এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণার পরবর্তী সময়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছে বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি শুক্রবার সকালে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে পৌঁছে দেন দলটির কেন্দ্রীয় মামলা ও তথ্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন খান। গত ৮ই নভেম্বর নির্বাচনের তফসিলের পর সারা দেশে ৪৭২ জন নেতাকর্মীকে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে চিঠিতে দাবি করা হয়। নয়া পল্টনে মনোনয়ন ফরম বিক্রির কার্যক্রমের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোকে সাজানো দাবি করা হয়েছে চিঠিতে। নাম-পরিচয়সহ গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের একটি তালিকাও চিঠির সঙ্গে দেয়া হয়। পরবর্তীতে আরো তালিকা দেয়া হবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে উদ্দেশ্য করে লেখা চিঠিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেছেন, বিএনপির পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারসহ নিঃশর্ত মুক্তি দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আপনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
মঙ্গলবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে মনোনয়ন কার্যক্রম চলার মধ্যেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতাকর্মীরা। সে সময় পুলিশের দুটি গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
ওই ঘটনায় পুলিশ পল্টন থানায় তিনটি মামলা করে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরীসহ ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে ৩৮ জনকে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, রুহুল কবির রিজভী, আফরোজা আব্বাস, নবী উল্লাহ নবী, আকতারুজ্জামান ও কফিল উদ্দিনসহ সে সময় দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের আসামি করা হয়েছে এসব মামলায়। বিএনপি মহাসচিবের চিঠিতে সিইসিকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, এ ধরনের গ্রেপ্তার ও মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এতে আপনাদের নিরপেক্ষতা নিয়েও জনগণের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুলের চিঠিতে পুলিশের বিরুদ্ধে নির্বাচনী ফরম ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগও আনা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চার দিন ধরে নয়া পল্টনের আশপাশে যত লিঙ্ক রোড আছে সেখানে পাহারা বসিয়ে বিএনপি কার্যালয়ের দিকে আগমন ও প্রস্থানরত নেতাকর্মীদের তল্লাশি করছে। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মনোনয়ন ফরম কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলেছে। বিএনপির চিঠিতে বলা হয়, তফসিল হওয়ার পর থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সমান সুযোগ তৈরি হওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছে। সেই সঙ্গে সমান সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে ইসির সক্ষমতা নিয়েও দলগুলো প্রশ্ন তুলছে। গ্রেপ্তারকৃতদের তালিকা জমা দেয়ার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় মামলা তথ্য সংগ্রহকারী কর্মকর্তা মো. সালাহউদ্দিন খান সাংবাদিকদের বলেন, তফসিল পরবর্তী সময়ে ৪৭২ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ সময় বিভিন্ন থানায় ৫টি এজাহার পাওয়া গেছে। কমিশন থেকে বলা হয়েছিল, তফসিল পরবর্তী সময়ে কাউকে গ্রেপ্তার করা হবে না, কিন্তু করা হয়েছে। সেই তালিকা জমা দিলাম। প্রসঙ্গত, গত বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টকে নির্বাচন কমিশন বলেছিল, তফসিলের পর যদি নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে নাম-পদবিসহ সেটার তালিকা দেয়ার জন্য। তালিকা দেখে হয়রানিমূলকভাবে মামলা বা গ্রেপ্তার করা হলে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিল ইসি। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ইসিতে তফসিলের পর গ্রেপ্তার হওয়া নেতাকর্মীদের নাম-পদবিসহ তালিকা জমা দিলো বিএনপি। ৮ই নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। পুনঃতফসিল অনুযায়ী ভোট হবে ৩০শে ডিসেম্বর।