এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন মার্কিন পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউট (এনডিআই) প্রতিনিধিদল। গুলশানের হোটেল আমারিতে গতকাল তারা প্রাতঃরাশ বৈঠকে মিলিত হন। রুদ্ধদ্বার বৈঠকটি দেড় ঘণ্টার বেশি সময় স্থায়ী হয়।
বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিস্থিতি, নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনের ভূমিকা, রাজনৈতিক অস্থিরতা বিষয়ে এনডিআই প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
বৈঠক শেষে ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন ও নির্বাচনের পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। নির্বাচনের কেমন পরিবেশ আছে তা তারা জানতে চেয়েছেন। আমরা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে আমাদের কথা বলেছি। আমরা মনে করি নির্বাচন কমিশন কারও আজ্ঞাবহ থাকতে পারে না। উল্লেখ্য, এনডিআইয়ের ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলে সিনিয়র এসোসিয়েট ও এশিয়া বিভাগের পরিচালক পিটার এম মানিকাস, প্রতিষ্ঠানের বোর্ড মেম্বার ও সাউথ এশিয়ার সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিক ইন্ডার ফার্দ, ম্যানেজার ফর গ্লোবাল ইলেকশন মাইকেল ম্যাগনালটি, এনডিআইয়ের এশিয়া রিজিওনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার এডাম নেলসন ও যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ফারানাজ ইস্পাহানী অংশ নেন।
এর আগে সোমবার একই জায়গায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদলও ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করে। সেখানেও তিনি নির্বাচনের পরিবেশ এবং ঐক্যফ্রন্টের অবস্থান তথ্য-উপাত্ত তাদের ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করেন।
ইসিতে এনডিআই: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে বৈঠক করেছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই)। গতকাল নির্বাচন ভবনে ওই বৈঠক হয়। বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কমিশনের অবস্থান জানতে চেয়েছে এনডিআই প্রতিনিধিদল। সেই সঙ্গে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ সম্পর্কেও ইসি থেকে অবগত হয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষক এ সংস্থাটি। ইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র মতে, গতকাল বিকালে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করে এনডিআই দল। বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে, কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম এবং ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া এনডিআইয়ের ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দলে এশিয়া বিষয়ক প্রোগ্রাম অফিসার মেইভি হিলান-হুউস্ট, সিনিয়র ইলেকশন অ্যাডভাইজার নিল নেভিটি, ডিরেক্টর অব পলিটিক্যাল পার্টি প্রোগ্রাম আইভান ডোহেরথি, ডেন্ডার ওমেন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি বিষয়ক ডিরেক্টর স্যানড্রা পিপিরাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে সব দল অংশগ্রহণ না করায় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেনি এনডিআই। এবার যুক্তরাষ্ট্রের তরফে এনডিআই ১২টি দলে ভাগ হয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পর্যবেক্ষণ করবে। গতকালের বৈঠকে সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নিয়ে এনডিআইয়ের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ইসির প্রথম আলোচনা হলো। বৈঠকে মূলত এনডিআইয়ের প্রতিনিধিরা দেশীয় পর্যবেক্ষক কিভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন, বিদেশিরা কি করবে, ইভিএম পদ্ধতির বিষয়ে কমিশনের অবস্থান কী এসব বিষয়ে জানতে চান।
নির্বাচন কমিশন এ সময়ে প্রতিনিধি দলটিকে বিষয়গুলোর বিস্তারিত অবহিত করে। কমিশন জানিয়েছে, শুরুতে ৪৮টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা থাকলেও বিভিন্ন কারণে এটি ৬টিতে নামিয়ে আনা হয়েছে। ইভিএম ব্যবহারের ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলের আসনগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ভোট পূর্ব রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখতে গত ৫-১১ই অক্টোবর এনডিআইয়ের পৃথক প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করে। সেই সফরের তারা প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচন কমিশন, নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচনী পর্যবেক্ষক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন কূটনৈতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই সফরে তার মূল্যায়ন ছিল উচ্চমাত্রার উত্তেজনা ও সংকোচিত রাজনৈতিক পরিবেশে বাংলাদেশের একাদশ সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। তবে ওই নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করতে বাংলাদেশে দীর্ঘ ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক মতবাদ, সক্রিয় গণমাধ্যম এবং ক্রমবর্ধমান তরুণ সক্রিয়তাবাদসহ এবং নাগরিক সমাজের মতো বেশ কিছু মৌলিক উপাদানও রয়েছে।
এনডিআই মনে করে- উচ্চমাত্রার রাজনৈতিক মেরুকরণের মধ্য দিয়ে হবে আগামী নির্বাচন। সেখানে ইভিএম নিয়ে উদ্বেগ থাকার বিষয়টিও স্থান পেয়েছিল। ফলে বেশ কিছু সুপারিশ ছিল এনডিআই’র। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- সরকারকে জনসম্মুখে অঙ্গীকার করতে হবে যে নির্বাচন কমিশনের কাজ কর্মে কোনো রকম হস্তক্ষেপ করবে না। রাজনৈতিক কর্মী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের কোনো ধরনের ভয় দেখানো চলবে না। এ নিয়ে সরকারের তরফে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি পরিষ্কার বার্তা দিতে হবে। নারীর অংশগ্রহণ বাধাগুলো দূর করতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। সার্বিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তারণ্যের আরো বেশি সম্পৃক্ততার সুপারিশ ছিল পূর্বের দেয়া এনডিআই’র মূল্যায়নে।