এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : আওয়ামী লীগ জোটবদ্ধভাবে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করতে চায় বলে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) জানিয়ে দিলেও কতটি দল এ প্রতীকে নির্বাচন করবে তা প্রকাশ করেনি। তবে বিএনপি তার নেতৃত্বাধীন জোটের ৮টি দল ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে ইসিকে। এ ৮টি দলে গণফোরামসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দলের নাম নেই। জাতীয় পার্টি তার নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোটের শরিক দলগুলো লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করবে বলে জানিয়ে দিয়েছে ইসিকে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া চিঠিটি ইসিতে নিয়ে যান।
এদিকে যুক্তফ্রন্ট ৪টি দল নিয়ে নির্বাচন করার কথা বললেও কোন প্রতীকে করবে তা উল্লেখ করেনি। তবে ফ্রন্ট জোটগত নির্বাচনে প্রতীকের ব্যবহার নিয়ে ইসির কাছে উল্টো ব্যাখ্যা চেয়েছে। এদিকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেন তার নিজের দল গণফোরামের প্যাডে পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, গণফোরাম নির্বাচন করলে দলের প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে করবে।
এ বিষয়ে রোববার সন্ধ্যায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা বলেছেন, এ পর্যন্ত আমার কাছে কোনো চিঠি আসেনি। তফসিল ঘোষণার ৩ দিনের মধ্যে জোটের শরিকরা কোন প্রতীকে নির্বাচন করবে সে বিষয়ে ইসিকে অবহিত করার বিধান রয়েছে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২ (আরপিও) এ। রোববার ছিল এ তথ্য জানানোর শেষ দিন।
আওয়ামী লীগ : রোববার বিকালে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ইসি সচিব হেলালুদ্দীনের কাছে চিঠি জমা দেয়। তবে কতটি দল জেটে রয়েছে তা প্রকাশ করা হয়নি। নওফেল বলেন, যারা নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করবে তাদের তালিকা ইসিতে জমা দিয়েছি। রাজনৈতিক দল এবং ইসির মধ্যেই এটা সীমিত। তিনি বলেন, দলগুলোর নাম প্রকাশ না করা আমাদের কৌশলের অংশ। তবে ইসিকে বলেছি, জোটে দলের সংখ্যা বাড়ল না কমল এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেহেতু ইসিকে জানিয়েছি, এ মুহূর্তে মন্তব্য করাটা সমীচীন নয়। জাতীয় পার্টি জোটে আছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি বলেছি এটি গোপনীয়। এ মুহূর্তে মন্তব্য করে আইনের ব্যত্যয় করব না। নির্বাচন কমিশন তা গ্রহণ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, আওয়ামী লীগ চিঠিতে ১১টি দলের নাম দিয়েছে। দলগুলো হচ্ছে- ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদ, গণতান্ত্রিক পার্টি, সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টি (জেপি-মঞ্জু), কমিউনিস্ট কেন্দ্র, গণআজাদী লীগ, ন্যাপ-মোজাফফর, গণতান্ত্রিক মজদুর পার্টি ও বাসদ (রেজা)।
বিএনপি : বিএনপির নেতৃত্বে যে ৮টি দল জোটবদ্ধ নির্বাচন করবে সেগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপি, খেলাফত মজলিস, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম। দলের মহাসচিবের স্বাক্ষরিত চিঠিতে সিইসিকে উদ্দেশ করে বলা হয়েছে- নিবন্ধিত এ ৮টি দল ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়বে। এতে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত মনোনয়ন সময়সীমার মধ্যে সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী আসনে যৌথভাবে মনোনীত প্রার্থীকে প্রতীক বরাদ্দের জন্য লিখিতভাবে অবহিত করা হবে। চিঠি পৌঁছে দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বিজন কান্তি সরকার।
জাসদ : নৌকা প্রতীকে নির্বাচনের কথা জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ। দলের সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সই করা চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৪ দলীয় জোটের শরিক দল হিসেবে জাসদ ও জোট মনোনীত অভিন্ন প্রার্থীদের আওয়ামী লীগের প্রতীক ‘নৌকা’ নিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবেন।
তরিকত ফেডারেশন : দলটির মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীর সই করা চিঠিতে বলা হয়, তরিকত ফেডারেশনের নির্বাচনী প্রতীক ‘ফুলের মালা’। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমরা ১৪ দলীয় জোটের সঙ্গে জোটগতভাবে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার নীতিগতভাবে সম্মত হয়েছি।
এলডিপি : ‘ধানের শীষ’ ও ‘ছাতা’ দুই প্রতীক চেয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি)। দলটি বলেছে, এলডিপির প্রার্থীদের কেউ কেউ দলের প্রতীক ‘ছাতা’ নিয়ে নির্বাচন করবেন। কয়েকজন প্রার্থী ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করবেন। এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম চিঠি পৌঁছে দিয়ে বলেন, দুই প্রতীকে নির্বাচন করার বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছি। আবেদন গ্রহণ করবে কিনা, সেটা ইসির ব্যাপার।
কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ : দলীয় প্রতীক ‘গামছা’ অথবা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক ব্যবহার করার কথা জানিয়েছে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান তালুকদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অবশ্য ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক কোনটি তা উল্লেখ করা হয়নি।
বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট : মোমবাতি নিয়ে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে দলটি। ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব এমএ মতিনের দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির নেতৃত্বে সম্মিলিত জাতীয় জোট গঠন করেছি। এ জোটের মাধ্যমে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে জোটের প্রধান শরিক দল হিসেবে মোমবাতি নিয়ে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
বাংলাদেশ জাতীয় ইসলামী জোট-বিএনআইএ : সিইসিকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়েছে, আমরা ১৩ দলীয় জোট গঠন করেছি। নিবন্ধন না পাওয়ায় অন্য দলের প্রতীকে নির্বাচন করব না। কলম প্রতীক দেয়ার অনুরোধ জোট চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোর্শেদ হাওলাদারের।
বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক পার্টি : আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে নির্বাচনের অনুমতি চেয়ে চিঠি দিয়েছে অনিবন্ধিত এ দলটি।
বিকল্পধারা বাংলাদেশ (একাংশ) : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে বিকল্পধারা বাংলাদেশ (একাংশ)। দলটির প্রেসিডেন্ট ড. নুরুল আমিন বেপারীর দেয়া চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
যুক্তফ্রন্ট : জোটভুক্ত দলগুলোর নির্বাচনে তাদের নিজ নিজ মার্কা ব্যবহার বা অভিন্ন মার্কা ব্যবহার নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছে যুক্তফ্রন্ট। বিকল্পধারা বাংলাদেশের সাংগঠনিক সংম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুক্তফ্রন্ট নেতা ব্যারিস্টার ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত ইসিকে দেয়া চিঠিতে জোটটি জানতে চেয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তফ্রন্ট চারটি নিবন্ধিত দলের সমন্বয়ে ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাবেক প্রেসিডেন্ট ও যুক্তফ্রন্টের চেয়ারম্যান অধ্যাপক একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যদি সব শরিক দল একই মার্কায় নির্বাচন করে অর্থাৎ ‘কুলা’, তাহলে অন্যান্য নিবন্ধিত শরিক দলের নিজস্ব মার্কার ওপর পরবর্তী নির্বাচনে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা। শরিক দলগুলো যদি নিজস্ব মার্কায় নির্বাচন করে তাহলে জোটভুক্ত মার্কার ওপর ভবিষ্যতে কোনো প্রভাব পড়বে কিনা? এ বিষয়ে ইসির পরিষ্কার ব্যাখ্যা চেয়েছে জোটটি।