এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত চীনের কনস্যুলেটে সশস্ত্র হামলায় দুই পুলিশ সদস্যসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো একজন নিরাপত্তা কর্মী। স্থানীয় পুলিশের বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল-জাজিরা। শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে নয়টার দিকে করাচির ক্লিফটন এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ সময় গোলাগুলিতে তিন হামলাকারীই নিহত হয়েছে বলে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এ ঘটনায় কোনো চীনা নাগরিক হতাহত হয়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
খবরে বলা হয়, তিনজন বন্দুকধারী কনস্যুলেটের মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা করলে তল্লাশি চৌকিতে নিরাপত্তা কর্মীরা তাদের বাধা দেন। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, এ সময় একটি বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। স্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলোর সংবাদে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে।
ঘটনার পর কনস্যুলেট এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পুরো এলাকা ঘেরাও করে রাখা হয়। বিচ্ছিন্নতাবাদী দল বেলোচ লিবারেশন আর্মির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে হামলার দায় শিকার করা হয়েছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, কনস্যুলেটে সর্বোমোট ২১ জন কর্মরত ছিলেন। তারা প্রত্যেকেই সুরক্ষিত আছেন। তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চীনা কনস্যুলেটে এ হামলার নিন্দা জানিয়ে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন, এই হামলাটি পাকিস্তান ও চীনের অর্থনৈতিক, কৌশলগত সহযোগিতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ। এ সময় তিনি এ হামলার যথাযথ তদন্তের ও হামলার পেছনের কারণ উদঘাটনের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এ হামলা পাক-চীন সমপর্ক নষ্ট করতে পারবে না বলেও জানান তিনি। পাকিস্তানের প্রতিবেশী ও মিত্র রাষ্ট্র চীন হলো দেশটির সবচেয়ে বড় দাতা। পাকিস্তানের অবকাঠামোগত প্রকল্পে চীন বিশাল অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করছে।
সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহতের নেতৃত্বে নারী
চীনা কনস্যুলেটে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহতের অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন পাকিস্তান পুলিশে কর্মরত একজন নারী পুলিশ সদস্য। তিনি এসএসপি সুহাই আজিজ তালপুর। ২০১৩ সালে সিএসএস (দ্যা সেন্ট্রাল সুপিরিয়র সার্ভিস) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি পাকিস্তান পুলিশে যোগ দেন। এ খবর জানিয়েছে দ্যা এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে এই সুহাই আজিজ তালপুর। সুহাইয়ের বাবা-মা যখন তাকে স্কুলে ভর্তি করান তখন বেশির ভাগ আত্মীয়স্বজন তাদের বিদ্রূপ করতে শুরু করেন। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের মাত্রা এতটাই ছিল যে, তারা গ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী শহরে চলে যেতে বাধ্য হন। এমনটাই জানিয়েছেন সুহাই আজিজ তালপুর। তার বাবা আজিজ তালপুর একজন রাজনৈতিক কর্মী এবং লেখক। তিনি সব সময় মেয়েকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতেন। তিনি জানিয়েছেন, আমার আত্মীয়রা আমার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে, কারণ আমি চাইতাম সুহাই পড়াশুনা করুক। আর তারা ছিল শুধুমাত্র ধর্মীয় শিক্ষার পক্ষপাতী। কিন্তু আমি আমার মেয়েকে মানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করানোর প্রতিজ্ঞা করি।
এরপর সুহাই হায়দ্রাবাদের জুবাইদা গার্লস কলেজ থেকে বি.কম পাস করেন। পেশা হিসেবে পুলিশের চাকরি বেছে নেয়ার কারণ হিসেবে সুহাই বলেন, আমার পরিবার চাইতো আমি একজন একাউন্ট্যান্ট হই। কিন্তু আমার কাছে মনে হতো এই পেশা অনেক নির্জীব, এর কোনো সামাজিক মর্যাদা নেই। এরপরই আমি সিএসএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করি এবং প্রথমবারেই উত্তীর্ণ হই। এই কঠোর পরিশ্রম এবং উত্থানের সফলতার কৃতিত্ব সুহাই তার বাবা-মাকে দেন। তিনি বলেন, আমার বাবা-মা দুজনেই দেশপ্রেমিক। তাদের সন্তান হিসেবে তারা আমাকে সবসময় সিন্ধু কাব্য পড়ার প্রতি জোর দিতেন। এর ফলে সাহিত্য এবং ইতিহাসের বিষয়ে আগ্রহ আমার এতটাই বেড়ে যায় যে, আমি সিএসএস পরীক্ষায় এই দুই বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পাই। আমি এ অবস্থানে আসতে পেরেছি তার একমাত্র কারণ হলো, আমার বাবা-মা ভেবেছিলেন যে, তাদের মেয়ে শিক্ষিত হওয়ার যোগ্য। আর আজ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছেন এই সুহাই। এই অপারেশনে সুরক্ষিত হয়েছে কনস্যুলেট এরিয়া।