কথা বলেন গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টুর সঙ্গে। দলীয় সূত্র জানায়, সংলাপে আওয়ামী লীগের পক্ষে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দেবেন। দলের শীর্ষ নেতারাও সংলাপে অংশ নেবেন।