এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ভিসা না পাওয়ায় বাংলাদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করেছে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (আনফ্রেল)। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে ওই মিশনের বাংলাদেশে একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের কথা ছিল। যুক্তরাষ্ট্র ৩২ জন পর্যবেক্ষক পাঠাচ্ছে- জানিয়ে একটি বিশ্বাসযোগ্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ মিশন চালানোর মতো সময়ের মধ্যে তাদের পরিচয়পত্র (অ্যাক্রিডিটেশন) ও ভিসা প্রদান নিশ্চিতেও ঢাকার প্রতি অনুরোধ করেছিল ওয়াশিংটন।
নবনিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে দেখা করেও বিষয়টি অবহিত করেছিলেন। কিন্তু নির্বাচন দোরগোড়ায় এলেও (৯ দিন বাকি) আনফ্রেলের অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের ভিসা না হওয়ায় তারা বাংলাদেশে পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিলে বাধ্য হয়। অবশ্য যথাযথ সময়ে ভিসা না পাওয়ায় আনফ্রেলের মিশন বাতিলে বাধ্য হওয়ায় খবরে গভীর হতাশা ব্যক্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। স্টেট ডিপার্টমেন্টের ডেপুটি স্পোকসপারসন রবার্ট প্যালাদিনো গতকাল আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে এর বিস্তারিত তুলে ধরেন। আপকামিং ইলেকশন ইন বাংলাদেশ (বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন) শীর্ষক ওয়াশিংটনের বিবৃতিটি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস তাদের অফিসিয়্যাল ওয়েব সাইট এবং ফেসবুক পেজে (বঙ্গানুবাদ করে) প্রচার করে।
২১শে ডিসেম্বর ডেটলাইনে প্রচারিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়- এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (আনফ্রেল) এর অধিকাংশ আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষককে বাংলাদেশ সরকার একটি বিশ্বাসযোগ্য পর্যবেক্ষণ মিশন চালানোর মতো যথাযথ সময়ের মধ্যে পরিচয়পত্র ও ভিসা দিতে না পারায় যুক্তরাষ্ট্র হতাশ।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে ওই মিশনে অর্থায়ন করেছিল। যথাসময়ে পরিচয়পত্র ও ভিসা না পেয়ে আনফ্রেল তাদের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। মুখপাত্র প্যালাদিনো তার বিবৃতিতে বলেন, এবারের নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকের সংখ্যা কম থাকায় বাংলাদেশ সরকারকে স্থানীয় এনজিওগুলোর গঠন করা ‘ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপ’কে স্বীকৃতি দিতে হবে।
যাতে তারা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অত্যাবশ্যক কাজগুলো করতে পারেন। মুখপাত্র বলেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ মিশন না থাকায় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করতে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের (ইডব্লিউজি) সদস্য স্থানীয় এনজিওগুলোর জন্য পরিচয়পত্রসহ আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের জন্য এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে ইউএসএআইডির অর্থায়ন করা বেশ কয়েকটি এনজিও রয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের জন্য অবশ্যই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও অভিব্যক্তি প্রকাশের সুযোগ থাকতে হবে। একইসঙ্গে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকতে হবে, যাতে তারা নির্বাচনের সকল সংবাদ প্রচার করতে পারে। হুমকি, সহিংসতা ও হয়রানি ছাড়াই প্রত্যেকে যাতে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে- সেটি নিশ্চিত করতে হবে। বিবৃতিতে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতিকে স্বাগত জানিয়ে বলা হয়- ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে যেন শান্তিপূর্ণভাবে সবাই অংশ নিয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি অঙ্গীকার সমুন্নত রাখতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য, গত ২০ বছরের মধ্যে এবারের নির্বাচনে (ব্যতিক্রম ২০১৪’র ৫ই জানুয়ারি) সবচেয়ে কম মোট ১৬৭ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ইসিতে নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু ভিসা জটিলতায় বেশির ভাগই (নিবন্ধিতদের) ৩০শে ডিসেম্বরের ভোটের আগে ঢাকা আসতে পারছেন না। ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (ফেমবোসা), এ-ওয়েব, অ্যাসোসিয়েশন অব আফ্রিকান ইলেকশন অথরিটিস (এএইএ) নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইসির আমন্ত্রণ পেয়েছে। ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী ভারত, ভুটান ও মালদ্বীপের নির্বাচন পর্যবেক্ষক টিমও বিশেষ আমন্ত্রণের তালিকায় রয়েছে। ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ৩ জন প্রতিনিধি আসছেন, এটা প্রায় নিশ্চিত। তবে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক টিম পাঠাচ্ছে না, আগেই জানিয়ে দিয়েছে। এবার মিশন বাতিল করলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিয়োগ করা প্রতিষ্ঠান আনফ্রেল। নির্বাচন কমিশন সূত্র বলছে, তারা এখন ঢাকাস্থ ৫২টি কূটনৈতিক মিশন থেকে বিদেশি এবং লোকাল স্টাফ মিলে প্রায় ১০০ জনের করা পর্যবেক্ষণের আবেদন যাচাই-বাছাই করছেন।
বিদেশি সংস্থার লোকাল স্টাফদের ‘স্থানীয় পর্যবেক্ষক হিসেবে’ কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এর বাইরে ঢাকাস্থ ৪টি আন্তর্জাতিক সংস্থার ৩২ জন প্রতিনিধির পর্যবেক্ষক হিসাবে অনুমতির আবেদন ঝুলে আছে। তবে ওই তালিকায় বিদেশি এবং স্থানীয় স্টাফও রয়েছেন। স্মরণ করা যায়- বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতার জন্য ইসিকে দুই দফায় আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি অনুরোধ করেছে। বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে কেন আওয়ামী লীগের বাড়তি সতর্কতা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে কমিটির কো-চেয়ারম্যান এইচটি ইমাম বলেছিলেন, বিদেশিরা অনেক সময় সাংবাদিক সেজে আসে, হঠাৎ করেই বলে আমি পর্যবেক্ষক। এমন ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য ইসিকে সতর্ক থাকতে আমরা বলেছি। তার মতে, বিদেশিদেরও আচরণবিধি মানতে হবে। বাংলাদেশের আইন মেনে চলতে হবে। এটি আমাদের সার্বভৌমত্বের ব্যাপার।