এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : রাত পোহালেই ভোট। এই কথাটি হয়তো অনেকবারই আপনারা পড়েছেন। তবে এর গুরুত্ব কমেনি। ৩০শে ডিসেম্বর ২০১৮, রোববার। বাংলাদেশের ইতিহাসের বেশিরভাগ দিন থেকে একদম আলাদা। যেন এক জাজমেন্ট ডে। রায়ের দিন। গণতন্ত্রে জনগণ তো আসলে একদিনের বাদশাই।
ধনী-গরিব-রাজা-প্রজা সবারই এক ভোট। কী অদ্ভুত সাম্য! অনেকদিন ধরেই ভোট এখানে রীতিমতো উৎসব। তবে এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। প্রচারণার রক্তাক্ত অধ্যায় শেষ হয়েছে । এখন চারদিকে নীরবতা, নিস্তব্ধতা। ঢাকা এরই মধ্যে ফাঁকা। মানুষ ছুটছেন গ্রামে। যেন ঈদের ছুটি। তারা যোগ দিতে চান উৎসবে।
একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে শুরু থেকেই নানা আলোচনা ছিলো। বছরের সবচেয়ে আলোচিত শব্দটি ছিল সম্ভবত ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন’। অনেকটা নাটকীয়ভাবেই মঞ্চে আবির্ভাব ঘটে ড. কামাল হোসেনের। যদিও বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনি পুরনো চরিত্র। তারপরও বিএনপির সঙ্গে তার জোট বাধা কম বিস্ময়ের তৈরি করেনি। খালেদা জিয়ার সাজা, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের সংলাপ। দৃশ্যত কোনো দাবি মেনে না নেয়ার পরও ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়। প্রচারণায় বাধা, হামলা, রক্তাক্ত প্রার্থী। সংশয় ছিলো শেষ পর্যন্ত বিরোধীজোট নির্বাচনে থাকে কি-না? কিন্তু তারা এখনো বলছেন, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তারা নির্বাচনে থাকবেন।
এমনিতে ইতিহাসের এক ব্যতিক্রম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলছে। সরকার বহাল। সংসদ বহাল। সব দলের অংশগ্রহণ। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে কিছুদিন অনেক কথা হয়েছে। এখন আর সে কথা কেউ মুখে তুলছেন না। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ একেবারেই সীমিত। একতরফা প্রচারণা। বিরোধীরা মাঠ ছাড়া। কী হবে আগামীকাল। বাংলাদেশের মতো সারা দুনিয়াতেও এ নিয়ে আগ্রহ রয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পর এখন বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, যুক্তরাজ্যসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ ধরনের নির্বাচনের আকাঙ্ক্ষার কথা প্রকাশ করেছেন।
আগেই বলা হয়েছে, ভোট এখানে উৎসব। সকাল সকাল দীর্ঘ লাইন। অনেক পশ্চিমা দেশেও এমনটা দেখা যায় না। তবে কেন্দ্র দখল, গায়েবি ভোটের নজিরও এখানে আছে। ভালো, মন্দ। কালো, সাদা। আমাদের রেকর্ডে সবই আছে। কাল কী হবে? ভোটাররা কী একদিনের বাদশাহী ফিরে পাবেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা কৌতুক দেখা যাচ্ছে। নিরাপদে ভোট দিয়ে ফেরার জন্য দোয়া চেয়ে ফেসবুকে অনেকে পোস্টারও আপলোড করছেন। জীবিত, প্রাপ্তবয়স্করা যেন একটি করে ভোট দিয়ে নিরাপদে, নির্ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারেন, বাকি জীবনটাও শান্তিতে কাটাতে পারেন এমন ভোটই চায় সংখ্যাগরিষ্ঠ গণতান্ত্রিক জনতা।
রোববার সকাল ৮টা থেকে ৪টা পর্যন্ত ২৯৯ আসনে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। এবার নির্বাচনে ১৮৬১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে নিবন্ধিত ৩৯ দলের ১৭৩৩ জন ও স্বতন্ত্র ১৮২ জন রয়েছে। ভোটগ্রহণ কার্যক্রমকে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশন সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এনেছে। আসনওয়ারি সর্বশেষ সামগ্রী ব্যালট পেপার পৌঁছে দেয়া হয়েছে। এর আগেই ভোটের অন্যান্য সরঞ্জামাদি মনোহরী দ্রব্য যেমন, অমোচনীয় কালির কলম, সিলগালা, মার্কিং ও ব্রাসসিল আসনওয়ারি পৌঁছে দেয় ইসি। আজ শনিবার ভোটের সমাগ্রী সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পুলিশ পাহারায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে নিয়ে যাবেন কেন্দ্রের মনোনীত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা।
নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ শুক্রবার বিকালে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে ভোটের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান। তিনি বলেন, ভোট নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। আশা করছি, নির্বিঘ্নে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন। তিনি বলেন, সরকারিসহ বিভিন্ন পর্যায়ের প্রায় ১৫ লাখ লোক এ ভোট পর্যবেক্ষণ করছে।
ভোটগ্রহণ উপলক্ষে রোববার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। ব্যাংকও বন্ধ রাখা হয়েছে ২৮ থেকে ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ হয়েছে শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে, এ নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে ৩০শে ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত। নির্বাচনে কালো টাকার দৌরাত্ম্য বন্ধে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এ উপলক্ষে জনগণের ভোগান্তি কমাতে এটিএম বুথগুলোতে পর্যাপ্ত টাকা রাখার নির্দেশনা রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। যানবাহন চলাচলের ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। কমিশনের অনুমোদিত পরিচয়পত্রধারীর বাইরে কোন যান-চলাচল করবে না।
এবারের নির্বাচনটি গত দশম জাতীয় সংসদের থেকে একটু আলাদা আমেজ বিরাজ করছে। কারণ নিবন্ধিত সব দল এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। এর পাশাপাশি অনিবন্ধিত অনেক রাজনৈতিক দল প্রধান দুই জোটের জোটবদ্ধ সঙ্গী হয়ে এ নির্বাচনে লড়ছেন। এর বাইরে বাম মোর্চা ও ইসলামী কয়েকটি দলের সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা মাঠে চষে বেড়িয়েছেন।
ইসি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনে মেট্রোপলিটন এলাকার বাইরের সাধারণ কেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৫ জন এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৫ থেকে ১৬ জন সদস্য মোতায়েন থাকবেন। মেট্রোপলিটন এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ওই সংখ্যা থেকে ১ জন করে বেশি রাখা হবে। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওড় এলাকার কেন্দ্রগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা আরও বেশি থাকবে। এবার নির্বাচনে আচরণবিধি প্রতিপালনে মাঠ পর্যায়ে ১ হাজার ২০০ জন ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। তবে সেনাবাহিনী, বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব ও পুলিশের মোবাইল ও স্ট্রাইকিং টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট দেয়ার জন্য অতিরিক্ত ১ হাজার ৯৩৭ জনের চাহিদা দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল ইসি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬৭৬ জন ম্যাজিস্ট্রেট দিয়েছে মন্ত্রণালয়। শুধু ভোটকেন্দ্র পাহারায় পুলিশসহ ৬ লাখ ৮ হাজার জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছে।
এর মধ্যে পুলিশ ১ লাখ ২১ হাজার, আনসার ৪ লাখ ৪৬ হাজার ও গ্রামপুলিশ ৪১ হাজার। এছাড়া ৪১৪ প্লাটুন সেনাবাহিনী, ৪৮ প্লাটুন নৌ-বাহিনী, কোস্টাগার্ড ৪২ প্লাটুন, বিজিবি ৯৮৩ প্লাটুন ও র্যাব ৬০০ প্লাটুন। এছাড়া স্টাইকিং ও রিজার্ভ র্ফোস হিসেবে ২ হাজার প্লাটুন র্যাব ও বিজিবিসহ ৬৬ হাজার সদস্য নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছে। সব সংসদীয় আসনের নির্বাচন শেষ করতে ৬৬ জন রিটানিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৬৪ জেলায় সমসংখ্যক এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুই বিভাগীয় কমিশনার এ দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়া রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সহায়তা করতে ৫৮২ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছে এ নির্বাচনে। নির্বাচনে শুধু ভোটারদের ভোটদানে সহায়তা করার জন্য ৬ লাখ ৬২ হাজার ১১৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন।
এর মধ্যে প্রিজাইডিং অফিসার ৪০১৮৩ জন, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ২ লাখ ৭ হাজার ৩১২ জন এবং পোলিং অফিসার ৪ লাখ ১৪ হাজার ৬২৪ জন। প্রথমবারের মতো এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হবে। আসনগুলো হচ্ছে-ঢাকা-৬, ঢাকা-১৩, চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ এবং সাতক্ষীরা-২ আসন। এসব আসনের ৮৪৫টি কেন্দ্রের ৫ হাজার ৩৮ ভোটকক্ষে এ মেশিন ব্যবহার করা হবে। এ ছয়টি আসনে ভোটার সংখ্যা ২১ লাখ ২২ হাজার। এবার ১ কোটি ২৩ লাখ নতুন ভোটার। নতুন ভোটারসহ মোট ভোটার ১০ কোটি ৪২ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৭ জন। তবে, মহিলাদের চেয়ে পুরুষ ভোটার বেশি; যার মধ্যে ভোটের ব্যবধান প্রায় ৯ লাখ। এবার পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৭২ হাজার ৩৬৫ জন এবং মহিলা ৫ কোটি ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৩১২ জন।
নির্বাচনে ৮১টি নিবন্ধিত পর্যবেক্ষক সংস্থার ২৫ হাজার ৯শ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন। এছাড়া বিদেশিদের মধ্যে ফেমবোসা, ওআইসি, কমনওয়েলথস ও অন্যান্য সংস্থার ৩৮ জন, কুটনীতিক ও বিদেশি মিশনের ৬৪ কর্মকর্তা এবং ঢাকাস্থ দূতাবাস/হাইকমিশন বা বিদেশি সংস্থায় কর্মরত বাংলাদেশি ৬১ জন ভোট পর্যবেক্ষক করবেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ই নভেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদা। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের দাবির মুখে গত ১২ই নভেম্বর পুনঃতফসিল ঘোষণা করে ৩০শে ডিসেম্বর ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। একজন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে গাইবান্ধা-৩ আসনে ভোট স্থগিত করে ২৭ জানুয়ারি পুনঃভোট দেয়া হয়েছে।
গার্ডিয়ানের দৃষ্টিতে বাংলাদেশের নির্বাচন
শেখ হাসিনা টানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে রেকর্ড গড়বেন কি না তা নির্ধারণ করতে আগামী রোববার বাংলাদেশিরা ভোট দেবে। তার অধীনে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছে। তবে, শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে বেপরোয়া মানবাধিকার অবমাননার অভিযোগ রয়েছে। বিরোধীদের মতে, চলমান পরিস্থিতি গত ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ‘দমনমূলক’। রক্তক্ষয়ী নির্বাচনী প্রচারণার পরও ধারণা করা হচ্ছে ৭১ বছর বয়সী শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী থাকছেন। নির্বাচন-পূর্ব মাসগুলোতে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াসহ বিপুল সংখ্যক বিরোধী নেতাকর্মীকে জেলে পাঠানো হয়েছে অথবা গুম করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বাংলাদেশের ভিসা প্রাপ্তিতে অহেতুক বিলম্ব করার অভিযোগ তুলেছেন।
বিরোধী জোটের প্রধান ও আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বলেছেন, বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশি হয়রানি নজিরবিহীন মাত্রায় পৌঁছেছে। ৮২ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ আরো বলেন, বিরোধী জোটের প্রায় ৭০ জন প্রার্থী তাদের পার্টি অফিস ও সমাবেশে সশস্ত্র গুণ্ডাদের ব্যাপক হামলার পর আতঙ্কিত হয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারছেন না। এমনকি বিরোধী জোটের এই নেতার গাড়িও হামলার শিকার হয়েছে। এ মাসের শুরুতে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে তিনি আক্রান্ত হন। অভিযোগ উঠেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থকরাই এই হামলা চালিয়েছে। বৃটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ানের এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারণার প্রথমদিকে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী সংঘর্ষে নিহত হয়। এ ছাড়া নির্বাচনী সহিংসতায় উভয় জোটের কয়েক ডজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তবে শেখ হাসিনার প্রত্যাশা, ১০ কোটি ভোটার এসব সহিংসতা অগ্রাহ্য করে দেশের অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে গুরুত্ব দেবে। ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে গত এক দশকে দেশের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৬ শতাংশ। এই হার উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এ প্রবৃদ্ধির বেশিরভাগই আসে ২০ বিলিয়ন ডলারের গার্মেন্টস শিল্প ও এই খাত সংশ্লিষ্ট সাড়ে চার মিলয়ন মানুষের কল্যাণে। শ্রম খাতে নারীদের যে অংশগ্রহণ ছিল, গার্মেন্টস শিল্পের কারণে তা দ্বিগুণ হয়েছে। যা মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করেছে। ফলে বাংলাদেশিদের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছরে পৌঁছেছে। এই হার প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়েও বেশি।
এত উন্নয়নের ফিরিস্তির পরেও রাজধানী ঢাকা এ বছরেই দুই দফা বিক্ষোভে অচল হয়েছে। বিশ্লেষকরা এ বিক্ষোভকে জনঅসন্তোষের প্রমাণ বলে অভিহিত করেছেন। আগামী রোববারের নির্বাচন অবাধ হলে ব্যালটের মাধ্যমে এই জনঅসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটবে বলেও মনে করেন তারা। বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের গবেষণা পরিচালক সাহাব ইনাম খান বলেন, আমাদের দেশে অতি-ধনী বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। তার মানে এই না যে, নিম্নস্তরের মানুষরাও এতে লাভবান হচ্ছে।
বেপরোয়া ড্রাইভিং ও ড্রাইভারদের দায়মুক্তির সংস্কৃতির প্রতি ক্ষোভ থেকে গত আগস্টে জনবিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এ বিষয়ে সাহাব খান বলেন, এমন ‘অদৃশ্য’ বিষয়গুলোও নির্বাচনে নিষ্পত্তিমূলক হয়ে উঠতে পারে। জন-নিরাপত্তার বিষয়গুলো, কিভাবে আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে, বিচার ব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা আছে কি না, এগুলো নির্ধারণী ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশে সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার অবমাননার অভিযোগ রয়েছে। পর্যবেক্ষক সংগঠনগুলোর দাবি, শেখ হাসিনার দমন-পীড়ন ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের তথ্য অনুসারে, শত শত মানুষকে জোরপূর্বক গুম করা হয়েছে বা গোপন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, সাম্প্রতিক মাদক-বিরোধী অভিযানের সময় পুলিশ প্রায় সাড়ে ৪শ’ মানুষকে গুলি করে মেরেছে।
এদিকে, নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রপাগান্ডা ছড়ানো রোধ করতে সরকার দেশজুড়ে কঠোরভাবে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণ করছে। বাংলাদেশে টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরসি) একজন কর্মকর্তা বলেছেন, বৃহস্পতিবার কয়েক ঘণ্টার জন্য থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়। নাম গোপন রাখার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আমরা মোবাইল কোম্পানিগুলোকে তাদের থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা সাময়িক বন্ধ রাখতে বলেছি। ইন্টারনেটে প্রপাগান্ডা ও উস্কানিমূলক তথ্য ছড়ানো রোধ করতে আমরা এটা করেছি। ১০ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে উচ্চ-গতির ইন্টারনেট আবারো চালু করা হয়। তবে, পরে আবারো এটা বন্ধ করা হতে পারে।
দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির নজিরবিহীন দুঃসময়ে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের কর্তৃত্ববাদী আচরণ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। সামরিক শাসন ছাড়া বংলাদেশে রক্ষণশীল বিএনপি ও দৃশ্যত সেক্যুলার-বামপন্থি আওয়ামী লীগের মধ্যেই ক্ষমতার পালাবদল ঘটেছে। কারচুপির আশঙ্কায় বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে। তাই এখন দলটি পার্লামেন্টের বাইরে। দুর্নীতির দায়ে সম্প্রতি বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে। শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টায় যুক্ত থাকার দায়ে তার ছেলে তারেক রহমানকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি লন্ডনে নির্বাসনে রয়েছেন।
যা হোক, বিএনপির দুর্বলতার পরেও ক্ষমতাসীন দল কোনো ছাড় দেয়নি। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে প্রায় তিনলাখ মামলা দায়ের করা হয়েছে। দলটির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
ওদিকে, নির্বাচনী প্রচারণায় সরকারের পক্ষে ভুয়া সংবাদ ছড়ানোর দায়ে ফেসবুক সম্প্রতি ১৫টি পেজ বন্ধ করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটির সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান নাথানিয়েল গ্লেইচার বলেন, থ্রেট ইন্টেলিজেন্স কোম্পানির মাধ্যমে ফেসবুক এসব পেজ যাচাই করেছে। দেখা গেছে, এসব পেজ তৈরি ও পরিচালনাকারী ব্যক্তিরা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। পরে টুইটার বলেছে, তারা বাংলাদেশের ১৫টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে। এদের বেশিরভাগেরই ফলোয়ার সংখ্যা ৫০ এরও কম। টুইটারের দাবি, রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে এসব অ্যাকাউন্টের সম্পর্ক আছে।