এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের প্রতি ভারতের বিশেষ সমর্থন নেই। দিল্লি মনে করে এ দেশের মানুষ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বুঝতে পুরোপুরিভাবে সক্ষম। জনগণই ঠিক করবে তারা কাকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। কোন দল বা জোটকে তারা ভোট দেবে এটি বাংলাদেশের ভোটারদের সিদ্ধান্ত। আর নির্বাচন একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। দিল্লির তরফে প্রায় প্রতিদিনই এমন বার্তা স্পষ্ট করা হচ্ছে।
ভোটের দিন যত ঘনিয়ে আসছে প্রভাবশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক চ্যানেলে সেই বার্তা বা ম্যাসেজ ততই খোলাসা করা হচ্ছে। গতকাল সচিবালয়ে ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায় ভারত।
ভারত বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা চায় কিনা জানতে চাইলে শাসক দলের সেক্রেটারী বলেন, যদি দেশের জনগণ আমাদের ভোট না দেয়, তাহলে ভারত কীভাবে আমাদের দলের বিজয় নিশ্চিত করবে। কোনো বিদেশি দেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। আমি মনে করি, ভারত কখনো আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। সংশ্লিষ্টরা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে জামায়াত ছাড়া সব রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। অন্য কূটনীতিকরাও নির্বাচন নিয়ে সরকার ও বিরোধীদের মনোভাব এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টায় রয়েছে।
জামায়াতের সঙ্গে দিল্লির কোন রকম সম্পর্ক নেই জানিয়ে মঙ্গলবারও গণমাধ্যমকে বলেন ভারতীয় এক কূটনীতিক। নাম উল্লেখ না করে ওই কূটনীতিকের বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম বলছে- নির্বাচনের আগে কূটনীতিকরা পরিস্থিতির বিষয়ে ধারণা নিতে বিভিন্ন দলের সঙ্গে বৈঠক করেন। এটি রুটিন ওয়ার্ক। গত ১৫ই নভেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কূটনৈতিক ব্রিফিং এবং গত সোমবার বিকল্পধারার সভাপতি সাবেক প্রেসিডেন্ট এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর আমন্ত্রণে তার বাসায় যান ভারতীয় হাই কমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। দুটি অনুষ্ঠানেই তিনি বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। বি চৌধুরীর বাসায় বৈঠক শেষে ভারতীয় দূত খোলাখুলিভাবেই বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের কোন সম্পৃক্ততা নেই। এটা বাংলাদেশের জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের বিষয়।’ ২০১৪ সালের বহুল আলোচিত ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন প্রশ্নে ভারতের একটা অবস্থান ছিল।
১৫৩ আসনে কোন প্রতিদ্বন্ধিতা না হওয়া নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়া প্রশ্ন তুললেও ‘গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতার জন্য’ এতে সমর্থন ছিল ভারতের। কিন্তু এবার বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হোক এবং গণতান্ত্রিক সব দল তাতে অংশ নিক, এটাই দেখতে চায় ভারত। আগেরবারের মতো এবারের নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হোক- সেটি চায় না দিল্লি। সাউথ ব্লক সূত্রে এমন সংবাদ ছাপা হয়েছে ক’দিন আগেই। সেখানে বলা হয়েছে আসন্ন ভোট নিয়ে বাংলাদেশের সর্বস্তরে উৎসাহ-উদ্দীপনা ও অংশগ্রহণে রাজনৈতিক দলগুলোর আগ্রহ ভারত লক্ষ্য করছে। ভারতের উৎফুল্য হওয়ার এটা অন্যতম প্রধান কারণ। ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার সে কথা জানিয়েছেনও। বলেছেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে যাচ্ছে দেখে ভারত আনন্দিত। দিল্লির বিদেশ মন্ত্রক মনে করে সংবিধান অনুযায়ী ঠিক সময়েই ভোট হবে এবং সেটি হবে অংশগ্রহণমূলক। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ধারাও অব্যাহত থাকবে।