এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদলে আগ্রহী নয় নির্বাচন কমিশন। তবে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে মাঠ পর্যায়ের এসব কর্মকর্তাদের পেশাদারিত্বের ওপর নজর রাখবে কমিশন। গতকাল শুক্রবার নির্বাচন কমিশন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে প্রশাসনে রদবদলের আপাতত কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। আমরা কর্মকর্তাদের পেশাদারির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রশাসনের কোন পদে কে কাজ করলো, সে বিষয়টিকে আমরা বড় করে দেখছি না। ব্যক্তি আমাদের কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নন। যেকোনো ব্যক্তিই যদি পেশাদারিত্ব নিয়ে কাজ করেন, তাহলে কোন লোকটা কাজ করলেন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) যিনি আছেন, নাম যা-ই হোক, ব্যক্তি যে-ই হোক না কেন উনার পেশাদারি যদি ঠিক রাখেন, তাহলে নির্বাচনে তার ওপর প্রভাবটা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে। যার যার জায়গা থেকে পেশাদারিত্ব নিয়েই কাজ করবেন- সেটাই আমরা দেখবো, আমরা ওই পেশাদারির পেশাদারিত্বের জায়গাটাকে ঠিক করতে চাই। পুরো প্রশাসনকে উলট-পালট করে পেশাদারিত্ব ঠিক করা যাবে না বলেও মনে করেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় বাজেট, সময় ও অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখেই নির্বাচনের আগে ব্যাপক রদবদলে গুরুত্ব দিচ্ছে না কমিশন। তবে কোনো কর্মকর্তা পেশাদারির পরিচয় দিতে ব্যর্থ হলে ব্যক্তিগতভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে কমিশন। কোনো প্রার্থী বা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে কমিশন সে বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে রফিকুল ইসলাম বলেন, কমিশনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দলের অভিযোগ রয়েছে। তাই বলে কি প্রতিটি অভিযোগ নিয়ে কমিশনের দৌড়াতে হবে? ‘যেমন দাবি আছে সব ওসিকে পরিবর্তন করা, ইউএনও, ডিসিকে পরিবর্তন করা। এদের পরিবর্তন করতে যে বিশাল বাজেট লাগবে, সরকারের অন্যান্য কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়ে যাবে। আমরা কী এত সব কিছু করতে পারি! আমরা সরকার নই, নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকালে হোক আর যা-ই হোক, একটা সরকার বলবৎ আছে। সংবিধান অনুযায়ী সে সরকারের কাছে নির্বাহী ক্ষমতা ন্যস্ত আছে। উনাদের দায়িত্ব তো আমাদের পালন করার কথা নয়। তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় যদি কেউ প্রভাব বিস্তার করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। সে যদি সেক্রেটারিও হয়, আমরা ব্যবস্থা নেব, আইজিপি হলেও ব্যবস্থা নেব। নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করছে, এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য থাকলেই কেবল কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।
সম্প্রতি গণভবনে সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর একটি অনুষ্ঠান আয়োজন নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে রফিকুল ইসলাম বলেন, এতে আচরণবিধির লঙ্ঘন হয়েছে বলে আমি মনে করি না। কারণ, তিনি এখনো দেশের প্রধানমন্ত্রী। গণভবন উনার বাসভবন, নিজের বাসভবনে বসে তিনি যে কারো সঙ্গে দেখা করতেই পারেন। তবে, সরকারি বাসভবনে দলের নির্বাচনী প্রচারণার কাজে ব্যবহার করলে কমিশন তা দেখবে বলেও জানান রফিকুল ইসলাম।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কমিশন কোনো চাপে নেই উল্লেখ করে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে প্রশাসনের শেষ স্তর পর্যন্ত সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করাই এখন কমিশনের মূল চ্যালেঞ্জ। এমনকি এই ব্যবস্থাপনায় ভোটার, প্রার্থী ও পোলিং এজেন্টরাও রয়েছেন। তিনি বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে এত বিশাল জনগোষ্ঠী জড়িত, পুরো জনবলকে এক জায়গায় এনে একই সুরে, একইভাবে কাজ করানোটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয় নয় বরং প্রতিটি ছোটখাট বিষয়কেও গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে কমিশন।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টের অভিযোগের বিষয়ে অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, উনারা যে চিঠিপত্র দিয়েছেন, আমরা সেগুলো পর্যালোচনা করেছি। যেগুলোতে আমরা সন্তুষ্ট হয়েছি, সেগুলো আমলে নিয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিয়েছি। হুট করে আমাকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলা হলো ব্যবস্থা নিতে, প্রক্রিয়া ছাড়া তো এটা করা সম্ভব নয়।
দুজন প্রার্থীর মনোনয়ন জমা না নেয়ার বিষয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, ওই প্রার্থীদের সঙ্গে যদি কোনো ধরনের অনিয়ম করা হয়ে থাকে আইন অনুযায়ী কমিশনের হস্তক্ষেপে তারা প্রয়োজনে নির্বাচনের আগের দিনও প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন। কমিশন বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে বলেও জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নির্বাচনের ক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী এক শতাংশ ভোটার ভেরিফিকেশনের বিষয়টি আমলে নিয়েই তাদের মনোনয়ন জমা নেয়া হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেয়ার সুবিধায়, আগ্রহী ভোটারদের কাছে পোস্টাল ব্যবস্থায় ব্যালট পাঠানো হবে বলেও জানান রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্রক্রিয়াটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। তবে ভবিষ্যতে প্রবাসীদের ভোট দেয়ার প্রক্রিয়া আরো সহজ ও দ্রুততর করতে কমিশন কাজ করবে।