এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ‘সংখ্যা’ নিয়ে শুরু থেকেই বিভ্রান্তি! পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশনের তথ্যে ‘গরমিলে’ এটি হয়েছে। তবে দায়িত্বশীলরা এর জন্য দায়ী করছেন শেষ সময় পর্যন্ত অন্তর্ভুক্তি বা অনুমতির প্রক্রিয়া চলমান থাকাকে। তবে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সুযোগ-সুবিধাদি দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নির্বাচন কমিশন উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা এটা মানছেন যে, অতীতের যেকোনো ‘অংশগ্রহণমূলক’ নির্বাচনের চেয়ে এবারে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের সংখ্যা নিতান্তই নগণ্য! দেশি পর্যবেক্ষকদের সংখ্যাও স্বাভাবিকের চেয়ে কম।
তাদের হিসাব মতে, আমন্ত্রিত বিদেশী পর্যবেক্ষকের সংখ্যা ৪০-এর বেশি নয়। তবে ঢাকাস্থ বিদেশি কূটনীতিক, দূতাবাস ও হাইকমিশনের লোক স্টাফ মিলে ১০০ জন প্রতিনিধি ভোটের মাঠে যাচ্ছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ৩০শে ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ৯টি আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং ১২টি বিদেশ মিশন (দূতাবাস, হাই কমিশন ও ডেলিগেশন কার্যালয়) মিলে ১৮৮ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ইসিতে নিবন্ধন করেছেন। মন্ত্রণালয় থেকে এ নিয়ে ২৭শে ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়।
সেখানে বলা হয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, জাপান, ফ্রান্স, জার্মানি, কানাডা, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্কের পর্যবেক্ষকরা ওই তালিকায় রয়েছেন। তবে সেখানে আরও কয়েকটি মিশন থাকতে পারে।
মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি মতে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কমনওয়েলথ, ওআইসি, ফোরাম অব ইলেকশন কমিশন ম্যানেজমেন্ট অব সাউথ এশিয়া, ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট, ইন্টারন্যাশনাল ফাউন্ডেশন ফর ইলেকটোরাল সিস্টেমস, ডেমোক্র্যাসি ইন্টারন্যাশনাল, দ্বিপেন্দ্র ক্যান্ডেল ইনিশিটিয়েটিভ এবং সার্ক হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন থেকে পর্যবেক্ষক পাঠানোর কথা আছে। এছাড়া অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, কানাডা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, নাইজেরিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, প্যালেস্টাইন, ফিলিপাইনসহ আরও কিছু দেশ থেকে পর্যবেক্ষকরা আসবেন বলেও আশা করা হচ্ছে। তবে একদিন পর (গতকাল) নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখা থেকে ভোটের বিস্তারিত জানিয়ে যে ফ্যাক্ট শিট প্রচার করা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে- বিদেশি কূটনৈতিক, নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান এবং দূতাবাস, হাই কমিশন বা বিদেশি সংস্থাগুলোতে কর্মকর্ত বাংলাদেশি মিলে ১৬৩ জন পর্যবেক্ষক ভোট পর্যবেক্ষণ করছেন। এর মধ্যে ফোরাম অব ইলেকশন কমিশন ম্যানেজমেন্ট অব সাউথ এশিয়া- ফামবোসা, এএইএ, ওআইসি, ও কমনওয়েলথ হতে আমন্ত্রিত এবং অন্যান্য পর্যবেক্ষক মিলে (সর্ব সাকুল্যে) ৩৮ জন রয়েছেন। কূটনীতিক ও বিদেশি মিশনের বিদেশি কর্মকর্তা মিলে ৬৪জন। আর ঢাকাস্থ বিভিন্ন দেশের দূতাবাস, হাইকমিশন ও সংস্থায় কর্মরত ৬১ জন বাংলাদেশি ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। তাদের এরইমধ্যে লোকাল পর্যবেক্ষক হিসেবে কার্ড ইস্যু করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বন্ধু-উন্নয়ন সহযোগী ওই সব রাষ্ট্রগুলোর ঢাকাস্থ দূতাবাস ও হাইকমিশনের প্রতিনিধিরা সরজমিনে ভোটের মাঠে যাচ্ছেন। তাদের বেশিরভাগই রাজধানীর বাইরে যেতে আগ্রহী বলে সরকার ও ইসিকে জানিয়েছেন। সরকারের তরফেও তাদের গ্রিন সিগন্যাল দেয়া হয়েছে এবং ভোটের মাঠে যাওয়া কূটনীতিকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে কে কোথায় যাচ্ছেন নিরাপত্তার স্বার্থে সেটি খোলাসা করা হচ্ছে না। সূত্র মতে, ভোট পর্যবেক্ষণে যাওয়া কূটনীতিকদের মধ্যে রয়েছেন- মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলার, উপ-রাষ্ট্রদূত জুয়েল রিফম্যান, পলিটিক্যাল কাউন্সেলর বিল মুয়েলারসহ দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক এবং মার্কিন দাতব্য সংস্থা ইউএসএআইডির অন্তত ৩০ জন কর্মকর্তা। তালিকায় আছেন জার্মান রাষ্ট্রদূত পিটার ফাহরেনজোল্?জ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ডেলিগেশন প্রধান রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিঙ্ক। তারা দুজনই পরিস্থিতি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন এবং কাল (ভোটের দিনে) কেন্দ্র পরিদর্শনে মাঠে যাচ্ছেন।
নির্বাচন কমিশনের তালিকায় আছেন ফ্রান্স দূতাবাসের ৪ জন, জাপানের ৯ জন, স্পেনের ১ জন, ডেনমার্কের ৩ জন, নরওয়ের ২ জন, জার্মানির ৮ জন, নেদারল্যান্ডসের ৪ জন ও সুইজারল্যান্ডের ৬ জন। তারা পর্যবেক্ষক কার্ড এরইমধ্যে ইস্যু করা হয়েছে। এ ছাড়া এশিয়া ফাউন্ডেশনসহ ৪টি সংস্থার কয়েকজন পর্যবেক্ষক ও তাদের সহায়ক স্টাফও ভোটের মাঠে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। এদিকে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশনের ৩ সদস্যের একটি পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে আসছে। তারাও ভোটকেন্দ্র এবং তার আশেপাশের পরিবেশ সরজমিন দেখবেন। তাদের সঙ্গে হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও ভোট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।