এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বহুল আলোচিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আজ বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে। তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোর সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ঘুমধুম সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে আজ দুপুরে ৩০টি পরিবারের ১৫০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন। বাংলাদেশের পক্ষে প্রস্তুত করা হয়েছে ট্রানজিট ক্যাম্প।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সদস্য মো. আবুল কালাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
একইভাবে মিয়ানমারের পক্ষ থেকেও সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে প্রত্যাবাসনে অন্তর্ভুক্ত ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গার তালিকা জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরকে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এর আগে বুধবার প্রশাসনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক শেষে আবুল কালাম জানান, সব প্রস্তুতি শেষ। বৃহস্পতিবারই প্রত্যাবাসন শুরু হবে।
৩০ পরিবারের ১৫০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে যাবে। দুপুরের দিকে এ কার্যক্রম শুরু হবে।
রোহিঙ্গাদের ঘুমধুমের ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে মিয়ানমারের প্রতিনিধিরা তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করবেন। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে চলবে।
৩০ অক্টোবর জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভায় রোহিঙ্গাদের পরিবারভিত্তিক তালিকা মিয়ানমার সরকারের হাতে তুলে দেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার। এতে প্রায় ২২ হাজার রোহিঙ্গার নামের তালিকা রয়েছে।
এসব তালিকা যাচাই-বাছাই করে মিয়ানমার প্রথম দফায় ৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়ার কথা দেয়।
যাদের মধ্য থেকে প্রথম দফায় ২ হাজার ২৬০ জনকে ফেরত নিচ্ছে মিয়ানমার। প্রতিদিন ১৫০ জন করে ১৫ দিন এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।
সরেজমিন উখিয়ার টিভি রিলে কেন্দ্র সংলগ্ন ঘুমধুম রাবার বাগান ঘুরে দেখা যায়, প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত রোহিঙ্গাদের রাখার জন্য নতুনভাবে সজ্জিত করা হয়েছে নবনির্মিত ট্রানজিট ক্যাম্প। ১২ ফুট দৈর্ঘ্য-প্রস্থের ৫৭টি ঘর প্রস্তুত। ৪০টির মতো টয়লেটসহ গভীর নলকূপ স্থাপনের কাজও শেষ হয়েছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্পর্কে ঘুমধুম ট্রানজিট ক্যাম্পে কথা হয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব রেজওয়ান আহমদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাউকে ফেরত পাঠানো হবে না।
প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত উখিয়ার থাইংখালী জামতলী জি-১৩নং ক্যাম্পে আশ্রিত হোছন আহাম্মদ (৪২) ও স্ত্রী মিনারা বেগম (৩৭) জানান, তারা মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত।
তবে তাদের একটি মাত্র দাবি- মিয়ানমারে বেশিদিন তাদের ট্রানজিট ক্যাম্পে রাখা যাবে না। নিজ নিজ বসতভিটায় ফেরত পাঠাতে হবে। নিরাপদ বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে।
একই দাবি (প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত) রোহিঙ্গা নারী সাদেকা বেগমের (২৩)। তিনি বলেন, আমাদের ফেরত নিতে হলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ঢাকাকে নেপিদোর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গা নাগরিকদের বসবাসের জন্য ভারত সরকার ২৮৫টি বাড়ি নির্মাণ করে দিয়েছে।
আর চীন সরকার ১ হাজার বাড়ির কাঠামো পাঠিয়েছে, যেগুলো সংযোগ করলেই পূর্ণ বাড়িতে রূপ নেবে।
এদিকে সীমান্তের শূন্যরেখায় যেসব রোহিঙ্গা বসবাস করছেন, তাদের ফিরিয়ে নেয়ার কাজও দ্রুত শুরু হচ্ছে।
উল্লেখ্য, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নৃশংসতার মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।
তারও আগে একই কারণে আরও ৪ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। সব মিলে বর্তমানে ১১ লাখের অধিক রোহিঙ্গার বসবাস উখিয়া-টেকনাফে।