এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছে জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন। শুক্রবার জেনেভায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে মানবাধিকার কমিশনারের মুখপাত্র রাবিনা শ্যামদাসানি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেসব সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কার্যকরভাবে তদন্ত করার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। এ তদন্ত হতে হবে দায়ী ব্যক্তিদের দল-মত নির্বিশেষে বিচারের আওতায় নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে। একই সঙ্গে নতুন করে এ ধরনের প্রতিশোধমূলক হামলা রোধ করার জন্য জরুরিভিত্তিতে পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন আইন অনুযায়ী বৈধতা ও সামঞ্জস্যতা রক্ষা করে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে, তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি। এ ছাড়া, বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে স্বনির্ভর ও স্বনিয়ন্ত্রিত ভূমিকা পালনের আহ্বান জানাচ্ছি।
বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে সংঘটিত সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। শুধু নির্বাচনের দিনেই নিহত ও অনেক মানুষ আহত হয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য রিপোর্ট রয়েছে।
উদ্বেগজনক ইঙ্গিত রয়েছে যে, বিরোধীদলের ওপর প্রতিশোধমূলক শারীরিক আক্রমণ, অসদাচরণ, হয়রানি, ঢালাও গ্রেপ্তার, গুম ও মামলা দেয়া অব্যাহত থাকবে। খবরে বলা হচ্ছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা একতরফাভাবে এই ভীতিপ্রদর্শন ও সহিংস আক্রমণ চালাচ্ছে। এমনকি অনেক সময় এতে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের সহায়তা বা সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে।
গণমাধ্যমকর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে, আহত করা হচ্ছে বা তাদের জিনিসপত্র (ক্যামেরা) ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে নির্বাচনে মুক্তভাবে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে বাধা দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে সংবাদ প্রকাশের কারণে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের আওতায় সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ১০ই ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৫৪টি সংবাদ ও অন্যান্য ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া, ভোটগ্রহণের পুরো দিন ইন্টারনেট সীমিত করে দেয়া হয়। এর মাধ্যমে মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে দমন করা হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাকর্মী, মানবাধিকার কর্মী ও সংগঠনসহ মুক্ত মত প্রকাশে বিশ্বাসী মানুষদের ওপর কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সম্প্রতি পুনঃনির্বাচনের দাবিতে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভও পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। তাদের গ্রেপ্তার করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো আইনের আওতায় মামলা দেয়া হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে মানবাধিকার কর্মী, সুশীল সমাজ, সাংবাদিকসহ সবাই যেন সুরক্ষিতভাবে মতপ্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারে, মানুষ যেন দেশের নির্বাচনসহ গণতান্ত্রিক ও উন্নয়ন প্রক্রিয়া নিয়ে স্বাধীনভাবে যুক্তি-তর্ক করতে পারে, সে জন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মতো যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক আইনগুলোর সংশোধন করা উচিত।