এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : মহাবিজয়ের পর চট্টগ্রাম থেকে কতজন মন্ত্রিত্ব পাচ্ছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। এরমধ্যে কতজন জাতীয় পার্টি থেকে, আর কতজন টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাচ্ছেন তার হিসাবনিকাশ শুরু হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামে নির্বাচিতদের মধ্যে অনেকেই হেভিওয়েট প্রার্থী। অনেকেরই রয়েছে মন্ত্রিত্বের অভিজ্ঞতা। অনেকেই মন্ত্রী না হলেও মন্ত্রী হওয়ার যোগ্য। এমনটাই মনে করছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী।
মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর ভাষ্য, এবার চট্টগ্রামে মনোনয়ন চেয়েও পাননি এমন যোগ্য কয়েকজন নেতা রয়েছেন। এমন রাজনৈতিক নেতারা তাদের ত্যাগের মূল্যায়ন চাইবেন।
সবমিলিয়ে মন্ত্রিপরিষদে অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টায় দৌড়ঝাঁপ চলছে নেতাদের। তিনি জানান, বর্তমান মন্ত্রিপরিষদে রয়েছেন চট্টগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। ইতিপূর্বে ছিলেন চট্টগ্রাম-১০ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. আফছারুল আমীন এবং চট্টগ্রাম-৭ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ।
এদের মধ্যে আবারো কে স্থান পাচ্ছেন এবং কে বাদ পড়ছেন তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। তবে নতুন করে যাদের নাম নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে তাদের অন্যতম হলেন দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন বন্দর, পতেঙ্গা এবং অন্যান্য এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১১ থেকে বিপুল ভোটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফ। তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন এই ব্যবসায়ী নেতা। ছিলেন চিটাগাং চেম্বারের সভাপতিও। বর্তমান চেম্বারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণও তার হাতে। হঠাৎ রাজনীতিতে এসে আওয়ামী লীগের টিকিট পেয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে চমক দেখান তিনি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আমীর খসরু মাহমুদকে পরাজিত করেন বিশাল ভোটে। তার প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ২,৮৩,১৬৯। আমীর খসরু পেয়েছেন ৫২,৮৯৮ ভোট। নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং আরো দুটি স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল লতিফ। চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এসব বিবেচনায় আগামী মন্ত্রিসভায় তিনি স্থান পাচ্ছেন বলে প্রচার পাচ্ছে সর্বত্র।
তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে এম আবদুল লতিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে যে দায়িত্ব দেবেন আমি তা পালন করবো। তবে আমার কোনো লবিং নেই এর জন্য।
প্রচলিত আছে যে, চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালি আসন থেকে যিনি নির্বাচিত হন তিনি মন্ত্রী হয়ে থাকেন। এর আগে এ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী ছিলেন অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দিন, এমএ মান্নান এবং আবদুল্লাহ আল নোমান। এবারে নির্বাচিত হয়েছেন তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা এবং চট্টলবীর মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।
জীবনের প্রথম ভোটযুদ্ধে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেনকে হারিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ভোট পেয়েছেন ২,২৩,৬১৪, ডা. শাহাদাৎ হোসেন পেয়েছেন ১৭,৬৪২ ভোট। ব্যারিস্টার মহিবুল হাসানকে নিয়েও আলোচনা চলছে ভোটের আগে থেকে। নির্বাচিত হলেই তিনি মন্ত্রিপরিষদে স্থান পাবেন।
চট্টগ্রাম-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম এবার প্রথমবারের মতো মন্ত্রিপরিষদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন বলে ব্যাপক আলোচনা চলছে। টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২,৩০,৪৭১ ভোট পেয়ে তিনি বিজয়ী হয়েছেন। বিএনপির জসীম উদ্দিন সিকদার পেয়েছেন ২,৩০৭ ভোট। সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী বর্তমানে রেল মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি।
এ ছাড়া অতীতে মন্ত্রী ছিলেন এমন নেতাদের মধ্যে রাঙ্গুনিয়া আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের প্রচার সমপাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক মন্ত্রী ডা. আফসারুল আমিন বেশ এগিয়ে রয়েছেন। এ ছাড়া গত সরকারের মন্ত্রিসভায় টেকনোক্র্যাট কোটায় ঠাঁই পাওয়া নগর আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি নির্বাচন করেন নি। দলের প্রবীণ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসিকে এবারও সম্মান করা হতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
জাতীয় পার্টিকে এবারও মন্ত্রিসভায় রাখা হতে পারে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ এই নেতা। তিনি বলেন, এবার জাতীয় পার্টি ২২টি আসন পেয়েছে। বর্তমান মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ আগামী সরকারেও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সাবেক মন্ত্রী জিয়াউদ্দিন বাবলুও নির্বাচন করেন নি। জিয়াউদ্দিন বাবলুকেও মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দেয়া হতে পারে।
তবে আরো বেশ কিছুদিন সময় থাকলেও মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্তির জন্য নবনির্বাচিত ও প্রবীণ নেতারা ঢাকামুখী দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। নতুন সরকারের মন্ত্রিপরিষদে চট্টগ্রামের কতজন ঠাঁই পাবেন তা সময় বলে দিলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব যে থাকবে তা নিশ্চিত বলেই দলীয় নেতাকর্মীদের মন্তব্য।