এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : মনোনয়ন বাছাইয়ে রিটার্নিং অফিসারদের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে বিব্রত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। মনোনয়ন বাতিলের কারণ স্পষ্ট না করা ও ভুল কারণ দেখানোর জন্য কমিশনাররা ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। গত শনিবার রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইসিতে আপিলের শুনানি শেষ হয়। ইসিতে মোট ৫৪২টি আপিল আবেদনের নিষ্পত্তি করে ইসি। এর মধ্যে ২৪৩ জন প্রার্থিতা ফেরত পান। রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্ত অস্পষ্ট থাকায় ইসির আপিল শুনানিতে বাতিল হয়ে যায় অনেক আবেদন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার মনোনয়ন বাতিল। বিভক্ত রায়ে বেগম জিয়ার মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করে ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, যে অভিযোগে রিটার্নিং অফিসাররা বেগম জিয়ার মনোনয়ন বাতিল করেছে তা প্রকৃতপক্ষে নির্বাচনী অপরাধকে নির্দেশ করে। খালেদার আইনজীবীদের যুক্তি ছিল, রিটার্নিং কর্মকর্তা ১২/১ (ঘ) অনুসারে মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন। এই ধারা নির্বাচনী অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত।
রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিলের আদেশে যা বলেছেন তা হলো- নির্বাচনসংক্রান্ত বিষয়ে যদি কেউ অপরাধ করেন, যেমন- মনোনয়নপত্র দাখিলের পর কেউ প্রচারণা শুরু করলো বা কাউকে মারধর করলো বা ভোটকেন্দ্রে কোনো বাধা সৃষ্টি করলো। অর্থাৎ, নির্বাচনের আচরণবিধি লঙ্ঘন করলো। তারা বলেন, মনোনয়নপত্র বাতিল আদেশে খালেদা জিয়ার সাজার কোনো প্রসঙ্গে বলা হয়নি। এখানে বলা হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়। খালেদা জিয়া বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। সেখান থেকে তিনি কীভাবে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করবেন? যে আদেশ রিটার্নিং কর্মকর্তারা দিয়েছেন, আইনের দৃষ্টিতে তা বৈধ নয়। ইসি সূত্র জানায়, খালেদার আপিল শুনানি নিয়ে দুই দফা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেন কমিশনাররা। রিটার্নিং অফিসারের এমন সিদ্ধান্তে হতবাক তারা। নিজেদের মধ্যে আলোচনায় এনিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেন এক কমিশনার। রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্ত সঠিক না থাকায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার খালেদার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
অপর কমিশনাররা খালেদা জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি হওয়ায় আপিল খারিজের পক্ষে রায় দেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে খালেদার মনোনয়ন গ্রহণের আবেদন নামঞ্জুর হয়। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে সামাল দিলেও রিটার্নিং অফিসারের এমন কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসি। প্রকাশ্য শুনানিতে রিটার্নিং অফিসারের এমন ভুল বিব্রত করেছে কমিশনকে। এজলাসে খালেদার আইনজীবীদের যুক্তির জবাব দিতে পারেন নি কোনো কমিশনার। কারণ, যে অভিযোগের ভিত্তিতে খালেদার মনোনয়ন বাতিল হওয়ার কথা ছিল সেই অভিযোগ রিটার্নিং অফিসারদের সিদ্ধান্তে আসে নি। ইসি সূত্রে জানা গেছে, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলেও বিতর্কিত সিদ্ধান্ত লিখেছেন রিটার্নিং অফিসাররা।
দৈব চয়নে কোনো কোনো ভোটারের সমর্থন মেলেনি তা লেখেন নি রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ফলে আপিলের সময় এসব ভোটারকে হাজির করতে পারেন নি প্রার্থীরা। যেসব রিটার্নিং অফিসার স্পষ্ট করে লিখেছেন তাদের সিদ্ধান্ত দেখে ভোটারদের হাজির করেছেন প্রার্থীরা। শুনানির শেষদিনে কমিশনাররা এ নিয়ে বিব্রত হন। শুনানিতে প্রার্থীর আইনজীবীরা ন্যায় বিচার না পাওয়ার অভিযোগ আনেন ইসির কাছে। শুনানি চলাকালে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদও বিষয়টি নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তার পাশে বসা নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।