এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : ৩০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর ঠিক চারদিন আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করেছে বিরোধী দলগুলো। এতেই তিক্ত বিভক্তির প্রতিফলন দেখা গেছে, যা সরকারি এজেন্সিগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতাকে খর্ব করেছে। বিরোধীদলীয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল অংশীদার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। তারা দাবি করছে, নির্বাচনী শিডিউল ঘোষণার পর থেকে তাদের ৯২০০ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেশটি এবার তীব্র রাজনৈতিক সহিংসতা দেখেছে, প্রধানত টার্গেট করা হচ্ছে বিরোধীদের। এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার এবং সহিংসতার জন্য তারা দায়ী করছে বিএনপিকে। গত সপ্তাহে একজন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদের মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই।
২২শে ডিসেম্বর প্রকাশিত এক রিপোর্টে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারবিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, গ্রেপ্তার ও অন্যান্য নিস্পেষণমূলক পদক্ষেপ আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখেছে। ১৯৯০-৯১ সময়কালে যখন গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় তখন থেকেই নির্বাচনী মৌসুম হয়ে উঠছে উত্তেজনাপূর্ণ। অতীতে বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন তারা ক্ষমতার মেয়াদ শেষেও পদত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনের জন্য গণ-আন্দোলন শুরু হয়। ২০০৬ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবাধায়ক সরকার নির্বাচন স্থগিত করে। ওই নির্বাচন চূড়ান্ত দফায় অনুষ্ঠিত হয় ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে। তারপর থেকেই ক্ষমতা ধরে আছেন শেখ হাসিনা।
এবার তিনি সরকারে দুর্দান্ত এক রেকর্ড গড়ে পুনঃনির্বাচিত হতে চাইছেন। গত ১০ বছরে অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। গত অর্থবছরে তা ৭.৮ ভাগে পৌঁছেছে। এ ছাড়া গত এক দশকে সামাজিক সূচকেও উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এসবের জন্য শেখ হাসিনার সরকার কৃতিত্ব দেখানোর পাশাপাশি ইসলামপন্থি উগ্রবাদীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিলেও তার সরকার কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে উঠছে বলে সমালোচিত হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা বিল পাস ও ঢাকায় ছাত্রদের বিক্ষোভে দমনপীড়নের ফলে সমালোচনা এসেছে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের থেকেও। অন্যদিকে এই আন্দোলনকে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবহারের চ্যানেল খুঁজছে বিরোধীরা। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে নির্বাচনে অযোগ্য হয়েছে বিএনপির নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এ অভিযোগে তিনি বর্তমানে কারাবন্দি। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমান সরকারের একজন মন্ত্রী ছিলেন বিখ্যাত আইনজীবী ড. কামাল হোসেন। বিরোধীদলীয় একটি ঐক্যে তাকে নেতৃত্বে এনেছে বিরোধীরা। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিরোধীদের মৌন জোট উদ্বেগের বিষয়। জামায়াতে ইসলামী ইসলামপন্থি দল এবং ২০১৩ সালে আদালতের একটি রায়ের পর তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। সহিংসতায় বিএনপির নেতাকর্মীরাও জড়িত। আওয়ামী লীগের জন্য এই নির্বাচন হওয়া উচিত সহিংসতার ইতিহাস ভাঙার একটি সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করা এবং তাদের পারফরমেন্সের ভিত্তিতে ম্যান্ডেট খোঁজা উচিত। কিন্তু বিরোধীদের বিরুদ্ধে তাদের ক্রমবর্ধমান শক্তি প্রয়োগের প্রবণতা ও তাদের নেতাকর্মীদের সহিংসতা এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।