এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : একদিনেই তিন শিশু ও এক তরুণী ধর্ষিত হয়েছে। বরগুনা, মৌলভীবাজার, ফেনীর দাগনভূঁঞা ও সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে ধর্ষণের এসব ঘটনা ঘটে। বরগুনায় এক শিক্ষক গাইড দেয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করে। দাগনভূঁঞায় চার বছরের শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মৌলভীবাজারে ধর্ষিত হয়েছে তৃতীয় শ্রেণির এক ছাত্রী। অপরদিকে তাহিরপুরে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের বাক প্রতিবন্ধী এক তরুণী ধর্ষিত হয়েছে।
বরগুনা প্রতিনিধি জানায়, অষ্টম শ্রেণির এক মাদরাসা শিক্ষার্থীকে ধর্ষণ করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার ছেলে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া এলাকায় সাহেবের হাওলা রাফেজিয়া দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থীকে গাইড দেয়ার কথা বলে বাসায় ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়।
ধর্ষিতা শিক্ষার্থীকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ধর্ষকের নাম মো. সাইফুল ইসলাম। সে বরগুনা সদর উপজেলার ফুলঝুড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাহেবের হাওলা রাফেজিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মো. ইব্রাহিম মাওলানার ছেলে। অভিযুক্ত সাইফুল ইসলামও একই মাদরাসার শরীর চর্চা শিক্ষক। নির্যাতিত ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধারকারী সমাজকর্মী মো. আরিফুর রহমান মারুফ মৃধা বলেন, দুপুরে গাইড দেয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীকে ডেকে নেয় সাইফুল। মাদরাসার কাছেই সাইফুলদের বাড়ি। সাইফুল শিক্ষার্থীকে তাদের ঘরের দোতলায় নিয়ে ধর্ষণ করে।
সাইফুলের পাশবিক নির্যাতনে শিক্ষার্থী গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে ঘরে রেখেই পালিয়ে যায় সাইফুল। ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এদিকে, বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে জানা যায়, পাশবিক নির্যাতনের ফলে শিক্ষার্থীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তার চিকিৎসা চলছে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে।
এ বিষয়ে বরগুনা সদর থানার ওসি মো. আবির হোসেন মাহমুদ বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীর খোঁজ খবর নেয়া হচ্ছে। অভিযুক্ত সাইফুলকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
ফেনী প্রতিনিধি জানান, দাগনভূঁঞা জায়লস্কর ইউনিয়নের একটি গ্রামে চার বছরের এক শিশুধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে পুলিশ ধর্ষক কাজী নজরুল ইসলাম রনি (১৫) নামে এক কিশোরকে শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার করে। রাতেই তাকে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের আদালতে হাজির করে পুলিশ। আদালতে রনি ধর্ষণের দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। স্বীকারোক্তি প্রদানের পর আদালত তাকে গাজীপুর কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়ে ফেনী জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়।
দাগনভূঁঞা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. ছালেহ আহম্মদ পাঠান জানান, ওই শিশু তার মায়ের সঙ্গে কয়েকদিন আগে নানার বাড়িতে বেড়াতে আসে। নানাবাড়ির পাশের ঘরের আবদুল আলীর ছেলে কাজী নজরুল ইসলাম রনি শুক্রবার বিকালে শিশুটিকে গান শোনানোর কথা বলে নিয়ে ধর্ষণ করে। এতে শিশু অসুস্থ হয়ে যায়। খবর পেয়ে স্বজনরা তাকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করে।
এ ঘটনায় শিশুর মা বাদী হয়ে দাগনভূঁঞা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। শনিবার দুপুরে ফেনী জেলা সদর হাসপাতালে নির্যাতিত শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা শেষে পরিবারে কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
এদিকে পুলিশ শনিবার সন্ধ্যায় ওই কিশোরকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে রাতে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের আদালতে হাজির করে। এ ছাড়া ওই শিশুর মাও আদালতে ২২ ধারায় তার জবানবন্দি দিয়েছেন।
স্টাফ রিপোর্টার, মৌলভীবাজার থেকে জানান, মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের আশিদ্রোন ইউনিয়নের বিলাসেরপার এলাকার ৩য় শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ধর্ষক শিশুটির ফুফা। ধর্ষণের পর শিশুটিকে ৫১০ টাকা হাতে দিয়ে কাউকে কিছু না বলার জন্য হুমকি দেয় ধর্ষক। অসুস্থ শিশুটিকে এখন মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ১৪ই জানুয়ারি সন্ধ্যায় বিলাসের পার গ্রামের মো. সমছু মিয়া ও ওয়াহিদা আক্তারের ৯ বছরের শিশুকে তার খেলার সাথী ফুফাতো ছোট ভাই নিয়ে যায় তাদের সঙ্গে রাতে থাকার জন্য। সে ফুফাপাতো ভাই-বোনদের সঙ্গে রাতে একটি খাটে ঘুমায়। মধ্য রাতে ফুফা কুদরত মিয়া শিশুকে ঘুম থেকে তোলে ঘরের মেঝেতে ধর্ষণ করে। কুদরতের স্ত্রী ওই রাতে ঘরে ছিল না। পরে ধর্ষিত শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাকে ঘটনাটি খুলে বলে।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনার পর ধর্ষক মো. কুদরত মিয়া পালিয়ে যায়। তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. পলাশ রায় জানান শিশুটিকে মেডিকেল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট এলে সংশ্লিষ্ট থানায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঠানো হবে। বিষয়টি নিশ্চিত করে শ্রীমঙ্গল থানার ওসি মো. নজরুল ইসলাম জানান, ধর্ষক কুদরত মিয়াকে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
তাহিরপুর (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুরে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার সাঁওতাল সমপ্রদায়ের বাক প্রতিবন্ধী এক তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হলে চার দিনেও পুলিশ ধর্ষক খাইরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার সীমান্তবর্তী মথুরকান্দি বাজারে বাক প্রতিবন্ধী এক সাঁওতাল তরুণী আসে। বাজারের কাজ শেষে ফেরার পথে রাত সোয়া ১০টার দিকে কাপনা গ্রামের রইছ উদ্দিনের ছেলে খাইরুল ইসলাম পাশের আব্দুল মালেকের বাঁশঝাড়ের নিচে নিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ করে। একপর্যায়ে তরুণীর গোঙ্গানীর শব্দ পেয়ে আশপাশের লোকজন এগিয়ে গেলে ধর্ষক খাইরুল পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন ও ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার কৃষ্ণ হাজং ধর্ষিতা তরুণীকে রাতেই থানায় নিয়ে যায়। পরে বাক প্রতিবন্ধী তরুণী ধর্ষকের নাম ঠিকানা নিশ্চিত করলে রাতেই ধর্ষক খাইরুলের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়। শুক্রবার সকালে চিকিৎসা ও পরীক্ষার জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাঁওতাল ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছে বলে প্রাথমিক আলামতে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এখন তার অন্যান্য ডাক্তারি পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’
গতকাল বিশ্বম্ভরপুর থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পবিত্র কুমার সিংহ জানান, অভিযুক্ত ধর্ষককে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তবে, ধর্ষককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে পুলিশ।