ওয়াহিদুজ্জামান, এশিয়ান বাংলা, ফ্রান্স : “তোমার কিসের তাড়া ছিলো অত? কেন তুমি সাত তাড়াতাড়ি এই গুলজার আড্ডা থেকে গুডবাই বলে চলে গেলে, কেন?
আমরা ক’জন আজো,তুমিহীন,বসি এখানেই….. তক্কে-গপ্পে,গানে-পানে,জমে ওঠে কিছু সন্ধ্যাবেলা।” এ কথাগুলো যেনো কারো একার নয়! নয় কোনো ব্যানার লিখন! এ যেনো মহিত আহমেদের সাথে কথোপকথন! প্রাণবন্ত আড্ডা! হাসিঠাট্টা। নাচ, গান, আবৃত্তি, কৌতুক,খুনসুঁটি, এটাসেটা……. এভাবেই যখন স্মরণসন্ধ্যা চলছিল। এর এক পর্যায়ে সঞ্চালক মুনির কাদের উপস্থাপন করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। দর্শকদের অনেকে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেন। সে এক বেদনাবিধুর পরিবেশ। এ জন্য অনুষ্ঠান খানিক থমকে যায়।
কিছুক্ষণ পর তারস্থলে সাইফুল ইসলাম সাময়িক পরিচালনা করেন। মহিত আহমেদের জীবনের বিভিন্ন দিক, তাকে হারানোর বেদনা, তার জীবন আলেখ্য, দর্শন, চালচলন, মেলামেশা, সংসারসহ নানাদিক স্মরণ শেষে ইহকাল ও পরকালের তার জন্য আমাদের করণীয় পর্যালোচনা করা হয়। সকলে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। তার পক্ষ হয়ে ক্ষমা চান এবং পরিবারের পাশে থাকার কথা বলেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় প্যারিসে এভাবেই উপস্থাপক, অভিনেতা ও চিত্রশিল্পী মুহিত আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। সামাজিক – সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘অক্ষর’ এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মহিত আহমেদকে নিবেদিত শোকগাঁথা কবিতা আবৃত্তি ও স্মৃতিকথার মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করেন- মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদের সভাপতি- জামিরুল ইসলাম মিয়া, চিত্রশিল্পী শাহাদাত হোসেন, অভিনেতা গিয়াস বাবু, সাংস্কৃতিক কর্মী অলকা বড়ুয়া, চিত্রনির্মাতা প্রকাশ রায়, কবি মোস্তফা জামান, আরিফ হাসান, ছড়াশিল্পী লোকমান আহমেদ আপন, নারীনেত্রী তৌফিকা শাহেদ, উদীচী সভাপতি কিরণময় মণ্ডল, সাংস্কৃতিক কর্মী খালেদ মাহমুদ, বিসিএফ এর সভাপতি মোহাম্মদ নূর, আবৃত্তিশিল্পী মোহাম্মদ গোলাম মোরশেদ, নজরুল অনুরাগী খোরশেদ আলম পাটোয়ারী, কবি রেজাউল হায়দার চৌধুরী , সাংস্কৃতিক কর্মী অয়ন শাহ পরান, কবি বদরুজ্জামান জামান, পুঁথিশিল্পী কাব্য কামরুল, কবি আবু যুবায়ের, ওয়াহিদুজ্জামান, সাংস্কৃতিক কর্মী রাহুল চৌধুরী, সংগীতশিল্পী সুমা দাস, আবৃত্তিশিল্পী সাইফুল ইসলাম এবং প্রয়াত মহিত আহমেদের সহধর্মিণী ফিরোজা মমতাজ মহিত প্রমুখ ।তাঁকে স্মরণ করে অনেকে অঝোরে কেঁদেছেন। তাঁর স্মৃতিমন্থন করতে অনেকে আপ্লুত হয়েছেন। তারা বলেন, মহিত আহমেদ একাধারে চিত্রশিল্পী, অভিনেতা, উপস্থাপক ছাড়াও আরো অনেক গুনে গুণান্বিত ছিলেন। তিনি যে কাজগুলো করতেন তা খ্যাতির জন্য নয়; মানুষের জন্য করতেন। প্যারিসের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তিনি ছিলেন একজন নিবেদিত প্রাণ। প্যারিসের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে তাঁর হাজারো স্মৃতিছাপ। তারা বলেন, মহিত আহমদের অকাল প্রয়াণ মেনে নেয়া কষ্টকর হলেও মেনে নিতে হবে । কারণ মানুষ মৃত্যুকে সাথে নিয়েই জন্মগ্রহণ করে। তিনিও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না । মানুষের জন্মের স্বার্থকতা হল – মৃত্যুর পূর্বে তাঁর কর্মছাপ রেখে যাওয়া। আজকের এই অনুষ্ঠান প্রমাণ করে মহিত আহমেদ সেই ছাপ রেখে যেতে পেরেছেন। এই অল্প সময়ে আমাদেরকেও মানুষের কল্যাণে প্রত্যেকের অবস্থান থেকে কাজ করে যেতে হবে। মহিতের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করতে হবে। মহিত আজ অনন্তকালের অধিবাসী । তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। তাঁর এই প্রস্থান আমাদেরও অনিবার্য প্রস্থান স্মরণ করিয়ে দেয়। পরপারে সে যেনো উত্তীর্ণ হয় এই কামনা সকলের। উল্লেখ্য, মহিদ আহমেদ গতবছর ৯ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্যারিসের জর্জ পম্পিডু হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসনাত জাহান।