এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের প্রতি জনগণের আস্থার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ দিয়েছেন। বলেছেন, দেশের মানুষ ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং পাশাপাশি বিশাল দায়িত্বও দিয়েছে। জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের মাধ্যমে তাদের এই আস্থার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী গতকাল রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে পরিকল্পনা কমিশনে একনেকের প্রথম বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহের কাজের গতি ও মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে তদারকি জোরদারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, আমাদের পূর্ববর্তী মেয়াদের শেষদিকে অনেকগুলো প্রকল্প অনুমোদন করেছি। আমরা দ্রুত এসব প্রকল্পকাজ শুরু এবং শেষ করতে চাই। প্রকল্পের তদারকি কাজের গতি ও মান জোরদার করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দারিদ্র্য হার ২১ শতাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে, আমরা এই হার আরো কমিয়ে আনবো।
শেখ হাসিনা জিডিপি প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন এবং বলেন, আমি জানি একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর পরে প্রবৃদ্ধির হার আরো বাড়ানো অনেক কঠিন। তবে, আমি বিশ্বাস করি আমরা এটি করতে পারবো। তিনি বলেন, আমরা একত্রে কাজ করছি এবং আমরা একটি টিমওয়ার্ক তৈরি করবো যাতে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি। আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত ‘সোনার বাংলা’ নির্মাণ করবো ইনশাআল্লাহ্। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছে।
আমরা ৭.৮৬ শতাংশ জিডিপি অর্জনে সক্ষম হয়েছি এবং এই অর্জন আমাদের ধরে রাখতে হবে। বাংলাদেশ আরো সামনের দিকে এগিয়ে যাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এটি মনে রেখে সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রকল্প বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ এবং মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে। এই সাফল্য ধরে রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে আমরা উন্নত ও সমৃদ্ধ হিসেবে গড়ে তুলবো। এ কথা মনে রেখে আমাদের সকল কর্মকাণ্ড এগিয়ে নিতে হবে। তিনি বলেন, আরো ৫ বছর দেশ পরিচালনার জন্য জনগণের কাছ থেকে দায়িত্ব পেয়েছি। এজন্য বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কাজ সম্পন্ন করতে আমি সকলের সহযোগিতা চাই। ব্যাপক জনসমর্থনের মাধ্যমে তার সরকারকে পুনঃনির্বাচিত করায় দেশের মানুষের প্রতি আন্তরিক কৃজ্ঞতা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য বাস্তবায়নে তিনি নতুনভাবে মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন করেছেন।
১৮৯৩ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন: যাত্রাবাড়ী-ডেমরা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণসহ আটটি প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট খরচ ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৯৩ কোটি ২২ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ সরকারি খরচে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নতুন সরকারের প্রথম একনেক বৈঠকে এসব প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান প্রকল্পের বিষয়ে সাংবাদিকদের বিস্তারিত তুলে ধরেন। তিনি বলেন, একটাই লক্ষ্য প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ানো। উন্নয়নের পথে আমরা সবাই তীর্থযাত্রী। তাই সবাই মিলেই কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমার একটাই লক্ষ্য- আর তা হচ্ছে গতি বৃদ্ধি করা। অর্থাৎ ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য যে গতি ছিল তা বাড়ানো হবে। জনগণের অর্থ খরচে সবসময় সাবধানতা বজায় রাখবো উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রয়োজন ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত খরচ করা হবে না।
ঢাকা-ডেমরা-শিমাইল সড়কের দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার এবং বিদ্যমান প্রস্থ ৭ দশমিক ৩ মিটার। তাই প্রকল্পের আওতায় এই সড়কটি ১৫ দশমিক ৬০ মিটার প্রস্থে ৪ লেন সড়ক হিসেবে নির্মাণ করা হবে। এছাড়া ধীরগতির যান চলাচলের জন্য প্রস্তাবিত মূল চারলেন সড়কের উভয় পাশে দুইলেন বিশিষ্ট আলাদা সার্ভিস লেন নির্মিত হবে। একনেকে অনুমোদিত অন্য প্রকল্পসমূহ হলো-পিপিআর রোগ নির্মূল এবং ক্ষুরারোগ নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প, এর খরচ ধরা হয়েছে ৩৪৫ কোটি টাকা। দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে পুষ্টিসমৃদ্ধ উচ্চমূল্যের অপ্রধান শস্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ কর্মসূচি প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২০৬ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। বিদ্যমান ৭টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের উন্নয়ন ও নতুন ৬টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ৩৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের জাদুঘর ভবন সমপ্রসারণ এবং অন্যান্য ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১৪৭ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জ বিসিক শিল্পনগরী সমপ্রসারণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১০২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। নেত্রকোনা জেলার চল্লিশা (বাগড়া)-কুরিয়া-মেদনী-রাজুরবাজার সংযোগ মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ২৫৭ কোটি ২১ লাখ টাকা। গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক- দোয়ারাবাজার সড়কে বিদ্যমান ৯টি সরু ও জরাজীর্ণ সেতুর স্থলে ৯টি আরসিসি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্পের খরচ ধরা হয়েছে ১১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।