এশিয়ান বাংলা ডেস্ক : নির্বাচন প্রশ্নে বৃটেনের অবস্থান অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকাস্থ বৃটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেইক। একই সঙ্গে তিনি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের সংলাপের নতুন উদ্যোগকে (চা চক্র) স্বাগত জানিয়েছেন। রোববার দুপুরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকে তিনি নির্বাচন এবং সংলাপ প্রশ্নে বৃটিশ সরকারের অবস্থান তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে হাইকমিশনার গণমাধ্যমের মখোমুখি হন। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রীও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। উভয়ের তরফে এটা নিশ্চিত করা হয়- তারা দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং ক্রমাগত উন্নতির মধ্য দিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে পূর্ণাঙ্গভাবে ‘উন্নত রাষ্ট্র’ হওয়ার যে লক্ষ্যগুলো সরকার নির্ধারণ করেছে তা অর্জনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দিয়ে যাবে। অবশ্য ব্লেক এটাও বলেন, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশকে আরো অনেক কাজ করতে হবে।
এ পর্যন্ত অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের যেসব অর্জন রয়েছে, বিশেষ করে সফলতার চমকপ্রদ যেসব কাহিনী রয়েছে তার জন্য সাধুবাদ জানান তিনি। ওই অর্জনের জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান। বৃটিশ দূত উল্লেখ করেন, তার দেশ বরাবরই বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী। ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং উন্নয়ন সহায়তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে অত্যন্ত চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। সামনের দিনে তারা এটি আরো বিস্তৃত, গভীর এবং বিকশিত করতে চান। যেকোনো সংকটে বৃটেন বাংলাদেশের পাশে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানে শেষ পর্যন্ত তার দেশ বাংলাদেশের পাশে থাকবে। বৃটিশ দূতের কাছে প্রশ্ন ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কী কথা হয়েছে? বিষয়টি আদৌ আলোচনায় এসেছিল কি-না? জবাবে তিনি বিস্তারিত বা সরাসরি কোনো জবাব না দিলেও বলেন, আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয়েই কথা বলেছি। এক প্রশ্নের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, ৩০শে ডিসেম্বরে নির্বাচনের পরে বৃটিশ ফরেন অফিস মিনিস্টার যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার দূত হিসাবে তিনি সেটি পুনরায় শেয়ার করেছেন। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক বৃটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মার্ক ফিল্ড নির্বাচনের পরপরই এক বিবৃতিতে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
একই সঙ্গে স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ এবং গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছিলেন। ওই নির্বাচনে যেসব অনিয়মের বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্ট রয়েছে তার স্বচ্ছ তদন্ত চেয়েছিল বৃটেন। হাইকমিশনার রোববার এটি স্মরণ করে বলেন, তার দেশ আশাবাদী ওই তদন্ত দ্রুত সম্পন্ন হবে। নব নিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন উল্লেখ করে বৃটিশ দূত বলেন, আমরা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি বাণিজ্য ও সুশাসন নিয়ে আলোচনা করেছি। এ সময় তিনি জানান, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে, বাণিজ্যের উন্নয়নে এবং তৈরি পোশাক খাতে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে ভবিষ্যতেও সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
ব্রেক্সিটের পরও সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান: এদিকে বৃটেনের কাছে ব্রেক্সিটের পরও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সুবিধা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে আব্দুল মোমেন। হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেকের সঙ্গে বৈঠকে মন্ত্রী এটি চান বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন সরকারের সঙ্গে যুক্তরাজ্য গঠনমূলকভাবে সম্পর্ক রাখবে। ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখবে। বৃটিশ দূত মন্ত্রীকে জানান, যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করতে আগ্রহী, বিশেষ করে অবকাঠামো খাতে।
বিদেশে থাকা খুনি ও দণ্ডিতদের ফিরিয়ে আনা হবে: ওদিকে বৃটিশ দূতের বিদায়ের পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, বিদেশে থাকা পলাতক সব খুনি ও দণ্ডিতদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে বলেও তিনি জানান। বৃটেনের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য যুক্তরাজ্যের ভূমিকা যথেষ্ট ইতিবাচক। তারাও চায় রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় দেশে ফিরে যাক। আসন্ন ভারত সফরে কি কি বিষয়ে আলোচনা হবে জানতে চাইলে ড. একে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারতে আমার সফর হবে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সমপ্রীতির। সেখানে আলোচনার বিষয় এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জার্মানি সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সফরের বিষয়ে আলোচনা চলছে। সেখানে গেলে দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মের্কেলের সঙ্গে সাইড লাইনে বৈঠক হতে পারে বলেও জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।