এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল এবং নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচনের দাবিতে মুখে কালো কাপড় বেঁধে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বাম গণতান্ত্রিক জোট। সারা দেশব্যাপী পালন করা এই প্রতিবাদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালন করেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলা এই কর্মসূচি শেষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কেন্দ্রীয় নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, গোটা দেশকে অবরুদ্ধ করে কোটি কোটি ভোটারের ভোটাধিকার হরণ করে আরো একবার যে জবরদস্তিমূলক প্রহসনের নির্বাচন মঞ্চস্থ করা হলো, তার ফলাফলকে প্রত্যাখ্যান করছে বাম গণতান্ত্রিক জোট।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভর্তি করে রাখা, নিরাপত্তার নামে নজিরবিহীন ভয়ভীতি ও আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের প্রতি নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও ন্যক্কারজনক ভূমিকা, বাম জোটের একাধিক প্রার্থীসহ বিরোধী দলগুলোর প্রার্থী ও এজেন্টদের আটক, শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, কেন্দ্র থেকে জোর করে বের করে দেয়ার মধ্য দিয়ে দেশবাসীকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। সকল দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে গোটা নির্বাচনকে ব্যর্থ করে দেয়া হয়েছে। পূর্ব আশঙ্কানুযায়ী যা নির্বাচনে সরকারের ছকেরই বাস্তবায়ন করা।
এ ছাড়া ভোর থেকেই দেশব্যাপী ভোটকেন্দ্র দখল, প্রকাশ্য জালিয়াতি, ব্যালট পেপারে প্রকাশ্যে নৌকা মার্কার সিল মারতে বাধ্য করা, বিরোধীদলীয় ভোটারদের জোর করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া, কোথাও সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়াসহ অসংখ্য ঘটনার মধ্য দিয়ে সমগ্র নির্বাচনকে পুরোপুরি অর্থহীন ও হাস্যকর করে তোলা হয়েছে।
তিনি বলেন, এই সমুদয় তৎপরতার মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে যেটুকু আগ্রহ তৈরি হয়েছিল, তা এখন পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশে অবাধ, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যে কোনো অবকাশ নেই তা আরো একবার প্রমাণ হলো। আর যে নির্বাচনে জনগণের মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি, সেই নির্বাচনের ফলাফল কোনোভাবেই জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।
তাই এই কোটি কোটি ভোটারের ভোটাধিকার হরণ করে সংঘটিত নজিরবিহীন ভোট ডাকাতির নির্বাচন অবিলম্বে বাতিল ও নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে পুনঃনির্বাচনের দাবিতে সারা দেশব্যাপী মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বাম জোট। এ সময় আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচির কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আগামী ১১ই জানুয়ারি, শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীদের নিয়ে এক গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার চরজুবলী ইউনিয়নের একটি গ্রামে স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে এক নারীকে মারধর ও গণধর্ষণের ঘটনায় আক্রান্ত পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য আজ সুবর্ণচরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নেতারা যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। এর পরই কেন্দ্রীয় বাম নেতারা ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুরের ঘটনাস্থলও পরিদর্শনে যাবেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, বাসদ (মার্কসবাদী)’র কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশ চক্রবর্তী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতা ফিরোজ আহমেদ, আবদুল্লাহ আল-ক্বাফী রতন প্রমুখ।