এশিয়ান বাংলা, রাজশাহী : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে নির্যাতন ও পরিবারের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা ও স্থানীয় এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে মেস থেকে ডেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে তাকে নির্যাতন করা হয়। পরে মুক্তিপণ হিসেবে তার পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। ঘটনা জানাজানির পর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সহায়তায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়। ভুক্তভোগীকে টাকা ফিরিয়ে দেয়ারও আশ্বাস দেয়া হয়।
ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থীর নাম ওমর ফারুক। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও। অপরদিকে, জড়িতরা হলেন একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাঈম।
সে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডী এলাকার বাসিন্দা। অপরজন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও ফার্সি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শাফিউর রহমান শাফি।
ওমর ফারুক বলেন, ‘গত দুদিন থেকে নাঈম ভাই আমাকে এক বড় ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করাবে বলে ডাকছিলেন। পরীক্ষা থাকায় আসতে পারিনি। এদিন তার সঙ্গে গেলে সে আমাকে সোহরাওয়ার্দী হলের ১৯১ নম্বর কক্ষে শাফির কাছে নিয়ে যায়। এ সময় তারা আমাকে বেয়াদব বলে মারধর ও হুমকিধামকি দিতে থাকে। একপর্যায়ে আমার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ঢুকে শিবিরের পেজে লাইক দিয়ে আমাকে শিবির বলে দাবি করে। আমি অস্বীকার করলে তারা আমাকে চড়থাপ্পড় ও লোহার পাইপ দিয়ে মারতে থাকে। পরে ৫০ হাজার টাকা দিলে আমাকে ছেড়ে দেবে অন্যথায় শিবির বলে হাত-পা ভেঙে পুলিশে তুলে দেয়ার হুমকি দেয়। পরে তারা আমার পরিবারের কাছে ফোন করে টাকা চাইলে আমার বড় ভাই বিকাশের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা দিতে রাজি হয়। টাকা পেয়ে তারা আমাকে ছেড়ে দেয় এবং বিষয়টি কাউকে জানালে আমাকে দেখে নেবে বলেও হুমকি দেয়। পরে আমি বিষয়টি আমার জেলা সমিতির সভাপতিকে জানাই। ঘটনাটি জানতে পেরে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া ও সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু রাতেই তাদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এসময় ঘটনার সঙ্গে জড়িত নাঈম উপস্থিত হয়নি। পরে জড়িতদের কাছ থেকে টাকা তুলে শুক্রবার রাত ৮টার মধ্যে ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দেন তারা।’
বিষয়টি স্বীকার করে শাফি বলেন, ‘ফারুকের গতিবিধি ও আচরণ সন্দেহজনক হওয়ায় আমরা তাকে শিবির সন্দেহে আটক করি। তবে টাকা নেয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নই। টাকা নাঈম নিয়েছে।’ এ বিষয়ে নাঈমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
সোহানুর রহমান বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরকে বিষয়টি জানাই। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে মধ্যরাত হয়ে গেলেও প্রক্টর কোনো ব্যবস্থা নেননি।’
তবে প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছে দাবি করলেও ঘটনাস্থলে কোনো পুলিশকে দেখা যায়নি। তিনি বলেন, ঘটনা শোনার পর আমি পুলিশকে জানিয়েছি। পরে শুনেছি ছাত্রলীগ বিষয়টি সমাধান করেছে।’
জানতে চাইলে গোলাম কিবরিয়া ও ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘বিষয়টি শোনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা হলে গিয়েছিলাম। টাকা আদায়ের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হতে পেরেছি। জড়িত দুজনের মধ্যে যার কাছে টাকা আছে, সে পলাতক। আমরা একজনকে ধরেছি। তার মাধ্যমে রাতের মধ্যেই ফারুককে টাকা ফিরিয়ে দেবো এবং ফারুকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবো।’ তারা বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধের জন্য আমরা শাফিকে শোকজ করেছি এবং আগামী সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলেছি।’