এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ নিয়ে সকাল থেকেই ব্যস্ত নয়াপল্টনস্থ বিএনপি’র কার্যালয়। নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। মনোনয়ন ফরম কেনা ও জমা দিতে সমর্থকদের নিয়ে আসছেন সম্ভাব্য প্রাথীরা। এর মধ্যেই দুপুর পৌনে ১টার দিকে হঠাৎ পাল্টে যায় পরিস্থিতি। নেতাকর্মীদের রাস্তা থেকে সরাতে গেলে সংঘর্ষ বাধে পুলিশের সঙ্গে। ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলাকালে মাথায় হেলমেট পরা ১০ থেকে ১৫ যুবক পলওয়েল মার্কেটের সামনে থেকে রাস্তা পার হয়ে বিএনপি অফিসের সামনে সংঘর্ষে যোগ দেয়। তাদের হাতে ছিলো রড ও বাঁশের লাঠি। মাথায় হেলমেট থাকায় চেনা যাচ্ছিলো না তাদের। কারও কারও মুখে ছিল কালো কাপড় বাঁধা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই যুবকদের টার্গেটে পরিণত হয় পুলিশের দু’টি গাড়ি। হোটেল মিডওয়ের সামনে রাখা পুলিশের পিকআপ ভ্যানটিতে হামলা চালায় হেলমেট পার্টির সদস্যরা। রড ও লাঠি দিয়ে পিকআপটির গ্লাস ভাঙে। এমনকি পিকআপে উঠে লাফালাফি করতে দেখা গেছে কয়েকজনকে। শুরুতে কয়েকবার চেষ্টা করেও পিকআপে আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হয় হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা।
একপর্যায়ে পিকআপের ভেতরে দিয়াশলাই ও কাগজ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। ২৩১১ নম্বরের ইঞ্জিনের ওই পিকআপটি যখন জ্বলছিলো ওই সময়ে পাশে থাকা পুলিশের ৫৮৪৬ নম্বরের একটি কারে একই কায়দায় হামলা চালায় হেলমেট পরা যুবকরা। এ সময় পুলিশের ওই গাড়িতে এক যুবক দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। তার আগে ওই গাড়ি থেকে কিছু কাগজপত্র সরিয়ে নিতে দেখা যায় এক যুবককে। পাশে দাঁড়িয়ে সহযোগিতা করছিলো হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা। তখনও তারা লাঠি দিয়ে গাড়িতে আঘাত করছিলো। এই গাড়িটি ব্যবহার করতেন পুলিশের মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার। এ ঘটনার আগেই বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়ার শিকার হয়ে পুলিশের একাংশ কাকরাইলের দিকে পিছু হটে। আরেকাংশ ডিভাইডার পেরিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের উল্টোদিকে উৎসব কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন গলিতে চলে যায়। সেখান থেকেই রাবার বুলেট, টিয়ারশেল ও ছররা গুলি নিক্ষেপ করছিল পুলিশ। পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগের আগে একটি ব্যক্তিগত গাড়িতে হামলা চালাতে দেখা গেছে কালো হেলমেটধারী এক যুবককে। কেডস, জিন্সের প্যান্ট ও টি-শার্ট পরিহিত ওই যুবকের হাতে ছিলো কাঠ। হেলমেট পরিহিত এই যুবকরা অল্প সময়ের মধ্যেই গাড়ি দু’টি জ্বালিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের নেতাকর্মীরা বিএনপি কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করে।
এর আগে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলকারী স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছিলো হেলমেট বাহিনী। তাদের মাথায় ছিল হেলমেট এবং হাতে লাঠি, রড, জিআই পাইপ এবং রামদা ও চাপাতি। গত ৪ঠা আগস্ট ও ৫ই আগস্ট হেলমেট বাহিনী সশস্ত্র হামলা চালায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের ওপর। তাদের হামলায় আহত হয়েছিলেন কয়েকজন সাংবাদিকও। ৫ই আগস্ট সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় হামলা হয় সাংবাদিকদের ওপর। এ ঘটনার আলোকচিত্র জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক গণমাধ্যমের প্রকাশ হলেও হামলাকারীরা আজও গ্রেপ্তার হয়নি।