এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : একাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর (টিআইবি) পর্যালোচনা প্রতিবেদনের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সরকারের দুই মন্ত্রী। বুধবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঢাকায় এবং দলের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ চট্টগ্রামে পৃথক অনুষ্ঠানে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের দলীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের উদ্যোগে আয়োজিত এক বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের জনগণ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টিআইবি’র অলীক ও অবিশ্বাস্য রূপকথার গল্পের জবাব দেবে। টিআইবি নির্বাচন নিরপেক্ষ হয়নি বলে অলীক, অবিশ্বাস্য রূপকথার কাহিনী সাজাচ্ছে। নির্বাচনে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ব্যবহার করা হয়েছে। বিএনপি’র কোনো এজেন্ট বা টিআইবি’র একজন প্রতিনিধিও নির্বাচনের দিন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। তিনি বলেন, নির্বাচনের দিন তারা নির্বাচনের কারচুপির কোনো কারণ খুঁজে পাননি। আর এখন তারা নির্বাচন নিয়ে কেন অলীক রূপকথার গল্প সাজাচ্ছেন তা আমরা জানি।
দেশের জনগণই তার জবাব দেবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ বিজয় উপলক্ষে আগামী ১৯শে জানুয়ারি সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা সফল করতে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাঈল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন- যুবলীগের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী। এ সময় ওবায়দুল কাদের ‘ভোট চুরির’ জন্য প্রকাশ্যে স্টেডিয়ামে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সমালোচনাও করেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে কারচুপির জন্য মির্জা ফখরুল আমাকে স্টেডিয়ামে গিয়ে মাফ চাইতে বললেন। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বেপরোয়া চালক হয়ে গেছেন।
কখন যে তিনি কোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেন, সে বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকতে হবে। তিনি বলেন, গত দশ বছরে বিএনপি’র যে মহাসচিব দশ মিনিটের জন্যও আন্দোলন করতে পারেননি, যার নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি দশটিরও কম আসন পায়, লজ্জা-শরম থাকলে তিনি আরো আগেই পদত্যাগ করতেন। তিনি বলেন, আমাকে ক্ষমা চাইতে বলেন? কোন্ দোষে? শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বতঃস্ফূর্ত গণজাগরণ ভালো লাগছে না? ভালো তো লাগবেই না। এই অভূতপূর্ব ফলাফল পঁচাত্তর পরবর্তীকালে এই গণজাগরণ বাংলাদেশে কেউ আর কখনও দেখেনি। তিনি বলেন, জনগণের রায়কে, জনগণের এই অভূতপূর্ব, এই বৈপ্লবিক ভূমিধস বিজয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই বিজয়কে যারা প্রত্যাখ্যান করে, তাদের জাতির সামনে ক্ষমা চাওয়া উচিত।
টিআইবি’র প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত: তথ্যমন্ত্রী
ওদিকে টিআইবি প্রতিবেদন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও এ প্রতিবেদন এবং বিএনপি’র অভিযোগের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই বলে মন্তব্য করেছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বুধবার সকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর দেওয়ানজি পুকুরপাড় এলাকার নিজের বাসায় সংবাদ সম্মেলনে ড. হাছান মাহমুদ এ কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে দেশে কয়েকটি সংগঠন আছে যারা দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করা নয়, বরং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার কাজেই লিপ্ত। টিআইবি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং বলে তা ধারণাপ্রসূত। আমরা অতীতেও দেখতে পেয়েছি, তারা যে গবেষণার কথা বলে সে গবেষণাগুলো প্রকৃতপক্ষে কোনো সঠিক গবেষণা নয়। বেশির ভাগ প্রতিবেদন হচ্ছে একপেশে ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে টিআইবি মনগড়া কল্পকাহিনী সাজিয়েছে। পদ্মা সেতুতে যে কোনো দুর্নীতি হয়নি সেটি শুধু দেশে নয়, বিদেশেও প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে মামলা করেছিল। সেই মামলায় বিশ্বব্যাংক হেরে গেছে।
তিনি বলেন, টিআইবিসহ যে সমস্ত সংস্থা পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির কল্পকাহিনী সাজিয়েছিল। তাদের উচিত ছিল জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া। এ ধরনের মনগড়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু সেটি তারা করেনি। এজন্য জনগণ চাইলে টিআইবি’র বিরুদ্ধে যে কোনো কিছু হতে পারে।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য ও গবেষণার কথা বলে যে প্রতিবেদন টিআইবি প্রকাশ করেছে এই প্রতিবেদন ও বিএনপি’র বক্তব্যের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। প্রকৃতপক্ষে এটি বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে টিআইবি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে মাত্র।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে বিগত সময়ে যত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এরমধ্যে ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচন অপেক্ষাকৃত অনেক শান্তিপূর্ণ হয়েছে। এই নির্বাচন অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র এই নির্বাচনের পর বিজয়ী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট এবং আমাদের সভানেত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর সঙ্গে কাজ করার অভিপ্রায় পুনর্ব্যক্ত করেছেন। এমনকি পাকিস্তানও অভিনন্দন জানিয়েছে।
তিনি বলেন, যদিও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ হয়েছে। তারপরও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছেন। টিআইবি’র প্রতিবেদনে এ নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই।