এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমইচে) ভর্তি রয়েছেন। সোমবার রাতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে সিএমইচে ভর্তি করা হয়। দলীয় সূত্র জানিয়েছে, শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়া হতে পারে। এদিকে পার্টি চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকায় দলীয় মনোনয়ন নিয়ে দিকভ্রান্ত অবস্থায় রয়েছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। পার্টির মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতারা মঙ্গলবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার হেলিকপ্টারে চড়ে পটুয়াখালী-১ এ নিজের বরিশাল-৬ এ স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্নার মনোনয়নপত্র জমা দেন। নিজ এলাকায় তিনি অবস্থান করায় দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা পার্টি চেয়ারম্যানের বনানীর কার্যালয়ে দিনভর অপেক্ষা করেও তার সাক্ষাৎ পাননি।
দলটির পক্ষ থেকে কতজন প্রার্থী মনোনয়ন দেয়া হয়েছে, মনোনীত প্রার্থীরা দল না জোটের হয়ে নির্বাচন করবেন এ বিষয়ে গতকাল দলের নীতি-নির্ধারকদের কেউই কিছু বলতে পারেননি।
বিকাল ৪টায় জাপা মহাসচিব বনানী কার্যালয়ে দলীয় মনোনয়নের অবশিষ্ট চিঠি বিতরণ করার কথা থাকলেও তিনি আসেননি। এদিকে পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়নের চিঠি না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন অনেক নেতা। তারা বলেন, বুধবার মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন। এই সময়ের মধ্যে আমরা এলাকায় গিয়ে মনোনয়ন ফরম কিভাবে জমা দিবো জানি না। কয়েকজন নেতা বলেন, মনোনয়ন ফরম যদি না দেয়া হয় তাহলে তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার অপশন খালি রয়েছে। পার্টির দপ্তর থেকে জানানো হয়, এরশাদ হাঁটু ব্যথাসহ শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছেন। তার শরীরে হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ায় তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এমনকি তিনি দাঁড়াতেও পারছেন না। যেকোনো সময় তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হতে পারে।
পার্টির কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে মহাসচিব এবং তার স্ত্রী তার নির্বাচনী এলাকায় গেছেন মনোনয়নপত্র দাখিল করতে। তিনি কাউকে দায়িত্ব না দিয়ে এমন কেন করছেন তার সঠিক কোনো জবাব দিতে পারেনি পার্টি অফিসে থাকা এরশাদের উপদেষ্টা রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি বলেন, জাপা মহাসচিব বিকালে এসে বাকি মনোনয়নপত্র বিতরণ করবেন। মনোনয়নের তালিকা নিয়ে গড়িমসি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা চেয়ারম্যান মহাসচিবকে দায়িত্ব দিয়েছেন কেবল তিনিই এর জবাব দিতে পারবেন। তাদের হাতে মহাসচিব যে কয়টি মনোনয়নপত্র রেখে গেছেন সে কয়টি কেবল সেসব নেতাদের হাতে তুলে দিয়েছেন।
ঠিক কতটি আসনে মনোনয়ন দেয়া হবে এ বিষয়ে পার্টির পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায় নি। কোনো তালিকা প্রকাশ করা হয় নি। সংখ্যা নিয়ে প্রথম থেকেই চলছে লুকোচুরি। এরই মধ্যে গণমাধ্যমে মহাজোট থেকে জাপা ৪৭টি আসন পেয়েছে এমন একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। তবে কোনো পক্ষই এই তালিকার সত্যতা নিশ্চিত করেনি। মহাজোটের মনোনয়ন তালিকায় নাম না থাকায় এমপি শওকত চৌধুরী সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার টাকা ফেরত দিয়ে স্যারকে (এরশাদ) এবং হাওলাদারকে সৈয়দপুর যেতে বলবেন। না হলে দেখে নিবো। তার জন্য আমি কি করি নাই? যখন যা বলেছেন তাই করেছি। এবার ৬০ লাখ টাকা দিয়েছি তারপরও আমাকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না। টাকা ফেরত না দিলে পুলিশও তাদের রক্ষা করতে পারবে না, আমি এটা বলে গেলাম। পরে তাকে ডেকে নিয়ে পার্টির মনোনয়ন ফরম দেয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের যদি মনোনয়ন দেয়া নাই হবে, তাহলে কেন এত টাকা নিলো। এত টাকাইবা খরচ করানো হলো কেন’। তিনি এ সময় টাকা ফেরত দাবি করেন। পার্টির চেয়ারম্যান তাহলে লক্ষাধিক লোকের সামনে কেন আমাকে পার্টির এবং মহাজোটের প্রার্থী ঘোষণা করলেন। গাজীপুর-৫ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী গাজী ওবায়দুল কাদের মজনু বলেন, নির্বাচন আসলে পার্টির চেয়ারম্যান যদি সিএমএইচে থাকেন তাহলে পার্টি চালাবে কে। আমাকে মনোনয়ন ফরম নেয়ার জন্য মহাসচিব আসতে বলেছেন। মহাসচিব আসবে সে অপেক্ষায় আছি। পার্টির মনোনয়নের চিঠি না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো। জাপা আমার কাছ থেকে ২২ হাজার টাকা নিয়ে এক প্যাকেট বিরানি ধরিয়ে দিয়েছে।
যশোর-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, জাতীয় পার্টির চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার কথা আমাকে জানিয়েছে। এ কারণে পার্টির মনোনয়ন ফরমের চিঠি নিতে এসেছি। পার্টির চিঠি না পেলে পরে দেখবো কি করা যায়।