এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ইশতেহার ঘোষণার আগে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নিজেদের আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতারা। দিয়েছিলেন লিখিত প্রস্তাব। সোমবার ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বহুল আলোচিত কোটা আন্দোলনের নেতাদের চাওয়া কতটা পূরণ হয়েছে এ ইশতেহারে। মানবজমিন-এর কাছে এ ব্যাপারে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তারা।
কোটা আন্দোলনের নেতা নূরুল হক নূর বলেছেন, কোটা সংস্কারের বিষয়টি সরকার আংশিক মেনে নিলেও সেখানে একটু ফাঁক-ফোকর রয়েছে। এক্ষেত্রে ঐক্যফ্রন্ট স্পষ্টভাবে বলেছে যে, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের ছাড়া আর কোনো কোটা ব্যবস্থা থাকবে না। এটি আমি মনে করি অত্যন্ত চমৎকার একটি ধারণা তারা আমাদেরকে দিয়েছেন। পুরো ইশতেহারে এই বিষয়গুলো আমার কাছে খুব ভালো লেগেছে।
তরুণদের অনেকগুলো দাবি-দাওয়া তারা মাথায় রেখেছে যেটা খুবই ভালো উদ্যোগ। এখানে আমাদের অনেকগুলো দাবি প্রায় হুবহু তাদের ইশতেহারে তুলে ধরেছে। মোটাদাগে বলতে গেলে ইশতেহারে তারা তরুণদের নিয়ে চমৎকার বিষয় উপস্থাপন করেছেন।
তবে পুরো ইশতেহারে একটি বিষয়ে আমি বিরোধিতা করবো। পুলিশ এবং সামরিক বাহিনী ব্যতীত সরকারি চাকরিতে প্রবেশের জন্য কোনো বয়সসীমা থাকবে না ব্যক্তিগতভাবে আমি এটা সমর্থন করি না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ৩০ থেকে ৩৫ এর মধ্যে সকলের জন্য একটি বয়সসীমা থাকতে হবে। এ বিষয়টি বাদ দিয়ে আমি মনে করি যে আমাদের দাবির অধিকাংশই এখানে প্রতিফলিত হয়েছে।
কোটা আন্দোলনের আরেক নেতা মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, আমরা সব সময় কোটা সংস্কার চেয়েছি। সুতরাং যেই ক্ষমতায় আসুক আমরা কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাইবো। আর আমরা কখনোই মুক্তিযোদ্ধা কোটারও বিরোধী নই। মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যারা এখনো পিছিয়ে আছেন তাদের সন্তানদের এগিয়ে নিতে কোটা সুবিধা দেয়া যায়। আর প্রতিবন্ধী কোটা অবশ্যই দরকার। এটা রাখা উচিত। এছাড়া জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্যও কোটা দরকার আছে। সব মিলিয়ে কোটা ব্যবস্থার একটি যৌক্তিক সংস্কার করা একটি সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। কোটা পদ্ধতির পুরোপুরি বাতিল কখনোই সর্বজন গ্রহণযোগ্য নয়।
এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩৫ বছর নির্ধারণ করা যায়। কিন্তু সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোনো বয়সসীমা থাকবে না- এটা আসলে তারুণ্যের দাবি ছিলো না। যে কারণে অনেকে বিষয়টা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারছে না। তারুণ্যের দাবি হলো- অভিন্ন বয়স।
বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেছেন, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে কোটার বিষয়টি তারা সুন্দরভাবে সুরাহা করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। কোটার বিষয়ে তাদের ইশতেহারের সঙ্গে আমি একমত। আমরা তরুণ সমাজের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের উদ্দেশেই আমাদের ইশতেহার দিয়েছিলাম। ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে আমরা আমাদের দাবিগুলোর মোটামুটি একটি প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি। এটা আমাদের জন্য খুবই ইতিবাচক। এবং এটাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু অভিন্ন বয়স সীমার কথা বলেছিলাম। বয়স সীমা তুলে দেয়া নয়। সেটা ৩২ থেকে ৩৫ বছর। এই দু’টোর মধ্যে কোনো একটি করলে আমাদের সবার জন্য ভালো হবে। আমাদের ৫ দফা দাবিতে এটা উল্লেখ করেছিলাম। পাশাপাশি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো তাদের ইশতেহারে আমাদের দাবি-দাওয়ার প্রতিফলন ঘটাবে। তবে ইশতেহারের মধ্যেই যেন আমাদের দাবিগুলো সীমাবদ্ধ না থাকে সে বিষয়টি তাদের মাথায় রাখতে হবে। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের আশায় ইশতেহারে আমাদের দাবিগুলোকে প্রাধান্য দিলেও পরবর্তীতে সেগুলো বাস্তবায়ন হয়নি।
কোটা আন্দোলনের নেতা মশিউর রহমান বলেন, অনগ্রসর জনগোষ্ঠী এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য কোটা ছাড়া আর কোনো কোটা থাকবে না- এটাকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এখানে অনগ্রসর বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে সেটা কিন্তু তারা স্পষ্ট করেনি। অনগ্রসর বলতে আমরা বুঝি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। তাই অনগ্রসর এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য সব মিলিয়ে ৫% কোটা রাখা যেতে পারে। রাষ্ট্রের প্রয়োজনে তারা যদি মনে করে মুক্তি যোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কোটা দেয়া দরকার তারা সেটা দিতে পারে। এবং সেটা আমাদের ৫ দফা দাবির আলোকে যদি ১০% এর মধ্যে রাখা হয় তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে চাকরিতে বয়স সীমা নিয়ে আমরা সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছি।