এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, পুলিশি তল্লাশির নামে বাড়িতে বাড়িতে তাণ্ডব চলছে। চারদিকে শুধু আতঙ্ক আর ভয়। গত চার দিনে ২৩০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তফসিল ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলতে কিছুই নেই। গতকাল নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। সরকারের প্রতিহিংসায় খালেদা জিয়ার জীবন চরম নিরাপত্তাহীনতায় আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি দাবি করেন, খালেদা জিয়ার জন্য গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের ছাড়পত্র ছাড়াই তাকে কারাগারে নেয়া হয়েছে।
অবিলম্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিশ্চিত করারও দাবি জানান রিজভী। রিজভী বলেন, তার (খালেদা জিয়া) ছাড়পত্রে জোর করে স্বাক্ষর করানো হয়েছে পিজির চিকিৎসক নন এমন একজন শিক্ষার্থী-চিকিৎসক দিয়ে। এমনকি তাকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেয়া হয়েছে, তার মেডিক্যাল বোর্ডের চিকিৎসকরা তা জানেনও না। তার ওপর নানামুখী চাপেরই এটি একটি অংশ। সরকার নিজ উদ্দেশ্য সাধনে বেগম জিয়ার ওপর নিষ্ঠুর অমানবিক আচরণের মাত্রা দিন দিন বাড়িয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হওয়ার আগেই আকস্মিকভাবে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা একতরফা নির্বাচনের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত। সব বিরোধী দলের দাবি ছিল মাঠ সমতল এবং সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশ নিশ্চিত করে তফসিল ঘোষণা। এমনকি পর্যাপ্ত সময়ও রয়েছে কমিশনের হাতে। রাজনৈতিক দলগুলোর অনুরোধে নির্বাচনের পিছিয়ে দিলে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটতো না।
রাজশাহীতে জনসভাকে কেন্দ্র কর আশপাশের জেলাগুলোতে গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী। তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীরা যেন সমাবেশে যোগ দিতে না পারে সেজন্য শহরে ঢোকার বিভিন্ন পয়েন্টে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে কম্বিং অভিযান চলছে। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের বিপরীত এসব কর্মকাণ্ডই চলছে। গতকাল সিইসি বলেছেন, নির্বাচনের ভূমি সমতল থাকবে। নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, হয়রানি, সমাবেশে বাধা প্রদানকে কী সমতল ভূমি বলে? রাজনৈতিক ময়দান সম্পূর্ণভাবে সরকারের অনুকূলে সমতল রাখার যাবতীয় বন্দোবস্ত করছে নির্বাচন কমিশন। সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, যে কারাগার অন্যের জন্য তৈরি করা হয় সেই কারাগারে নিজেদের ঢুকতে হয়, এটাকেই বলে প্রকৃতির প্রতিশোধ। নিজের খোঁড়া গর্তে নিজেদেরই পড়তে হয়, এ বিষয়টি ভাবার জন্যও ক্ষমতাসীনদের অনুরোধ করছি। স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আওয়ামী লীগ একসঙ্গে চলতে পারে না বলেও উল্লেখ করে রিজভী বলেন, অবিলম্বে দেশনেত্রীর মুক্তিসহ সব রাজবন্দিকে মুক্তি দিয়ে দেশের সংকট সমাধান করুন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফা দাবি মেনে নিন। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ও প্রচারে সবার সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে সহায়তা করুন। রিজভী আরও বলেন, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা পণ্ড করে দিয়েছে পুলিশ। সেখান থেকে পুলিশ অনুষ্ঠানের মাইকসহ অন্যান্য জিনিসপত্র নিয়ে যায়। তারা সেখান থেকে যুবদল কেন্দ্রীয় নেতা জিএস বাবুলসহ ১৮ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বেগম সেলিমা রহমান, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ।