এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : মাঝখানে হাসিমুখে অর্থমন্ত্রী। বামে ইনাম ও ডানে মোমেন বসা। তাদের দুজনের মুখেও মৃদু হাসি। এমন ঘটনা সিলেটের রাজনীতিতে তো দূরের কথা দেশের রাজনীতিতেও ঘটেনি। দুই মেরুর দুই প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমাদানের পরদিনই বসলেন এক সঙ্গে। বিষয়টি চাউর হওয়ার পর সিলেটে কানা-ঘুষার অন্ত নেই। রাজনীতিতে চলছে তোলপাড়। মোমেনের বাসায় কেন গেলেন ইনাম- এ প্রশ্ন ছড়িয়ে পড়ে মুখে মুখে। ড. একে আবদুল মোমেন হচ্ছেন মর্যাদাপূর্ণ সিলেট-১ আসনে মহাজোটের একক প্রার্থী।
আর ইনাম আহমদ চৌধুরী একই আসনের বিএনপির প্রার্থী। দু’জন দুই আদর্শের রাজনীতির ধারক। এই আসনে প্রার্থী হিসেবে তারা দুজন মুখোমুখি রয়েছেন। এই অবস্থায় মোমেনের বাসায় যাওয়া ইনাম আহমদ চৌধুরীকে ঘিরে জল্পনা শুরু হয়েছে। সমালোচকরাও হয়েছেন সরব।
সিলেট-১ আসনে ছোটো ভাই ড. একে আবদুল মোমেনের মনোনয়ন জমাদানে অংশ নিতে বুধবার দুপুরে সিলেটে আসেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। মনোনয়ন জমাদানে শরিক হয়ে তিনি চলে যান নগরীর হাফিজ কমপ্লেক্সস্থ নিজ বাসায়। সেখানে সন্ধ্যায় তিনি সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। অর্থমন্ত্রী আজ দুপুর পর্যন্ত সিলেটে অবস্থান করবেন। এরপর চলে যাবেন ঢাকায়। অর্থমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, সিলেট-১ আসনের বিএনপির মনোনীত প্রার্থী ইনাম আহমদ চৌধুরী সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের ধোপাদিঘীরপাড়স্থ হাফিজ কমপ্লেক্সস্থ বাসায়। এ সময় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এগিয়ে এসে তার সঙ্গে করমর্দন করেন। পরে সেখানে আসেন ড. একে আবদুল মোমেনও। তিনিও ইনাম আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে করমর্দন করেন। এরপর তারা অর্থমন্ত্রীর বাসার ড্রইংরুমে বসে প্রায় আধা ঘণ্টা আলাপ-আলোচনা করেন। আলোচনার সময় তিনজনকে বেশ হাসিখুশি দেখা যায়। এ সময় তারা রাজনীতি এবং সিলেট-১ আসনের মনোনয়ন নিয়েও আলোচনা করেন। এ সময় ইনাম আহমদ অর্থমন্ত্রীর কাছে তার জন্য দোয়া কামনা করেন।
অর্থমন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠজন ও মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা জাবেদ সিরাজ মানবজমিনকে জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের পরিবারের সঙ্গে ইনাম আহমদ চৌধুরীর পরিবারের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন ইনাম আহমদ চৌধুরী। প্রায় আধা ঘণ্টা তারা বসে আলাপ-আলোচনা করেন। এরপর ইনাম আহমদ চৌধুরী চলে আসেন। তবে এ সময় ইনাম আহমদ চৌধুরীর সঙ্গে কোনো বিএনপি নেতা উপস্থিত ছিলেন না। অর্থমন্ত্রীর বাসায়ও ছিলেন না আওয়ামী লীগের কেউও।
বাসায় গিয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার ব্যাপারে ইনাম আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘পারিবারিক সম্পর্ক ছাড়াও অর্থমন্ত্রী হচ্ছেন আমার বিশ্ববিদ্যালয় কর্মজীবনের জ্যেষ্ঠ সহকর্মী। এ কারণে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণ রাজনীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাই। আমরা সাংঘর্ষিক নই, সহাবস্থান যে চাই- সেটি এই সৌজন্য সাক্ষাতের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনকে দেখিয়ে দিতে চাই আমাদের মধ্যে এখনো আন্তরিকতা ও সহাবস্থান রয়েছে। আমার সেখানে যাওয়া রাজনীতির জন্য একটি বড় বার্তা। সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির রাজনীতি সিলেট থেকে শুরু হোক- এটাই এখন বড় চাওয়া বলে মন্তব্য করেন তিনি।’