এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনী আসনভিত্তিক সমন্বয়ক কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এই কমিটি সারা দেশে ৩০০টি আসনে ধানের শীষ প্রতীকে ফ্রন্টের একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয়ক কমিটি ও ঢাকা মহানগর কমিটির যৌথসভা শেষে সমন্বয়ক কমিটির প্রধান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। পুরানা পল্টনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে এ যৌথসভা হয়। তিনি বলেন, আগামী ৮ই ডিসেম্বরের পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের একটি প্রতীকই ধানের শীষ দেয়া হবে। আমরা সবাই মিলে একজন প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে বাংলাদেশে একটি নতুন বিপ্লব ঘটাতে চাই।
শত প্রতিকূলতার মধ্যে আমরা আমাদের বিজয় ছিনিয়ে আনতে চাই। এজন্য একক প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে সারা দেশে আসনভিত্তিক ফ্রন্টের সমন্বয়ক কমিটি গঠনের জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
প্রতিটি সংসদীয় আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয় কমিটি হবে। এই সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট হবে।
ঢাকা শহরের প্রত্যেকটি অলিগলি-পাড়াতে ও সারা দেশে সংসদীয় আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে ধানের শীষে ভোট পরিচালনা হবে। বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগেই এই কমিটি গঠন করা হবে। প্রতিটি জেলায় এ বিষয়ে আমরা আসনভিত্তিক দ্রুত কমিটি করতে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। প্রতিটি জেলার দায়িত্বশীল নেতারা অলরেডি কাজ শুরু করে দিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রতীক একটাই- ধানের শীষ। তাই এখানে বিভেদ সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। যেখানে যে ব্যক্তি উপযুক্ত, রাজনৈতিক অবস্থান যার শক্ত, তিনিই হবেন সমন্বয় কমিটির প্রধান। তিনি বলেন, এবার ভোটের স্লোগান হচ্ছে, ‘আপনার একটা ভোটে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি হতে পারে’। ‘আপনার একটি ভোটে দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসতে পারে’ এবং ‘পরিবর্তনের লক্ষ্যে ধানের শীষে ভোট দিন’।
আমরা বিশ্বাস করি, এই তিনটি স্লোগানকে নিয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে ইনশাআল্লাহ বাংলাদেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে মুক্তি পাবেই। বুলু বলেন, সারা দেশে ৭৮৬ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে- যা একটি নজিরবিহীন ঘটনা। এর মধ্যে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রয়েছেন ১৪১ জন। এটি একটি ন্যক্কারজনক ঘটনা। সমস্ত ব্যাংক আজ আওয়ামী-লুটেরাদের দখলে। ব্যাংকের মালিক তারা। তাদের কোনো প্রার্থী আর্থিক ঋণ খেলাপির কারণে বাতিল হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। কিন্তু এসএম কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়ার মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ক্রেডিট কার্ডের সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার ঋণ রিনিউ করা হয়নি বলে। খুলনার অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মনা একজনের গ্যারান্টার ছিলেন, টাকাও পরিশোধ করে দিয়েছেন; তারপরও তার মনোনয়ন বাতিল করে দিয়েছেন। আবার অনেকের ৬-৭ কোটি টাকা গ্যাস বিল বাকি থাকার পরও তাদের মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করেছেন।
বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দেশে ন্যূনতম লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। তার ওপর বিতর্কিত এসপি- যিনি আমাদের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর নৃশংসভাবে হামলা করেছিল, মারধর করেছিল, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যার ন্যক্কারজনক পক্ষপাতিত্বের কারণে ধানের শীষের জনপ্রিয় প্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার হেরেছেন; তাকে এবার নারায়ণগঞ্জে পোস্টিং দেয়া হয়েছে। প্রতিদিনই প্রতিটি জেলায় ৬০, ৭০, ৮০ জন করে আমাদের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করছে পুলিশ। দায়ের হচ্ছে নতুন নতুন মামলা। আবার পুরনো মামলায় আমাদের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে বাংলাদেশের নির্বাচন কীভাবে হবে আমরা বলতে পারি না। তিনি বলেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পোলিং এজেন্টদের হুমকি দেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি আওয়ামী লীগের এমপি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা দখল করে আছেন। তারা ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছেন, নির্দেশনা দেয়ার চেষ্টা করছেন। বলছেন, সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে আপনাদের চাকরি থাকবে না। এই রকম বিভীষিকার মধ্যেও সবকিছু বিবেচনা করে আমাদের নেতাকর্মীদের বলতে চাই, আগামী ৮ তারিখের পরে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করে বাংলাদেশে নতুন বিপ্লব ঘটাতে হবে। প্রতিকূল অবস্থার মধ্য থেকেই আমাদের বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ফ্রন্টের সমন্বয় কমিটির সদস্য আবদুস সালামের সভাপতিত্বে বৈঠকে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান তালুকদার, গণফোরামের আওম শফিক উল্লাহ, রফিকুল ইসলাম পথিক, নাগরিক ঐক্যের মমিনুল ইসলাম, শহিদুল্লাহ কায়সার, জনদলের গোলাম মওলা চৌধুরী, বিকল্পধারার শাহ আহমেদ বাদল উপস্থিত ছিলেন।