এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছে দেশের বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, দেশবাসী একটি পরিবর্তন চাইছে । কিন্তু সরকার ও নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ নিয়েছে- ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন এক হয়ে গেছে। সিইসি বলছে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মার খাচ্ছেন। তরুণদের ভয়কে জয় করে দলে দলে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। গতকাল রাজধানীর পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) মিলনায়তনে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮: তরুণ, নারী ও সংখ্যালঘুদের কেন ভোট দেওয়া উচিত?’- শীর্ষক সেমিনারে তারা এসব কথা বলেন।
সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর উদ্যোগে এই সেমিনার হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. রওনক জাহান বলেন, এবার ভোট দেয়ার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও তা অতিক্রম করেই আমাদের ভোটকেন্দ্রে যেতে হবে। শুধু তরুণ, নারী ও সংখ্যালঘু তাদের ভোট দেয়া উচিত কেবল তা নয়, সবারই ভোট দেয়া উচিত। তিনি বলেন, তরুণরা শুধু নিজদের কথা চিন্তা করবেন না, তাদের সবাইকে নিয়েই চিন্তা করতে হবে। দেশ কীভাবে চলবে, তা নিয়ে তাদের ভাবতে হবে। দেশ স্বাধীনতার আগে আমরা এ রকম দেখিনি। এখন দুর্ভাগ্যের বিষয় তাদের মধ্যেও বিভক্ত লক্ষ্য করছি। তরুণরা রাজনৈতিক ভূমিকা রাখছে কিন্তু তা বিভিন্ন দলের দলীয় হয়ে। তারা রাজনৈতিক দলের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করছে। তিনি বলেন, তরুণদের স্বপ্ন থাকলে ভয়েস তুলতে হবে। কেউ ক্ষেত্র তৈরি করে দিবে না। আমেরিকার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, নারীদের উচিত কোন ইস্যুভিত্তিক কেন্দ্র করে ভোট প্রয়োগ করা। ক্ষমতা আসলে নারীদের জন্য কি করবে- রাজনৈতিক দলগুলো থেকে প্রতিশ্রুতি আদায় করা।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন সংখ্যালঘুদের উপরে বিভিন্ন জায়গায় হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে অনেক ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, আমাদের সচেতন হতে হবে। আস্থার জায়গা তৈরি করতে হবে। গত মঙ্গলবার বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের উপর হামলা সমর্থনযোগ্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে কমিশন দায়িত্ব পালন করছেন না উল্লেখ করে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশনের অব্যবস্থা এর আগে কখনও দেখা যায়নি। ইসি যদি সোজা হয়ে থাকতো, তাহলে আজ এই সমস্যা তৈরি হতো না। সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে ড. এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আর্মি আসলো কিছু করলো না, এটা বলে বিতর্কিত করা ঠিক না। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সেই কাজ করে যা তাকে করতে বলা হয়। এর বাইরে যায় না সেনাবাহিনী। তরুণদের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আমেরিকায় ১৮ বছর বয়সে ভোট দেয়ার সঙ্গে প্রার্থীও হতে পারে। বাংলাদেশে কেন এই বয়সের প্রার্থী হতে পারবে না। এর পরিবর্তন হওয়া দরকার।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, নির্বাচন কমিশন কারফিউ চালু করে দিয়েছে। দেশবাসী একটি পরিবর্তন চাইছে। অভিযোগ করে তিনি বলেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন পদক্ষেপ নিয়েছে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার দরকার নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন এক হয়ে গেছে। সিইসি বলছে, নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ আছে। অন্যদিকে বিরোধী দলের প্রার্থীরা মার খাচ্ছেন। নারীদের নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে ইশতেহারে উল্লেখ রয়েছে। ১৫ শতাংশ থেকে কমে ১০ শতাংশের কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতি দলগুলোতে প্রার্থীদের মধ্যে ২০ শতাংশ মনোনয়ন নারীদের দেয়ার বাধ্যমূলক তা ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারে উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, তরুণরা বলেছে এই রাষ্ট্রের মেরামত করা প্রয়োজন। সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক লোক মারা যাচ্ছে। বিচার বহির্ভূত হত্যা হচ্ছে। তিনি বলেন, সেনাবাহিনীকে টহল দিতে দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ভোটকেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে প্রত্যেক মানুষের মধ্যে সংশয় তৈরি হয়েছে। এখন সররাসরি প্রার্থীর উপরও হামলা হচ্ছে। সেনাবাহিনী নামার পরেও আওয়ামী লীগের লোকজন হামলা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। বিভিন্ন ভিডিও’র কথা তুলে ধরে আইনের এই শিক্ষক আরো বলেন, সরকারের সমর্থকরা ভোট দিতে যাবেন, অন্যরা ভোটকেন্দ্রে যাবেন না এমন ভিডিও আসছে। তিনি তরুণদের ভয়কে জয় করে দলে দলে ভোট দিতে যাওয়ার আহ্বান জানান।
ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন স্বউদ্যোগে কোনো কিছুতে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। প্রার্থী ও কর্মীদের উপর প্রতিদিনই হামলা হচ্ছে। হামলায় তরুণ, নারী কেউ বাদ যাচ্ছে না। যদি ইসি উদ্যোগ নিতো তাহলে কোনো কিছুই ঘটতো না। এর ফলে ইসি’র প্রতি অশ্রদ্ধা চলে আসে। ইসি তার দায়িত্ব পালন করুক- এটা প্রার্থনা নয়, দাবি।
ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় আছে। এবারের নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং। ইসি’র যে অবস্থা তা ইতিপূর্বে দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। একাদশ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক কম থাকবে।
সিজিএস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম আতাউর রহমানের সভাপতিত্বে এবং সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরো বক্তব্য রাখেন সাবেক- মন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া, ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক আহরার আহমেদ, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, আদিবাসী নেতা জঞ্জীব দ্রং, সিজিএস’র ভাইস প্রেসিডেন্ট ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, বিটিআরসি’র সাবেক চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বাংলাদেশ ইয়ুথ লিডারশিপ সেন্টার-এর প্রেসিডেন্ট ইজাজ আহমেদ।