এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জন্মের পর থেকে ২৮ দিন পর্যন্ত সময়কালকে নবজাতক পিরিয়ড ধরা হয়। এ সময়টি আপনার এবং আপনার শিশু উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ভালবাসা আর আদরের মাঝে তার সুস্থ-সুন্দর থাকা নিশ্চিত করতে, নিরাপদ রাখতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই।ওর নাজুক কোমল শরীর খুব সহজেই বিভিন্ন রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এছাড়া কাঁচা নাভির মাধ্যমে সামান্য অপরিচ্ছন্নতায় ইনফেকশনও হয়ে যেতে পারে।
আপনার ছোট্ট বাবুর ছোট্ট শরীরকে অসুখ থেকে দূরে রাখতে চাইলে তার শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। তাই এসব টিপস নিয়েই আমাদের এই আর্টিকেল।
জন্মমুহূর্তের পরপর:
হাসপাতালে বা ক্লিনিকে জন্মালে Operation Theatre এ শিশুর গা মুছিয়ে তাকে নরম কাপড়ে মুড়িয়ে দিতে হয়।পরিষ্কার নরম শুকনো কাপড়ে মুছে শিশুর মাথাসহ সমস্ত শরীর শুকাতে হয়। এক টুকরা বড় পরিষ্কার কাপড়ে শিশুকে জড়িয়ে নিয়ে প্রথমে মাথা তারপর গলা, কাঁধ, বুক ও পেট মুছতে হয়। এরপর পিঠ ও কোমর থেকে পায়ের পাতা অবধি। মোছা হলে কাপড়টি ফেলে অন্য আরেকটি নরম কাপড়ে মাথাসহ সমস্ত শরীর (মুখমন্ডল বাদে) জড়িয়ে নিন।
জন্মের সময় শিশু তার ত্বকে একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা-প্রাচীর নিয়ে জন্মায়। এটা হলো এমিওনিটিক ফ্লুইড। এর ওপর ভারনিক্স ক্যাসোসা নামে আরেকটি লেয়ার থাকে । এই পাতলা সাদাটে আবরণটি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ছয়-সাতদিনের মধ্যে এটি আপনা আপনি পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু ভুলেও ঘষে মেজে এটি তুলতে যাবেন না।
পরবর্তী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:
নবজাতকের শরীরের সবটুকুই পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি তবে কয়েকটি বিশেষ অঙ্গের আলাদা যত্ন প্রয়োজন। যেমন নাভি, দুপায়ের ফাঁক, চোখ, নাক ,কান ,নখ এবং জিহ্বা ইত্যাদি।
বাচ্চা জন্মের পর থেকেই তাকে জীবাণু সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিচের টিপসগুলো ফলো করে চলুন।
হাত ধুয়ে নিন
শিশুর সংস্পর্শে আসার আগে নিজের হাতটি সবসময় ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। ব্যবহার করতে পারেন জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ অথবা ইন্সট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
শিশুকে কেউ কোলে নেবার আগে তার হাত ধুয়ে নিতে বলুন ৷ এছাড়া শিশুকে পরিষ্কার করার আগে নিজের হাতটি ধুয়ে তবেই স্পর্শ করুন শিশুকে ।
Umbilical cord বা নাভি
শিশুর জন্মের পরপরই প্লাসেন্টা থেকে কাটা হয় ৷ নাভি কাটার পর ডাক্তাররা তা ক্ল্যাম্প করে বা পেঁচিয়ে ক্লিপের মত প্লাস্টিক বা মেটালের কর্ড ক্ল্যাম্প বা টেইপ লাগিয়ে দেন। এতে নাভিতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয় আর ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমে আসে।
নাভি শুষ্ক রাখুন। যত বেশি শুষ্ক রাখা যাবে তত দ্রুত নাভি শুকিয়ে ঝরে যাবে। এজন্য নাভিকে তেল, সাবান, লোশন, পানি থেকে দূরে রাখুন। তবে কখনো কখনো ডাক্তাররা নাভিতে আলকোহল দিয়ে মুছে দিতে বলেন। একটি তুলোর বলে বা কটন বাডে এলকোহল লাগিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে নাভি পরিষ্কার করুন।
নবজাতকের নখ
বাচ্চাদের নখ খুব দ্রুত বাড়ে ৷ ওর নখের আঘাতে ওর ত্বকে লাগতে পারে আঁচড়। আঁচড় গভীর হলে ঘা হবার সম্ভাবনা থাকে।
সুন্দর করে কেটে দিন ছোট্ট নখগুলো। শিশু ঘুমিয়ে গেলেই কাটুন তাহলে নড়াচড়ার বা কেটে যাবার ভয় থাকবে না ।
শিশুর চোখের যত্ন
বাচ্চার চোখের ময়লা পরিষ্কার করতে ভুলেও খালি হাতে খুটতে যাবেন না। নরম কাপড়ের টুকরো চুবিয়ে নিন কুসুম গরম পানিতে। হালকা করে চেপে পানি ঝরিয়ে মুছে নিন বাচ্চার চোখ।
নবজাতকের জিহ্বা পরিষ্কার রাখুন
দুধ খাবার কারণে শিশুর জিহ্বায় সাদা আস্তর পড়তে দেখা যায়। পরিষ্কার নরম শুকনো কাপড় ব্যবহার করে মুছে দিন আপনার ছোট্ট সোনাবাবুর জিভ।
বাচ্চার কান পরিষ্কার রাখা
কানের ভেতরে কটনবাডস দিয়ে পরিষ্কার করতে যাবেন না ৷ কানের পর্দায় আঘাত লাগতে পারে। এছাড়া কানের ভেতরে কিছু লোম থাকে যা বাইরের ময়লাকে ঠেলে দেয়। কটনবাডের আঘাত থেকে এদের রক্ষা করা জরুরি।
নাকের যত্ন
কানের মত নাকেও কটনবাডস না দিয়ে নরম সুতি কাপড়ে কোনা পেঁচিয়ে পরিষ্কার করে নিন। এতে শিশুর আঘাত পাবার সম্ভাবনা থাকবে না। নাকে সর্দি বা ময়লা জমে বন্ধ হয়ে থাকলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয় এবং দুধ টানতে চায় না। সুতরাং খেয়াল রাখুন এবং পরিষ্কার রাখুন ।
শিশুকে গোসল করানো
প্রথমবার শিশুর গোসল দেওয়াটা অন্য এক অভিজ্ঞতা ৷ এত ছোট একটা শরীর যাকে ঠিকমত ধরাই মুশকিল ভাবছেন তাকে গোসল দেবেন কিভাবে?
নাভি না শুকানো পর্যন্ত ডাক্তাররা সাধারণত শিশুর গোসল দিতে বারণ করে থাকেন। ততদিন পর্যন্ত আপনি বরং শিশুর গা মুছে দিন। দেখে নিন যা যা লাগবে…
• তোয়ালে
• নরম কাপড় ( ভেজানোর জন্য)
• নরম কাপড় ( গা মোছার জন্য)
• পরিষ্কার পোশাক
একটা সমতল জায়গায় তোয়ালে পেতে শিশুকে শোয়ান। প্রথমে নরম কাপড় হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিয়ে শিশুর মাথা মুছে দিন। সাথে সাথে আবার শুকনো কাপড় দিয়ে মাথা মুছে দিন। মাথা ভেজা থাকলে ঠান্ডা লেগে যেত পারে। এরপর গলা বুক ও হাত মুছুন।
উল্লেখ্য, আপনার নবজাতককে এইসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ভেতরে সুরক্ষিত রাখতে পারলে সর্দি, ডায়রিয়া , নাভির ইনফেকশন বা অন্যান্য ইনফেকশনের হাত থেকে আগলে রাখতে পারবেন। যত্নে রাখুন আপনার শিশু ভালবাসায় আর পরিচ্ছন্নতায়।