এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : মাশরাফি বিন মর্তুজা হতে পারেন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট তারকা। কিন্তু পাকিস্তান ক্রিকেটের সুপারহিরো থেকে প্রধানমন্ত্রী হয়ে ওঠা ইমরান খানের মতো আরেকজন ইমরান খান হওয়ার বাসনা নেই তার। তিনি শুধু খেলাধুলা ও দাতব্য সেবায় অধিক কিছু করতে চান। বার্তা সংস্থা এএফপি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা জানিয়েছেন মাশরাফি।
আগামী ৩০ শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের টিকেটে একটি আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। মাফরাফি বলেন, সত্যি বলতে ইমরান খান যেখানে পৌঁছেছেন, মানুষ চাইলেই সব সময় সেখানে পৌঁছাতে পারে না। আমি যেহেতু একজন খেলোয়াড় তাই আমার বাসনা স্পোর্টসের জন্য কিছু করা। এখানে আমার আকাঙ্খা সীমিত।
আমি আমার ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করবো। দেখবো যদি ভাল কিছু করতে পারি।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা নড়াইলের ছেলে মাশরাফি। সেখানে তার দাতব্য সংস্থার নাম ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’। বাংলাদেশের এই ফাস্টবোলারকে ওই ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ নামেই ডাকা হয়। তিনি বিভিন্ন হাসপাতালে এম্বুলেন্স দান করেছেন। কৃষকদের মাঝে বিতরণ করেছেন উচ্চ মানের ধানের বীজ।
দক্ষিণ এশিয়ায় ক্রিকেটারদের জন্য রাজনীতিতে আসা নতুন কিছু নয়। এ অঞ্চলে ভীষণ জনপ্রিয় এই ক্রিকেট। কিন্তু মাশরাফি এখনও বাংলাদেশের হয়ে একদিনের খেলায় অধিনায়ক হিসেবে খেলছেন। তিনিই আগামী বছর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন বলেই মনে হচ্ছে।
এরই মধ্যে টুয়েন্টি২০ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে তিনি আর কোনো টেস্ট ম্যাচ খেলেন নি। তার টিমমেট সাকিব আল হাসানের জন্য ক্রিকেট পাগল ভক্তদের মনে বেশি জায়গা পেয়েছেন। সাকিব আল হাসান বিশ্বের অন্যতম অলরাউন্ডার। কিন্তু পিচে মাশরাফি জীবন-মরণ দিয়ে যে খেলা খেলেন এবং মাঠে যে দেশপ্রেম ফুটিয়ে তোলেন তা তাকে তার ভোটারদের কাছে আরো বেশি আদরের করে তুলতে পারে। তার হাঁটুতে এ পর্যন্ত সাতবার অপারেশন করানো হয়েছে। ক্রিকেটকে নির্দেশনা দিয়ে দলকে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার-ফাইনালে উন্নীত করেন তিনি। একজন অধিনায়ক হিসেবে এ জন্য তিনি ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছেন।
তা সত্ত্বেও যখন রাজনীতিতে ঢোকার ঘোষণা দিয়েছেন মাশরাফি তখন তার বহু ভক্ত প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেছেন। তার সামাজিক যোগাযোগ বিষয়ক ফ্যান পেজে অনেকে বাংলাদেশের নোংরা ও রাজনৈতিক অঙ্গনের নর্দমায় যোগ দেয়ার জন্য তার বিরোধিতা করে মন্তব্য করেছেন। অন্যরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দলে তার যোগ দেয়ার সমালোচনা করেছেন। অভিযোগ আছে, শেখ হাসিনার সরকার বিরোধীদের জেল দিচ্ছে এবং ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠরোধ করছে। কিন্তু মাশরাফি বলেছেন, তিনি পিছন ফিরে যাবেন না।
মাশরাফি বলেন, আমার অবস্থান থেকে বলছি, যেসব মানুষ ভিন্ন রাজনৈতিক দল করেন অথবা ভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্বাস ধারণ করেন, তাদের কারো প্রতি আমার কোনো রকম অশ্রদ্ধা নেই। এমনকি যেহেতু আমি সর্বান্তকরণে আমার দলকে সমর্থন করি, তাই তাদের ওপর আমার শতভাগ সমর্থন রয়েছে এবং থাকবে। আমি এটা বলছি এ কারণে যে, যাকে সমর্থন করতে চান প্রতিটি মানুষেরই তাকে সমর্থন করার অধিকার আছে। আমি বিরোধীদেরকে হৃদয় দিয়ে শ্রদ্ধা করি, সত্যিকার অর্থে আমি তাই করি।
মাশরাফি আরো বলেন, রাজনীতিবিদদের হওয়া উচিত গুণসম্পন্ন এবং ভাল মানুষ। আমি এর মাধ্যমে এটা বলছি না যে, এরই মধ্যে আমি তেমন একজন হয়ে গিয়েছি। তরুণরা আমাদের সামাজিক অবক্ষয় নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আমি মনে করি, তাদেরও রাজনীতিতে আসা উচিত।