এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা সব কিছু ঠিক থাকলে কাল সকাল ১০টায় নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ হতে যাচ্ছে। গতকাল নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশ করেছেন নির্বাচন কমিশন। আগামী ৬ই জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভার শপথ হতে পারে। জাতীয় সংসদ সচিবালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ওইভাবেই প্রস্তুতি নিয়ে এগুচ্ছে। গতকাল সচিবালয়ে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ)-এর সঙ্গে সংলাপে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু সংসদ সদস্যদের শপথের তারিখ উল্লেখ করে বলেন, নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা আগামী ৩রা জানুয়ারি বৃহস্পতিবার শপথ নেবেন। এদিকে বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সাত প্রার্থী শপথ নেবেন কিনা তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে দোটানায় রয়েছেন জোট নেতারা। যদিও জোটের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যেহেতু তারা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছেন তাই এমপি হিসেবে শপথ নেয়ার সুযোগ নেই।
তারা শপথ না নিলে এই আসনগুলোতে নতুন নির্বাচন হতে পারে।
জাতীয় সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ ভবনের শপথ কক্ষে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন নতুন এমপিদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন। শপথ কক্ষের ধারণক্ষমতা কম হওয়ায় দুই দফায় শপথ হবে। সংসদের আইন শাখার কর্মকর্তারা বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন। মঙ্গলবার সারা দিন শপথ কক্ষ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের পর পরই নতুন এমপিদের ফোন করতে শুরু করবে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। ওইভাবে প্রস্তুতি নেয়া আছে। এদিকে নতুন মন্ত্রিসভার জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শেষ করে এনেছে। নতুন মন্ত্রিসভার আগমন ও পুরনো মন্ত্রিসভার বিদায় কিভাবে হবে তাও চূড়ান্ত করে ফেলেছে তারা।
এজন্য আলাদা আলাদা দুটি গেজেট নোটিফিকেশন জারি করা হবে। নতুন মন্ত্রিসভায় স্থান প্রাপ্তদের জন্য একটি গেজেট এবং পুরনো মন্ত্রিসভা বাতিল করার জন্য আলাদা আরেকটি গেজেট হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনের পর ৮ই জানুয়ারি বুধবার সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১২ই জানুয়ারি রোববার মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠিত হয়। ওই বিষয়টি মাথায় রেখে ৬ই জানুয়ারি রোববার মন্ত্রিসভার শপথের বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। এদিকে তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন অনেকেই। তাই নিজের এলাকার নেতাকর্মীরা তাদের এমপি মন্ত্রিসভায় স্থান পাবেন বলে প্রত্যাশা করছেন। এজন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কদর হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে। বিভিন্ন সংসদীয় আসনের এমপিদের শুভানুধ্যায়ীরা মন্ত্রিসভায় স্থান পাচ্ছেন কিনা তার খোঁজ রাখছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যদের ব্যক্তিগত স্টাফরা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে খোঁজ খবর রাখছেন। নতুন গঠিত মন্ত্রিসভায় তারা থাকছেন কিনা এনিয়েও চিন্তিত তারা। গতকাল বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে দেখা যায়, মিষ্টিমুখের ধুম লেগেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীন দপ্তর, অধিদপ্তর ও পরিদপ্তর থেকে ফুল নিয়ে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের কাছে আসেন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গেল মন্ত্রিসভার বেশিরভাগ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা টেনশনে আছেন। নিজের মন্ত্রিত্ব থাকছে কিনা তা বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, নতুন মন্ত্রিসভা শপথের আগে এ বিষয়ে জানা সম্ভব নয়। তাই ৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, নতুন মন্ত্রিসভা হবে নতুন পুরনো সদস্যদের মিশেলে। এক্ষেত্রে কেউ কেউ বাদ পড়বেন। যোগ হবে নতুন মুখ। যোগ্য এবং দক্ষদের নিয়ে গঠিত হবে এবারের মন্ত্রিসভা।
একাদশ সংসদের এমপিদের গেজেট প্রকাশ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নবনির্বাচিতদের ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব এস এম আসাদুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গতকাল বিকালেই বিজি প্রেসে গেজেট প্রকাশের জন্য পাঠানো হয়েছে। আশা করছি বুধবারের মধ্যে হাতে পৌঁছাবে। এর আগে নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছিলেন, নাম, ঠিকানাসহ নির্বাচিতদের গেজেট প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করা হচ্ছে। মঙ্গলবারের মধ্যে সম্ভব না হলে বুধবার গেজেট প্রকাশ করা হবে। গেজেট প্রকাশের পর শপথের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে স্পিকারের কাছে তা পাঠাবে ইসি সচিবালয়। সংসদ নির্বাচনের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে শপথের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এরপর ৩০ দিনের মধ্যে অধিবেশন ডাকতে হবে। তবে ভোটের কতদিন পর গেজেট হবে, সেই বিষয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।
একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরুর ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের স্পিকারকে অবহিত না করলে বা শপথ না নিলে সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে তিনদিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের পর ৯ই জানুয়ারি নির্বাচিতদের শপথ পড়ানো হয়। গত ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় ২৯৯ সংসদীয় আসনের ভোটগ্রহণ। গাইবান্ধা-৩ আসনে এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় সেখানে ভোট হবে ২৭শে জানুয়ারি। আর ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের নির্বাচনে তিনটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত হওয়ায় সেখানে পুনঃনির্বাচনের পর ফল ঘোষণা করা হবে।