এশিয়ান বাংলা, ঢাকা : ডাকসুর সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করতে ছাত্র-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ প্রয়োজন। এই তিন অংশের সদিচ্ছা থাকতে হবে নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে। তিনি বলেন, এটা না থাকলে কেউ যদি চায় নির্বাচন ভণ্ডুল করতে সেটা কিন্তু করতে পারবে। সেটা শিক্ষার্থীও করতে পারবে আবার সরকার বা প্রশাসনও করতে পারবে। আশা করবো এই তিন ক্যাটাগরিতে যারা আছেন তারা সদিচ্ছা প্রকাশ করবেন। তাদের জন্য নিঃসন্দেহে এটি একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়ে থাকবে। কারণ দীর্ঘ ২৮ বছর পর তাদের সময়ে ও তাদের সহযোগিতায় নির্বাচনটা হলো।
তবে আমি বলবো প্রত্যেকেই যেন তাদের দায়িত্বশীল আচরণ করেন। এই আচরণের মধ্যে রয়েছে প্রত্যেকটি ছাত্র সংগঠনই যাতে তাদের প্রচারণা চালাতে পারে।
প্রার্থী এবং ভোটাররা যেন কেন্দ্রে আসতে পারে ও ভোট দিতে পারে- তেমন একটি পরিবেশ থাকা চাই।
বিশ্ব শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের (ডব্লিউএফটিইউ) সভাপতি শিক্ষাবিদ মাহফুজা খানম বলেন, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে ডাকসু নির্বাচন নিয়ে আমার প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত আনন্দের। কারণ এর আগে আরো পাঁচবার ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন হয় নি। তাই আমরা আশা করবো- এই নির্বাচনটা হবে। নির্বাচনটা আরো আগে হলে তখনকার ছাত্র সমাজের মধ্যে তাদের কাজের ভেতর দিয়ে, এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজের ভেতর দিয়ে এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হতো। শুধু তাই নয়, যারা ডাকসুতে নির্বাচিত হয়ে এই কাজগুলো করতেন এটা তাদের জন্য নেতৃত্ব শিখবার একটি বিরাট সুযোগ ছিল। যে সুযোগটা গত ২৮ বছর ধরে আমাদের ছাত্র সমাজ পায়নি।
অতীতে মতিয়া চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, তোফায়েল আহমেদ এরা প্রত্যেকেই ডাকসুর নির্বাচিত নেতা ছিলেন। তারা কিন্তু সেখান থেকেই একধরনের নেতৃত্ব শিখে এসেছেন। যেটা পরবর্তীতে তাদের রাজনৈতিক জীবনে বা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছে। এ কারণে বলবো এটা নিঃসন্দেহে ভালো একটি উদ্যোগ। এবং সবচেয়ে বড় কথা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে অনেকগুলো ধাপ এগিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে ১৪টি ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। উভয় পক্ষের আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে একটি সমঝোতায় তারা পৌঁছেছেন। ১১ই মার্চ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। তবে এই নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবির ডাকসুতে অংশগ্রহণ করুক- সেটা আমি চাইবো না। তবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়টি আমি খুবই ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারণ যে কোনো শিক্ষার্থী যেকোনো ব্যানারেই নির্বাচন করতে পারে। শুধুমাত্র ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, জাসদ বা বাসদ ছাড়াও এরকম আরো অনেক দল নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
এই নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতি ও ছাত্র রাজনীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হ্যাঁ নিশ্চয়। এটার মধ্য দিয়ে ভোটাররা তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বুঝবেন যে তাদের করণীয় কী। একইভাবে যারা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তারাও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন বলে মনে করি। কারণ সত্যিকার অর্থে ছাত্র সমাজের কাছে আমরা যেরকম ব্যবহার আশা করি তারা কিন্তু তা করছে না। তারা চাঁদাবাজি, হল দখল করাসহ নানা ধরনের অপছন্দনীয় কাজ করেছেন। আমি মনে করি এই নির্বাচন তাদের মৌলিক জায়গাগুলোতে পরিবর্তন আনবে।